মানিব্যাগ
মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম
প্রকাশিত : ০৯:৫৭ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:৩৭ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৮ সোমবার
কাল বুধবারের এই ঘটনা। অনেকদিন মনে রাখার মতো। ভালোলাগারও। আয়ারল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক বেড়াতে আসা এক দম্পতির সঙ্গে।
বিকেল সাড়ে ছ’টা। স্টোরে কাজ করছিলাম আমরা তিনজন — ভারতের ইন্দুমতি, শ্রীলংকার উপালি আর আমি। উপালি ৬.৩২ মিনিটে একটু বাইরে যায়। এক কাস্টমারকে এটেন্ড করে আমি কেবল একটু ঘুরেছি, নজরে পড়লো উপালি’র কাউন্টারে একটা কালো মানিব্যাগ পড়ে আছে। কি করতে হবে জানা ছিলো। মানিব্যাগ ছোঁয়া যাবে না।
টেলিফোন নিয়ে কল করলাম পোর্ট অথরিটি পুলিশের লস্ট এন্ড ফাউন্ড ডিপার্টমেন্টে। দুই মিনিটের মধ্যে NYPD’র দুই পুলিশ এসে হাজির। তারা মানিব্যাগ খুলে টাকা-পয়সা কি আছে গুনলেন এবং আবার রেখে দিলেন। প্রায় ৮শ’ মার্কিন ডলার এবং ৫৫ ইউরো! সাক্ষী হিসেবে আমার নাম টুকে নিলেন এবং বললেন যদি মানিব্যাগের মালিক আসেন তাহলে যেন তাদের অফিসে পাঠিয়ে দিই।
দশ মিনিট পর মানিব্যাগের মালিক আইরিশ দম্পতি এসে হাজির। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের দপ্তরে পৌঁছে দিয়ে আমি কাজে চলে এলাম। আমাকে ধন্যবাদ জানাতে জানাতে তারা রীতিমত মুখে ফেনা তুলে ফেললেন।
আমি ফের কাজে ডুবে গেলাম। অবাক কান্ড! ওই দম্পতি আবার এলেন আমার কাছে, হাতে বেশ কিছু ডলার, আমাকে গিফট করতে চান! সঙ্গে বারবার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন। আমি সবিনয়ে টাকা নিতে অপারগতা জানিয়ে বললাম, “লেট্ স টেইক অ্যা সেলফি, দ্যাট উইল বি মাই প্রাইজ!” আইরিশ দম্পতি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
দু’জন কিচুক্ষণ আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলেন — কেমন যেন এক অনির্বচনীয়, মিষ্টি ঊষ্ণতা অনুভব করলাম। রাতে বাসায় ফিরে হঠাৎ এই লাইনটা মনে ধরলো — “All human beings are born equal.”
(লেখক: মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। দেশে থাকতে তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক সংবাদ, ভোরের কাগজ ও ডেইলি স্টারে। এই তুখোর সাংবাদিক বর্তমানে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করছেন। তার ফেসবুক থেকে এই লেখাটি সংগৃহীত।)
এসএইচ/