ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘বঙ্গমাতা আমার জন্য কালোজিরার ভর্তা পাঠিয়ে দেন’

প্রকাশিত : ০৪:৫৩ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বঙ্গবন্ধুর নাম প্রথম কবে কোথায় শুনেছি তা বলা কঠিন। তবে তাকে দেখার আগেই তার সম্পর্কে শুনতে শুনতে একটা ধারণা পেয়েছিলাম।

বিয়ের পর আমার স্বামী (শহীদ ডা. আলীম চৌধুরী) প্রায় তার সম্পর্কে বলতেন। এক পর্যায়ে আমরা আত্মীয় হয়ে যাই। শেখ শহীদুল ইসলামের বোন আমাদের ভাগ্নে বৌ হয়ে আসে। তখন থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে স্বাভাবিক আসা যাওয়া সব সময় ছিল।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে দুটি ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে আছে।

একটি হলো আমি সহ আরো বেশ কয়েকটি শহীদ পরিবার বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছি। আমার ছোট মেয়ে শম্পার (ডা. নুজহাত চৌধুরী) বয়স তখন দু`বছর। বঙ্গবন্ধু এসে বললেন, `আলিম কে কারা মেরেছে আমি জানি। আমি তাদের ছাড়ব না`।

আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। তিনি আমার মাথাটা টেনে তার বুকের কাছে নিলেন। একজন বাবা যেভাবে মেয়ের মাথা বুকে নেয় ঠিক সেভাবে।

ঐ অবস্থায় তিনি বললেন, ` তুই কাঁদিস না মা। তোদের সকল ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার।’ আমি এখনো আমার কানে সেই আওয়াজ শুনতে পাই। এমন সান্ত্বনা আমাকে আর কখনো কেউ দিতে পারেনি।

আরেকটি ঘটনা বলি। একদিন দুপুরে কথা প্রসঙ্গে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বললাম, কালো জিরার ভর্তা আমার খুব পছন্দ। কিন্তু বানানো হয়ে উঠেনা। পরের দিন দেখি এক অপরিচিত লোক এসে হাজির। হাতে ব্যাগ। আমাকে দিয়ে বলল ৩২ নম্বর থেকে দিয়েছে। আমি খুব আশ্চর্য্য হয়ে ব্যাগ নিয়ে দেখলাম ভেতরে একটি বাটি। তাতে কালোজিরার ভর্তা। আমি আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম। ৩২ নম্বরে তখন দিন রাত মানুষে ভীড় লেগে থাকে। বঙ্গমাতা স্বাভাবিকভাবে খুব ব্যস্ত থাকেন। সেখানে তিনি আমার এ কথা স্মরণ রাখলেন কীভাবে? বা একজন সরকার প্রধানের স্ত্রী হয়েও সাধারন মানুষের প্রতি তার এই যে আন্তরিকতা এটা আমি কিসের সাথে তুলনা করব।

এরকম অনেক ভালবাসায় আমরা সিক্ত হয়েছি। আমাদের আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষকে ভালবাসার দিক থেকে বাবার ডুপ্লিকেট কপি। সব সময় সবার খোঁজ খবর রাখেন। একবার কারো সাথে পরিচয় হলে তাকে সারাজীবন মনে রাখেন। ১৯৭৫ সালের পর দেশেটা পিছিয়ে গিয়েছে অনেক। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ- সব অপশক্তির কবলে ভূলুন্ঠিত হয়েছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার শক্ত হাতে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। আমরা চাই এভাবে এগিয়ে যাক। মানুষের মুখে হাসি ফুটুক এটাই প্রত্যাশা।

(লেখক পরিচিতি: শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আবদুল আলিম চৌধুরীর স্ত্রী। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন।)

শ্রুতি লেখক: আলী আদনান।