জরায়ু ক্যান্সার হয় যে কারণে: ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদা
প্রকাশিত : ০৫:৩৬ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:২৪ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার
জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার। প্রতি বছর ৪ লক্ষ ৭০ হাজার নারী এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৫০ ভাগেরই পরিণতি মৃত্যু।
বাংলাদেশেও এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ১২ হাজার ৫শ’ নারী এ রোগে আক্রান্ত। প্রতি ঘন্টায় ১ জন করে এ রোগে মারা যায়। তবে নারী দেহের ও যৌনাঙ্গের এই ক্যান্সারই সর্বাধিক সফলভাবে প্রতিরোধযোগ্য।
সচেতনতাই পারে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে। সাধারণত ২০ বছরের নিচে এ রোগ হয়না। আক্রান্তরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন।
জরায়ু ক্যান্সারের কারণ
HPV (হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস) জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। যৌনসংযোগে এর সংক্রমন ঘটে। সংক্রমনের এক যুগেরও বেশী সময় ধরে জরায়ুমুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত হতে থাকে এবং এক সময় তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। এখন পর্যন্ত ১০০ ধরনের HPV শনাক্ত হয়েছে। যার বেশিরভাগই জরায়ু ক্যান্সারের জন্য অতোটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে HPV টাইপ ১৬, ১৮, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৪৫, ৫৬ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত শরীরে জরায়ু প্রায়ই HPV আক্রান্ত হয়ে থাকে। এতে কোনো উপসর্গ থাকে না বা শারীরিক পরীক্ষায় কোনো চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যায় না। এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবলে ১৮-২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু প্রায় সব HPV থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
জরায়ুতে HPV দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে জরায়ুকোষে পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। সাধারণত পুরুষ এই ভাইরাসের বাহক। যৌন মিলনের সময় এই ভাইরাসটি নারীর শরীরে সংক্রমিক হয়। তবে যৌন মিলন ছাড়াও জননাঙ্গের স্পর্শেই ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
এমনকি পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী যৌন সংস্পর্শও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
এছাড়া কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা জরায়ু ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। যেমন-
১. অল্প বয়সে বিয়ে হলে বা ১৬ বছরের আগে যৌনমিলন করে থাকলে
২. ২০ বছরের নিচে গর্ভধারন করে থাকলে
৩. অধিক ও ঘনঘন সন্তান প্রসব করলে
৪. নিম্ন আয়ের মানুষ হলে ও স্বাভাবিক জীবন যাপন বাধাগ্রস্ত হলে
৫. বহুগামিতা
৬. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকলে
৭. HIV দ্বারা সংক্রমন হলে
৮. জন্মনিয়ন্ত্রন পিল দীর্ঘদিন খেলে
৯. ধূমপান করলে
১০. স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং জননাঙ্গ অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকলে।
(চলবে)
লেখক পরিচিতি: ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদা একজন প্রসূতি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও শমরিতা হাসপাতালে তিনি কর্মরত। email: mahmudak50@gmail.com
অনুলেখক: আলী আদনান।
/ এআর /