সচিবের স্বাক্ষর জালসহ মন্ত্রণালয়ের ভুয়া স্মারক ব্যবহারের অভিযোগ
প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের কথিত কাজী নবাবগঞ্জ সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেছে জেলা রেজিস্টার নজরুল ইসলাম। আদালত মামলাটি সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। ১৭ জুলাই মামলাটি সদর মডেল থানা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে জেলা রেজিস্টার বাদী হয়ে আমলী আদালত (নবাবগঞ্জ সদর) অঞ্চলে কথিত কাজীর বিরুদ্ধে আইনের ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ও ৪৭৪ ধারায় ৫৩৯ সি/২০১৮ নং মামলা দায়ের করেছেন।
আইন ও বিচার বিভাগ, বিচার শাখা-৭ এর সিনিয়র সহকারী সচিব বুলবুল আহমেদ সাক্ষরিত এক চিঠিতে জেলা রেজিস্ট্রারকে দ্রুত সিআর মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। বর্তমানে তিনি এজাহার নামীয় পলাতক আসামী। অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম শিবগঞ্জ উপজেলার বামুনগ্রাম চৈতন্যপুর গ্রামের ইসলাম মন্ডলের ছেলে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের ১৯ এপ্রিল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয় মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭ এর সহকারী সচিবের সাক্ষর জাল ও ভূয়া স্মারক নং ব্যবহার করে জেলা রেজিষ্টার অফিস থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৩,১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার হিসেবে নিয়োগ লাভ করে। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাপ্ত নিয়োগপত্র ব্যাবহার করে অধীক্ষেত্র এলাকায় নিকাহ্ ও তালাক রেজিস্ট্রির নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে।
কথিত কাজী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নীতিমালা অমান্য করে একই সাথে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরীর তথ্য গোপন করে দুই এলাকায় নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার হিসেবে নিয়োগ লাভ ও ভুল তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে রীট মামলা দায়েরসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই নবাবগঞ্জ সিটি কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে শফিকুল ইসলাম। সিটি কলেজে কর্মরত অবস্থায় তথ্য গোপন করে ১৯৯৮ সালের ২৭ জুলাই মহিপুরের মুনসেফপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় যোগদান করেন। একই ব্যাক্তি মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রিকরণ বিধিমালা অমান্য করে ১৯৯৮ সালের ২৭ আগস্ট নাচোল উপজেলার ২নং ফতেপুর ইউনিয়নের অস্থায়ী নিকাহ্ রেজিষ্টার হিসেবে নিয়োগ লাভ করে। নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার নিয়োগ বিধিমালায় উল্লেখ্য রয়েছে- যে এলাকার নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের পদ শূন্য হয়, সেই এলাকার বাসিন্দা না হলে কোন ব্যক্তিকে নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের লাইসেন্স প্রদানের জন্য নির্বাচন করা যাবে না। অতীত এবং বর্তমান কোন ঠিকানায় তার নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জন্মসূত্রে সে শিবগঞ্জ উপজেলার ১৪ নং ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে পরবর্তীতে সে নাচোল উপজেলার ২ নং ফতেপুর ইউনিয়নের মাধবপুরের বাওয়োল গ্রামের ও বর্তমানে সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের রেহাইচর গ্রামের বাসিন্দা। তার বিভিন্ন নিয়োগপত্রে এইসব ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।
জানা গেছে, এর আগে জেলা রেজিস্টারকে কথিত সেই কাজীর লাইসেন্স প্রত্যাহারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে লাইসেন্স প্রত্যাহার পূর্বক আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিত চিঠি পাঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্টার। তবে সে সময় তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেননি জেলা রেজিষ্ট্রার। ভূয়া কাজী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত বছরের ৩০ নভেম্বের জেলা রেজিস্টার কে শোকজ করে আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব বুলবুল আহমেদ।
তবে একাধিক এলাকার নিকাহ্ রেজিষ্ট্রিার দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন শফিকুল ইসলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের বৈধ কাজী দাবী করে নবাবগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে ২৩১/০১ অঃপ্রঃ মামলা ও নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বৈধ কাজী দাবী করে হাইকোর্টে ২৯৭৮/২০১১ নং রীট মোকাদ্দমা দায়ের করেন। মামলা দুটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
জেলা রেজিস্টার নজরুল ইসলাম জানান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক কথিত কাজী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগামীতে মামলাটি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁপাইবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মামলাটি ৫ আগস্ট সিআইডিতে বদলি হয়েছে।
অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে মামালা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবেলা হবে। তবে অন্যান্য প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দিতে পারেনি তিনি।
আরকে//