ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

শস্য দ্রুত শুকানোর কৌশল উদ্ভাবন করলেন হাবিপ্রবির শিক্ষক

হাবিপ্রবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০২:৫২ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:২৮ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ভূট্টা, ধানসহ অন্যান্য ফসল দ্রত শুকানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশি গবেষকরা। দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ কৌশল উদ্ভাব করেন।

উদ্ভাবনী নতুন কৌশলটি দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম, কোষাধক্ষ্য, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার পরিচালকগণ দিনাজপুরের  উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে যান। সেখানে তারা উদ্ভাবিত যন্ত্রের বিভিন্ন দিক ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং উপস্থিত একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে যন্ত্রের গুণাগুন ও কার্যকারিতা দেখেন।

এ সময় উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, এটি একটি নিড বেসড টেকনোলজি। বর্তমানে যেভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে এবং প্রতিবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে যে হারে  ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাতে করে আমার কাছে মনে হয়েছে এই টেকনোলজি একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে। আমি তার এই  উদ্ভাবনকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং তার পরিকল্পনা ও কাজের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।

প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মসলা জাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে টুকিটাকি ফাস্ট স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক ছাড়া গ্রেইনের (ভুট্রা,ধান) জন্য  আমাদের  দেশে টু স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক নিয়ে কোথাও কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই, আমরাই প্রথম এই টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি। এটি পরিবেশবান্ধব, বিধায় পরিবেশে ও জীব বৈচিত্রের  প্রতি এর কোনও বিরুপ প্রভাব নেই ।

সাজ্জাত হোসেন বলেন, তিন বছরের এই প্রকল্পে আমরা মাত্র এক বছরে এই পর্যন্ত অগ্রসর হতে পেরেছি। আমাদের এটিকে কমার্শিয়াল পর্যায়ে নিয়ে যেতে এক বছরের মতো সময় লাগবে। বর্তমানে এই  পদ্ধতিতে প্রথম স্টেজে  ভুট্রা বা ধান  ফ্লুডাইজড বেড ড্রায়ার ব্যবহার করে মাত্র ৪ মিনিটে ২৮ শতাংশ আদ্রতা থেকে ২০ শতাংশ আদ্রতায় নিয়ে আসা যায় এবং দ্বিতীয় স্টেজে এলএসইউ/সান ড্রাই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র ৩-৪ ঘন্টায় ২০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ এ নিয়ে আসা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ভুট্রার আবাদ বেড়ে গেছে। পোল্ট্রি ফিড, ডেইরি ফিড ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভূট্টার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এজন্য ফিড মিলেরা ব্যপকভাবে ভূট্টা ব্যবহার করছে। ফলে কৃষকেরাও ভূট্টা আবাদের  দিকে ঝুকছে। কারণ একর প্রতি এর ফলন অনেক বেশি। কাজেই বর্ষাকালে যে ভূট্টা হারভেস্ট হয় তা শুকানোর জন্য কিন্তু এর চাহিদা অনেক বেশি হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, কিভাবে কম খরচে এটিকে কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া চায় সে নিয়ে কাজ করব, যাতে কৃষকদের হাতের নাগালে পৌছে দিতে পারি। আগামী বছরের মধ্যেই ইনশাআল্লাহ আমরা সেটি পারব। মাঠ পর্যায়ে ভূট্টা শুকাতে বর্তমান কেজি প্রতি ৫০-১০০পয়সা  লাগে। আমরা চেষ্টা করব একই খরচের  মধ্যে রাখতে। তাছাড়া আপনারা জানেন মেকানিক্যাল যে কোনও কাজে খরচ একটু বেশিই হয়। আর আমাদের এই মিশিনে ড্রায়িং করলে রং ও পুষ্টি গুনাগুণ ভাল থাকে। এতে কৃষকরাও বাজারে বেশি মূল্য পাবে। কাজেই একটু খরচ বেশি হলেও তা পুষিয়ে যাবে। আবহাওয়া খারাপ থাকলেও এই পদ্ধতিতে ফসল শুকিয়ে ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। ফলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছর যে পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়, সেটি আর হবে না।

উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে আছেন প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার, কো-ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. মো. মফিজুল ইসলাম ও মো. আব্দুল মোমিন সেখ এবং রিসার্চ ফেলো হিসেবে মোঃ এজাদুল ইসলাম, আক্তারুজ্জামান ও হাসান তারেক।

একে//