ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

শরীরকে বাঁচাতে রোজ ডায়েটে রাখুন ১২ খাবার

প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৪:২৮ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৮ বুধবার

কেউ আছে একেবারেই খেতে পায় না। আবার কেউ আছে এমন কবজি ডুবিয়ে খায় যে ওজন একেবারেই নিয়ন্ত্রণে থাকতে চায় না। ফলে লেজুড় হয় হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো মরণ সমস্যা। অনেকের তো অতিরিক্তি ওজনের কারণে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই আপনারও যদি ওজন বাড়তে থাকে, তাহলে সাবধান হন।

নিজের শরীরকে বাঁচাতে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুন এই প্রবন্ধে আলোচিত খাবারগুলো। কারণ কতটা দ্রুত ওজন কমবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন তার উপর, আর এই লেখায় আলোচিত খাবারগুলোতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মেদ তো ঝরায়ই, সেই সঙ্গে শরীরের আরও অনেক উপকারে লাগে। তাই তো দ্রুত ওজন কমাতে রোজের ডায়েটে এই খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে যে খাবারগুলো নানাভাবে সাহায্য করে থাকে, সেগুলো হল-

দারুচিনি

এই প্রকৃতিক উপাদানটি ওজন কমাতে বাস্তবিকই দারুন কাজে এসে থাকে। আসলে দারচিনির ভেতরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপদান একদিকে যেমন হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, তেমনি ওজন কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে প্রতিদিন হাফ চামচ করে দারচিনি গুঁড়ো খেতে হবে, তাহলেই দেখবেন ফল মিলতে শুরু করেছে।

পালং শাক

এই শাকটিতে উপস্থিত ফাইবার, ভিটামিন কে, সি, ফলেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং জিঙ্ক দেহে প্রবেশ করার পর পুষ্টির ঘাটতি তো দূর করেই, সেই সঙ্গে ওজন কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই শাকটিতে উপস্থিত ফাইবার, বহুক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ওজন ঝরে যেতে সময় লাগে না।

মুগ ডাল

ভিটামিন এ, সি, বি, ই, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন শরীরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন দেহের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তেমনি অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। সেই সঙ্গে প্রোটিন এবং ফাইবারের ঘাটতিও দূর করে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। আর কম পরিমাণে খাওয়ার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তাই সুস্থ থাকতে এবং ওজনকে কয়েক মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে নিয়মিত সকাল-বিকাল মুগ ডাল খেতে ভুলবেন না যেন!

বাঁধাকোপি

দ্রুত ওজন যদি কমাতে হয়, তাহলে রোজের ডায়েটে বাঁধাকপিকে রাখতে ভুলবেন না যেন! আসলে কী জানেন এই সবজিটি খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা একেবারে কমে যায়। আর কম খেলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না!

ব্রকলি

জর্জিয়া স্টেট ইউনির্ভাসিটির গবেষকদের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে, ব্রকলির মতো ডায়াটারি ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি বেশি করে খেলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ এই উপাদানটি শরীরে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম ক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে শরীরে মেদ জমার সুযোগই পায় না। প্রসঙ্গত, রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগের মতো সমস্যাকে দূরে রাখতেও ফাইবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গোলমরিচ

শুনতে আজব লাগলেও একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে, ওজন কমাতে বাস্তবিকই গোলমরিচের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে প্রতিদিন লেবুর রসে অল্প পরিমাণ গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া শুরু করলে দেহের ইতি-ইতি জমতে থাকা চর্বিরা গলতে শুরু করে। ফলে অতিরিক্ত ওজন কমে যেতে সময় লাগে না। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন, তা হল ভুলেও গোলমরিচ মেশানো কোনও পানীয় সকালে খালি পেটে খেতে যাবেন না যেন!

আপেল

অতিরিক্তি ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে নিয়মিত একটা করে আপেল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। কারণ এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার। তাই তো খালি পেটে একটা করে আপেল খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে বারে বারে খাওয়ার প্রবণতা কমে। আর কম পরিমাণে খাবার খাওয়ার কারণে ওজনও কমে দ্রুত।

বিটরুট

নিয়মিত বিটরুট খাওয়া শুরু করলে শরীরের ভেতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে একদিকে যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তেমনি ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, শরীরকে বিষ মুক্ত করতেও এই সবজিটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার বুঝেছেন তো নিয়মিত বিটরুট খেতে কেন বলেন চিকিৎসকেরা।

পেঁপে

এই ফলটির ভেতরে রয়েছে পেপেইন নামক একটি উপাদান, যা ফ্যাট সেলেদের গলিয়ে মেদ ঝরাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান এবং অতিরিক্ত পানিকে বের করে দিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে খালি পেটে যদি অল্প করে পেঁপে খাওয়া যায়, তাহলে আরও দ্রুত ওজন হ্রাস পেতে শুরু করে। কারণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে। ফলে শরীরে ক্যালরির প্রবেশ কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা হ্রাস পায়।

ওটস মিল

এক চামচ ওটস মিলের সঙ্গে তিন চামচ পানি, এই রেশিয়োতে বানিয়ে নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়া শুরু করলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ এই খাবারটিতেও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা হজম ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, বরং কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, ওটস মিলে লেসিথিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সবজির রস

আদা, গাজর অথবা করলার রস প্রতিদিন খালি পেটে খাওয়া শুরু করলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ এই সবজিগুলোর ভেতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর যেমনটা এতক্ষণে জেনেই গেছেন যে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটলে শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।

বাদাম

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, এই প্রকৃতিক উপাদানে উপস্থিত ফাইবার, উপকারি ফ্যাট এবং ওমাগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড একদিকে যেমন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, তেমনি ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।

সূত্র: বোল্ডস্কাই

একে//