টুঙ্গিপাড়ায় চট্টগ্রামী মেজবানের আয়োজন করেছেন নওফেল
প্রকাশিত : ১১:৩১ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার
বাবা নেই, কিন্তু ছেলে তো অাছে। কাজের মধ্য দিয়ে তিনি জীবিত রাখতে চান বাবাকে। অার তাই বাবার দীর্ঘদিনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রামের প্রয়াত রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার নওফেলের কথা। যিনি কেন্দ্রীয় অাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আশির দশক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে তার জন্মস্থান টুংগিপাড়ায় চট্টগ্রামী মেজবানের অায়োজন করে থাকেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মাথায় হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের জন্য আপ্যায়নের আয়োজন করতেন তিনি। এবার তিনি নেই। গত বছর তিনি মারা গেছেন।
তবে মহিউদ্দিনের অবর্তমানে তার কাজ থেমে যাক- এমনটি চাননা তার পুত্র ব্যারিস্টার মজিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাই কেন্দ্রীয় অাওয়ামী লীগের এই তরুণ নেতা এবার মেজবানের আয়োজন করেছেন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন মহিউদ্দিন চৌধুরী চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় এ অায়োজন হতে যাচ্ছে। ৪০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানে অংশ নিয়ে খেতে পারবেন বলে জানা যায়।
অন্যান্য বছর মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা টুঙ্গিপাড়ায় যেতেন। এবার নেতাকর্মীরা যাচ্ছেন নওফেলের নেতৃত্বে। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনসহ পরিবারের সব সদস্যরাও রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত সহকারী ওসমান গণি।
ব্যারিস্টার নওফেল একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, সত্তরের দশকের শেষদিকে আমার বাবা যখন ভারত থেকে দেশে ফেরেন, তখন থেকেই প্রতিবছর তিনি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিবসে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন। আশির দশকের মাঝামাঝি, সম্ভবত ৮৪ সাল থেকে বাবা টুঙ্গিপাড়ায় মেজবানের আয়োজন করে আসছিলেন। তখন টুঙ্গিপাড়ায় রাস্তাঘাট উন্নত ছিল না। বড়ো আকারের আয়োজন করা যেত না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় জেলেও ছিলেন। আবার রাজনৈতিক হুলিয়া মাথায় নিয়েও গেছেন। দু’য়ে কবছর ব্যতিক্রম বাদে বাবা প্রতিবছরই টুঙ্গিপাড়া গেছেন।
নওফেল অারও বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টুঙ্গিপাড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে বাবা প্রতিবছরই টুঙ্গিপাড়ায় বড় আকারের মেজবান আয়োজন করে আসছেন। যারা বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে যান তাদের এবং গ্রামবাসী মিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় অর্ধলক্ষ লোককে তিনি খাইয়েছেন। এই কাজটা আমাদের পরিবারের কাছে আমার বাবার স্মৃতি। এই স্মৃতিটুকু আমরা বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
১৫ আগস্ট দুপুরে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ ও বালিয়াডাঙ্গা স্কুল মাঠে মেজবান অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য মহিউদ্দিনের ছেলে সালেহীন এবং একান্ত সহকারী ওসমান গণি গত শনিবারই টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে গেছেন। তাদের সঙ্গে গেছেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত বাবুর্চি মোহাম্মদ হোসেন। তার টিমে অার ৪০ জন সহকারী বাবুর্চি কাজ করছেন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে ওসমান গণি বলেন, এবারও ৪০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে। ৩০ হাজার মুসলিম এবং ১০ হাজার অমুসলিমের জন্য খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যে ২০টি গরু কেনা হয়েছে। ৩ হাজার পিস মুরগিও কেনা হয়েছে।
ওসমান গণি বলেন, প্রতিবছর স্যার ( মহিউদ্দিন চৌধুরী) টেলিফোনে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখতেন। বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেন। এবার স্যার নেই। স্যারের অভাববোধ করছি।
মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দান থেকে দুটি বাস, তিনটি জিপ এবং কয়েকটি মাইক্রোবাসে করে নেতাকর্মীরা টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত এখনো তারা টুঙ্গিপাড়ায় না পৌঁছালেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাবেন বলে অাসা করা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, ১৫ আগস্ট সকালে নেতকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মেজবান অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের নেতা (এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী) নেতৃত্বে আমরা জাতির জনকের মাজারে যেতাম। এবার নেতা নেই। নেতার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর আমরা টুঙ্গিপাড়ায় যাব। প্রতিবছর মেজবানের আয়োজন হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান ও প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, মাহবুবুল হক সুমন, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরসহ বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে তৎকালীন শ্রমিক নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বিষয়টি তৎকালীন সামরিক সরকার জানার পর তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়। তখন মহিউদ্দিন নিজের অনুসারীদের নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান এবং সেখান থেকে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন।
তবে ভারতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন।
১৯৭৭ সালে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবরটি পাকা করে দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর তিনি ১৫ আগস্টে টুঙ্গিপাড়া চলে যান। ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট থেকে সেখানে বড় পরিসরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করে আসছেন মহিউদ্দিন।
অা অা// এসএইচ/