ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

কোরবানির হাওয়ায় গরম মশলার বাজার

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ০৫:০৭ পিএম, ৫ আগস্ট ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৪:০৫ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৮ সোমবার

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে বেড়েছে মশলার দাম। অতিরিক্ত চাহিদা, পণ্য খালাসে বিলম্ব, ডলারের ঊর্দ্ধগতিতে মশলার বাজারে এ প্রভাব। বাজারে এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জিরাসহ সব ধরণের মশলার দাম এখন চড়া।

প্রতিবছর-ই ঈদুল আযহায় কোরবানি ঘিরে বাড়ে মাংসে ব্যবহৃত এসব মসলার দাম। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদবাজারে মসলার বাড়তি চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। পাশাপাশি পণ্যের আমদানি খরচও আগের  তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে।

তবে বাজারে মশলার দাম বাড়ার জন্য বরাবরের মতো খুচরা ব্যবসায়ীরা দোষছেন আমদানিকারকদের। তারা বলেন, আমদানিকারকদের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে মশলা কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই দিন দিন মশলার দাম বাড়ছে।

রোববার রাজধানীর রামপুরা বাজার, কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানের পর সব ধরনের মশলার দাম বেড়েছে। ঈদের আগে কেজি প্রতি (মান ভেদে) এলাচের দাম ছিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। বর্তমানে কেজি প্রতি তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯২০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।

একইভাবে বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা জিরার কেজি ছিল ২৮৩ থেকে ২৯৭ টাকা। বর্তমানে এর কেজি ৩৩৫ টাকা। সিরিয়া থেকে আমদানি করা জিরার কেজি ছিল ৩৯০ টাকা, বর্তমানে কেজি ৪৫০ টাকা ও চীন থেকে আমদানি করা জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৯৫ টাকা। আর ১১০ টাকা কেজির মিষ্টি জিরা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা।

এদিকে বাজারে ঈদের আগে দারুচিনির দাম ছিল কেজি ২৬৮ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা। দারুচিনি আমদানি হয় চীন ও ভিয়েতনাম থেকে। বাজারে প্রতি কেজি জয়ফল বিক্রি হয়েছিল ৫৫০ টাকা, বর্তমানে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটি আমদানি হয় শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে।

লবঙ্গ আমদানি হয় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার ও ব্রাজিল থেকে। বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ মান ভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ২শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে গোলমরিচ (কালো) ৯৫০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা) ১ হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  যা আগে কেজি প্রতি হাজার টাকার  উপরে ছিল না।

এছাড়া বাজারে বাড়তি দামে জয়ত্রী ২ হাজার একশত, ধনিয়া ১০০ থেকে ১২০, ভারতীয় হলুদ ২১৫, ভারতীয় মরিচ ১৫০, দেশি শুকনা মরিচ ১৩০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কারওয়ান বাজারের মেসার্স কমলা ট্রেডিংয়ের স্বত্তাধিকারি মো. শেখ কামরুল হাসান (রতন) । তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রায় সব ধরণের মসলা আমদানি করতে হয়। আমদানি করা এসব মসলার চাহিদা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বহুগুণ বেড়ে যায়। চাহিদা বহুগুণ বাড়লেও আমাদের আমদানিকারক কিন্তু বাড়ে না। কারণ দেশে মশলা আমদানিকারক হাতে গোনা কয়েকজন। ফলে এ ব্যাপক চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে অতি মুনাফা লুটে নেই দেশের গুটিকয়েক আমদানিকারক। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে, সে প্রভাবও দেশের মশলার বাজারে পড়েছে।

কারওয়ান বাজারে মশলা কিনতে খিলগাঁও মেরাদিয়া এলাকা থেকে আসা মুদি দোকানি আমজাদ হোসেন বলেন, ঈদ আসতে এখনও সপ্তাহ তিনেক বাকি আছে। এরইমধ্যে খুচরা বাজারে এ পণ্যের বেচা-বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। তাই আগেই কারওয়ান বাজারে এসেছি মশলা কিনতে। কিন্তু এখন দেখছি সব মশলার দাম বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি মশলায় ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমাদেরও দাম বাড়িয়ে দিতে হবে।

কারওয়ান বাজার পাইকারি মশলা ব্যবসায়ী মেসার্স সোহাগ বানিয়াতী ষ্টোরের স্বত্তাধিকারি মো. আব্দুল কাদের বলেন, ঈদ আসলে মশলার দাম একটু বাড়ে। কারণ বাজারে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার এলাচি ছাড়া অন্যান্য মশলার দাম এখনও খুব বেশি বাড়েনি। এলাচি কেজিতে ২০০ টাকা বেড়েছে।

একইভাবে রামপুরা পাইকারী মশলা ব্যবসায়ী কোয়ালিটি স্টোরের ম্যানেজার নয়ন বলেন, মশলার চাহিদা পুঁজি করে আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ছে মাংসে ব্যবহৃত মশলার। আমদানিকারকরা দাম বাড়ালে তার প্রভাব আমাদের মতো পাইকারদের উপর এসে পড়ে। ফলে আমাদের বেশি দামেই  পণ্য বিক্রি করতে হয়। এখন আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে কেনার কারণে ঈদের আগে খুচরা বাজারেও মশলার দাম বাড়বে।

তবে মশলার দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েত উল্লাহ বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে আগের তুলনায় এখন সময় বেশি লাগছে। এখন আমদানিকারকদের অনুমতিপত্র জোগাড়ের মতো নতুন ঝামেলা যোগ হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় এখন আমদানি খরচও বেড়েছে। যার প্রভাবে পণ্যের দামও কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে।

ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে’র (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, মশলার দাম প্রতিবার বাড়ে এবারও বেড়েছে। তবে এ বাড়ার জন্য আমদানিকারকরা যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তি, ডলারের দাম বেশিসহ নানাবিধ যুক্তি দেয়, এটা আসলে ভিত্তিহীন যুক্তি। দাম বাড়ার জন্য মূলত চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে আমদানিকারকদের অতি মুনাফা লুটার মানুষিকতা দায়ী।

দাম বাড়লে ভোক্তারা ঠকে, ভোক্তাদের অদিকার সংরক্ষণে ক্যাব বা সরকার কি করছে- এমন প্রশ্নে গোলাম রহমান বলেন, এখানে সরকার বা ক্যাবের সরাসরি কিছু করার নেই। কারণ আমাদের দেশটা মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ। তবে ভোক্তা অধিকার থেকে সরকার যদি প্যাকেটজাত বিভিন্ন মশলার খুচরা মূল্য নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করে সামগ্রিক মশলার বাজারে দাম কমবে।

আরকে/ এআর