ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

হেপাটাইটিসে দেশে ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু  

প্রকাশিত : ০৫:৫৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৮ শনিবার

শনিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় হেপাটাইটিস দিবস। ২০১০ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। এই দিবসে সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতার আহ্বানের মাধ্যমে পালিত হল হেপাটাইটিস দিবস, যে রোগ প্রতিবছর ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে বাংলাদেশে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিবছর দেশে ২০ হাজার মানুষ হেপাটাইটিস রোগে মারা যাচ্ছেন। বিশ্বে মারা যাচ্ছেন এক কোটি ৪০ লাখ। ২০৩০ সাল নাগাদ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটিতে।

বাংলাদেশে ২১ শতাংশ হেপাটাইটিস রোগ ছড়ায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের অভাবে। সাধারণত ব্যবহৃত সিরিঞ্জ বা সুঁই এবং দূষিত রক্ত শরীরে নিলে হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়ায়, আর হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস ছড়ায় সাধারণত খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে।  

সচেতনতা, বিশুদ্ধ খাবার পানীয়, নিরাপদ ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার এবং নিরাপদ ও বিশুদ্ধ রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকার সম্ভব।

বিশেজ্ঞরা বলেন, হেপাটাইটিস এ, বি, সি ও ই-ভাইরাসের কারণে লিভার রোগের প্রকোপ বেশি। আর এর মধ্যে আবার হেপাটাইসিস বি ও সি ভাইরাস লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

হেপাটাইটিস দিবস এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও সচেতনতার উপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “যথাযথ ধারণা না থাকায় দেশে এইরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে এর প্রতিরোধে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা গেলে হেপাটাইটিস নির্মূল সম্ভব।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেন, “আমরা হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস প্রতিরোধ এবং নিরাময়ের জন্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”

বিভিন্ন গবেষণায় দেখো যায়, বাংলাদেশে শতকরা ৬ জন হেপাটাইটিস বি এবং শতকরা শূন্য দশমিক ৯ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ১ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের শেষ দিকে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র শতকরা ৯ শতাংশ এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয়ের আওতায় আসলেও হেপাটাইটিস বি এর ৮ শতাংশ ও সি এর ৭ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিতে সমর্থ হয়েছেন।

গবেষকরা বলছেন, অত্যন্ত জটিল রোগে আক্রান্ত এ রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই চিকিৎসার আওতায় আসে না। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের ৯০ শতাংশ ও সি ভাইরাসে আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান ও সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ফর দি স্টাডি অব দি লিভার (এসএসএএসএল) এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব জানান, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি মানুসের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদিভাবে এ রোগে আক্রান্ত।

এই রোগীরা জীবনের কোনো না কোনো সময় লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো আরও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

অধ্যাপক ডা. মাহতাব বলেন, “আমাদের দেশে ২১ শতাংশ হেপাটাইটিস রোগ ছড়ায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের অভাবে। সাধারণত ব্যবহার হওয়া সিরিঞ্জ এবং দূষিত রক্ত শরীরে নিলে হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়ায়, আর হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস ছড়ায় সাধারণত খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে।”

ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশনের অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, এই ভাইরাসটি যদি দ্রুততম সময়ে চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেওয়া হয় তবে সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

“তবে অনেক ব্যক্তিই বুঝতে পারেনা তার লিভার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। লিভার খুবই শক্তিশালী এমনকি অকার্যকর অবস্থাতেও এটা শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে লিভারের ক্ষতিসাধন হতে থাকলে এটা আর নিজ থেকে ঠিক হতে পারেনা।” সূত্র: হেলথ নিউজ

এসি