কথাশিল্পী জহির রায়হানের জন্মদিন আজ
প্রকাশিত : ০৯:১৪ এএম, ১৯ আগস্ট ২০১৮ রবিবার
কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ও শক্তিমান কথাশিল্পী জহির রায়হানের ৮৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তার জন্মদিন উদযাপন করবে। এসব আয়োজনের মধ্যে রয়েছে জহির রায়হানের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র ও তার নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী প্রভৃতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করা জহির রায়হান অল্প বয়সেই কমিউনিস্ট রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তখন পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় তিনি বার্তাবাহকের কাজ করতেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম যে ১০ জনের দলটি ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল, জহির রায়হান তাদেরই একজন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন সরাসরি। এ সময় তিনি ক্যামেরা হাতে সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে।
ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু জহির রায়হানের। চলচ্চিত্রেও তার আগ্রহ সে সময় থেকেই। ১৯৫৭ সালে প্রথম কাজ করেন পাকিস্তানি চিত্রপরিচালক জারদারির সঙ্গে। তার প্রথম ছবি উর্দু ভাষার ‘জাগো হুয়া সাবেরা’। ১৯৬১ সালে তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনও আসেনি’ মুক্তি পায়। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাহানা’। ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাতে প্রতীকী কাহিনীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে চিত্রিত করেন তিনি। এর মাধ্যমে জনগণকে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।
১৯৭১ সালের এপ্রিলে জহির রায়হান চলে যান কলকাতায়। শুরু করেন তার অন্য রকম মুক্তিযুদ্ধ। ক্যামেরা হাতে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন
বিভিন্ন সীমান্তে এবং এক শরণার্থী শিবির থেকে আরেক শরণার্থী শিবিরে। নিপীড়িত মানুষের মুক্তির বিষয়টি তিনি চলচ্চিত্রে ব্যবহার করতে চাইতেন প্রথম থেকেই। লাতিন আমেরিকার বিপ্লবী ধারার ছবিগুলোই ছিল তার মূল প্রেরণা। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল কিউবান চিত্রপরিচালক আল ভারেজ। মূলত তার প্রেরণায় তিনি নির্মাণ করেন ‘স্টপ জেনোসাইড’।
জহির রায়হানের অন্য ছবিগুলো হচ্ছে- ‘সোনার কাজল’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘আনোয়ারা’, ‘বেহুলা’, ‘জ্বলতে সুরুজ নিচে’। নির্মাণ শেষ করতে পারেননি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’-এর কাজ। তার প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্কগ্দুন’, ‘বরফ গলা নদী’ এবং ‘আর কত দিন’। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘নিগার’ চলচ্চিত্র পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলা একাডেমির মরণোত্তর সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের সন্ধানে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি এই নন্দিত চলচ্চিত্র পরিচালক। তার মৃতদেহটিও পাওয়া যায়নি। ওই দিনটি জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস হিসেবে পালিত হয়।
এসএ/