১৫ দশমিক ৯ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা
প্রকাশিত : ০৩:৫৬ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার
নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে নতুন সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘোষিত এ নীতিতে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
আজ মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এসময় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত এ মুদ্রানীতি সংযত ধরনের থাকবে বলে জানান গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, ঘোষিত নীতিতে সরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের চাহিদা কম থাকার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সংকুলানের সুযোগ থাকবে।
গত বছরে এক অঙ্কে নেমে আসা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশে প্রাক্কলন করা হয়েছে।তবে এ বৃদ্ধি অর্জন নির্ভর করবে প্রদানত বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসোবে ঘাটতি সহনীয় মাত্রায় বজারয় রাখার উপর। অভ্যন্তরীণ ঋণের ব্যবহার বিলাসী অপ্রয়োজনীয় আমদানি পণ্যের জন্য না হয়ে প্রকৃত উৎপাদনমুখী, কর্মসংস্থান সৃজনমুখী অগ্রাধিকার খাতে ব্যবহার হওয়ার বিষয়ে ব্যাকগুলোর নিজস্ব নজরদারির প্রয়োজন হবে।
ফজলে কবির বলেন, বিগত বছরে ১ অংকে নেমে আসা ব্যাপক মূদ্রার প্রবৃদ্ধি ২০১৯ অর্থবছরে ১২ শতাংশে প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন নির্ভর করবে প্রধানত বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি সহনীয় মাত্রায় বজায় রাখার ওপর। অভ্যন্তরীণ ঋণের ব্যবহার বিলাসী অপ্রয়োজনীয় আমদানি পণ্যের জন্যে না হয়ে প্রকৃত উৎপাদনমুখী , কর্মসংস্থানমুখী খাতে ব্যবহার হতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের নজরদারি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আলোচ্য সময়ে পরিস্থিতি টেকসই বা সাসটেইনেবল করার জন্য আবশ্যিক সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন না করা হলে আর্থিক বাজারে আমানত ও ঋণের সুদহার চাহিদা ও যোগানভিত্তিক পরিবর্তনশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে। এতে মধ্যম আয় ও উন্নত অর্থনীতি পর্যায়ে দেশের প্রত্যাশিত উত্তোরণের জন্য প্রয়োজনীয় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী দেশি-বেদেশি বিনিয়োগ আহরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিবান্ধব হওয়ার পরিবর্তে প্রবৃদ্ধি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
এসময় নির্বাচনী বছরে টাকা পাচারের আশঙ্কা সংক্রান্ত এক প্রশ্নে গভর্নর বলেন, এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর প্রতি আমাদের নজরদারি আছে। ঋণ প্রবাহের দিকে আমরা নজর রাখছি। এরই মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি অনিয়ম দেখেছি।বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারি সংস্থাকে জানিয়েছি।
ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিটের বেশি সুদ নিচ্ছে এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, সিঙ্গেল ডিজিটে সুদ নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ব্যাংকাররা নিয়েছে।অনেক ব্যাংক এটা পালন করছে। যারা করছে না তাদের অনেকে আবার আগের ঋণ সমন্বয় করছে।এরপরও সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটার ব্যবস্থা নিবে।
ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি ব্যবস্থা নিয়েছে এমন প্রশ্নে ফজলে কবির বলেন, আমি আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপির পরিমান কমে আসবে। কারণ বছরের প্রথম মার্চের দিকে খেলাপির পরিমান বেড়ে যায়। বছর শেষে এ পরিমান খেলাপি থাকবে না।
রিজার্ভের অর্থ চুরির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হারানো অর্থের মধ্যে ৮১ বিলিয়ন ডলার গিয়েছিল ফিলিপাইনে। সেখান থেকে আমরা ১৫ বিলিয়ন ডলার আনতে পেরেছি। বাকী আছে ৬৬ বিলিয়ন ডলার।এর মধ্যে ৫১ বিলিয়ন ডলার আইনি প্রকৃয়ায় আটকে আছে। আশা করি আমরা সব অর্থ ফিরে পাবো। তবে আইনি প্রকৃয়ার জন্য একটু সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ভল্টে স্বর্ণ রাখা হয়েছে। সেখানে ৬ স্তরের নিরাপত্তা আছে। ৪২টি সিসি ক্যামেরা আছে। এতো কড়া নিরাপত্তায় কেউ সেখান থেকে স্বর্ণ নিতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না। স্বর্ণ যেমন রাখা হয়েছিল তেমনি আছে, সে জায়গাতেই আছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আরকে// এআর