ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২২ ১৪৩১

চুম্বনের দৃশ্যে ছি ছি করা নোংরামি: তসলিমা নাসরিন

প্রকাশিত : ১২:৩৫ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৮ সোমবার

চুম্ববনের দৃশ্য দেখে যারা ছি ছি করে তারা বড়ই নোংরা ও ক্ষুদ্র মনের মানুষ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সোমবার ভোর ৫টায় সামাজিকমাধ্যমে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি টিএসসি চত্বরে এক জুটির প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার যে ছবি সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই তিনি এ দেশের মানুষের মন নোংরা ও ক্ষুদ্র বলে মন্তব্য করেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তসলিমা নাসরিনের সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল-

দেশ তো ভালোই দেখতে! অরণ্য, পাহাড়, সমুদ্র, নদী- কী নেই! সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলার দেশ। কিন্তু দেশের মানুষ খারাপ। মানুষ খারাপ হলে দেশকে ভালো বলার কোনো মানে হয় না। দেশ আসলে দেশের পাহাড়-সমুদ্র নয়, দেশ হল- দেশের মানুষ। আমার দেশের মানুষগুলো বড় কুৎসিত।

কেন বলছি, বলি- জীবন আহমেদ নামে এক ফটোগ্রাফারের সাক্ষাৎকার শুনলাম আজ। লেখক অভিজিৎ রায়কে কী করে কুপিয়ে মেরেছিল সন্ত্রাসীরা, জীবন আহমেদ দেখেছেন। অভিজিতের স্ত্রী মানুষের সাহায্য চাইলে তাকে সাহায্য করতে যে কেউ এগিয়ে আসেনি, তাও দেখেছেন। তার পর নিজেই তিনি অভিজিৎ আর তার স্ত্রীকে অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।

যে কাজটি উপস্থিত সবার করা উচিত ছিল, কিন্তু কেউ করেনি, শুধু জীবন আহমেদ করেছেন। এ কারণে তাকে বাহবা দেওয়া উচিত মানুষের, পুরস্কৃত করা উচিত। অথচ আশ্চর্য, হাসপাতালের লোকেরা, তার বন্ধুবান্ধব, পরিচিতরা, যে পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন, সেই পত্রিকার লোকেরা সবাই তাকে ভৎসনা করেছেন।

তাদের কথা, জীবনের উচিত হয়নি ঝামেলায় জড়ানো, উচিত হয়নি অভিজিৎকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। কে জানে, পুলিশ তাকেই সন্ত্রাসী বলে ভেবে নিতে পারে। জীবনের উচিত ছিল কোপ খাওয়া শরীরের ছবি তুলে ওই এলাকা থেকে দ্রুত সরে যাওয়া।

এক লেখককে কেউ কুপিয়ে ফেলে রেখেছে রাস্তায়, লেখক নিজের রক্তের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে আছেন; তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করল দেশের মানুষ। জীবন আহমেদ চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। তার রুমমেটও ওই ঘটনার জন্য তার রুম ত্যাগ করলেন ভয়ে।

কিছু দিন আগে জীবন আহমেদ ঢাকার ফুটপাতে বসে এক জুটি তরুণ-তরুণী পরস্পরকে চুম্বন করছে- এ দৃশ্য তিনি ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন। আর এ কারণে- কী অদ্ভুত, যে তার চাকরি চলে গেছে। সাধারণত চুম্বনের দৃশ্য দেখতে মানুষ ভালোবাসে, চুম্বনের ফটোগ্রাফারও বিখ্যাত হয়ে যান।

মনে আছে ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের আনন্দ উৎসব হচ্ছিল, সেই উৎসবে তোলা আলফ্রেড আইজেন্টেডের সেই বিখ্যাত ছবি? এক নাবিক চুমু খাচ্ছে এক নার্সকে।

চুম্বনের দৃশ্য দেখে যে দেশের মানুষ ছিঃ ছিঃ করে, চুম্বনের ফটোগ্রাফার যে দেশে সুখ্যাতি অর্জন করার বদলে অপমানিত হন, চাকরি হারান; সেই দুর্ভাগা দেশের জন্য আমার বড় করুণা হয়। আমার এ দেশটির মানুষ বড় নোংরা মনের মানুষ, বড় ক্ষুদ্র মনের মানুষ!

আরকে//