ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

মাথায় আঘাত পেলে কী করবেন (ভিডিও)

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন

প্রকাশিত : ০৫:২৭ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৫:৩২ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৮ সোমবার

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন

ঈদ সামনে রেখে গ্রামের উদ্দেশ্যে ছুটছে মানুষ। কেউ বাসে কেউ লঞ্চে কেউ বা ট্রেনে। প্রচন্ড ভিড়ে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এভাবে প্রতি বছর ঈদযাত্রায় বহু প্রাণ ঝড়ে যায়। যাত্রাপথে আহত হয়ে বিশেষ করে মাথায় আঘাত পেলে চিকিৎসা কী? এ বিষয়ে একুশে টিভির পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাব এইড হাসপাতালের অর্থোপ্লাস্টি ও ট্রমা সার্জস বিভাগের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক আমজাদ হোসেন। তিনি এও জানিয়েছেন যে, ঈদে মাংস কাটার সময় কারো আঙ্গুল কেটে গেলে সেই আঙ্গুল জোড়া লাগানোর চিকিৎসাও এদেশে চালু হয়েছে।  বিস্তারিত জানুন সাক্ষাৎকারে-

প্রশ্ন: ঈদ উপলক্ষে গ্রামে যাচ্ছেন সবাই। ইতোমধ্যে ঢাকা খালি শুরু হতে করেছে। যাত্রাপথে কেমন প্রস্তুতি রাখা দরকার?

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন: ঈদে বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে সবার মধ্যে। বছরে পাঁচ থেকে সাতহাজার লোক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়। তার মধ্যে বড় বড় দূর্ঘটনাগুলো হয় দুই ঈদে। তখন যাত্রা পথে থাকা মানুষের মাঝে হুঁশ থাকে না। খেয়াল করলে দেখবেন, ট্রেনের ছাদে ও দরজায় এত বেশি মানুষ থাকে যে, ট্রেন দেখা যায় না। শুধু মানুষ আর মানুষ। বাসেরও একই অবস্থা।

আসলে আমাদের দেশে মানুষ বেশি। সেই তুলনায় আমাদের যানবাহন ও পরিবহন ব্যবস্থা অপ্রতুল। আগে মানুষ নৌ ভ্রমন করত। কিন্তু নদী ভরাটের ফলে নৌ ভ্রমনের সুযোগ কমেছে। মানুষকে এখন দৌড়াতে হচ্ছে বাস বা ট্রেনে। যানবাহনের সঙ্গে আমরা এখন তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। আমরা এখন সবাই যাবো।

কে কার আগে যাব সেই প্রতিযোগিতা চলছে। একটা জিনিস এখানে পরিবর্তন করা যেতে পারে। আমরা সবাই ঈদে বাড়িতে না গিয়ে ভাগাভাগি করে যাওয়া যেতে পারে। এই ঈদে কিছু লোক গেল। পরের ঈদে অন্যরা। আমাদের মনে রাখা উচিত সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশী।

কিন্তু দেখা যায়, সবার মধ্যে একটা বেপরোয়া ভাব। যেভাবেই হোক বাড়ী যাব। উল্টো দিক দিয়ে হলেও যেতে হবে। রাস্তা যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমাদের সেদিকে খেয়াল নাই।

প্রশ্ন: আল্লাহ না করুক, যদি একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে কী করার আছে?

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন যে, সড়ক দূর্ঘটনায় আহতরা যেন নূন্যতম চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঈদের সময়টাতে রাস্তায় ব্যাপক যানজট থাকে। ফলে একটা দূর্ঘটনা ঘটলে আপনি আহত রোগীকে হাসপাতালে কীভাবে নেবেন? কারণ হাসপাতালেও তো গাড়ি দিয়ে নিতে হয়। গাড়ি চলাচলের জায়গা তো থাকে না। যারা নিহত হয়ে যায় তাদের ব্যাপারে কিছু বলার নেই বা বলার থাকেনা।

কিন্তু যারা আহত হয় তাদের তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কিছু স্বেচ্ছাসেবী সবসময় প্রস্তুত রাখা যেতে পারে। ছাত্রদের তেমন দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ নেতৃত্ব দেওয়া বা দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। সৎ হতে হবে। দেখা যায় এক্সিডেন্টের পর এক শ্রেনী আহত ও নিহতদের মোবাইল সরানো বা অন্যান্য মালামাল চুরির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

হেড (মাথা) ইনজুরি হলে কেউ কেউ বমি করে। বমি যদি শ্বাসনালীতে আটকে যায় তাহলে মারা যাবে। তাই বমি করলে মুখটা কাত করে দিতে হবে। যাতে বমি বাইরে চলে যায়, যদি দেখা যায় কেউ হাত পা নাড়াতে পারছে না তাহলে বুঝতে হবে সে স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পেয়েছে। তখন রোগীকে নড়াচড়া করানো যাবে না।

কাঠের টুকরার মত সোজা ভাবে তাকে তুলতে হবে। যদি রক্তপাত হয় তাহলে ছোট ছোট শিরাগুলো নরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলে রক্তপাত বন্ধ হবে। তবে কতক্ষণ ঢেকে রাখা যাবে সাবে সে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

আড়াই ঘন্টার বেশি ঢেকে রাখতে নিষেধ করি। তাতে অনেক সময় গ্যাংগ্রীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেডবডিগুলো আলাদা করে সম্মানের সঙ্গে রাখতে হবে। পাশাপাশি আগে থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালকে জানিয়ে দেওয়া যে আপনারা প্রস্তুত থাকেন।

এখন একটা সুবিধা, আইডি কার্ডে ব্লাড গ্রুপ লেখা থাকে। ফলে রক্তের দরকার হলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপ অনুযায়ী রক্তের সন্ধান করা যায়।

প্রশ্ন: ঈদে মাংস কাটাকাটির সময় অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। প্রত্যেকবারই এমন কিছু ঘটনার কথা আমরা শুনি। সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন: আমাদের দেশে এখন মাইক্রো ভাস্কুলার সার্জারী চালু হয়েছে। কেটে যাওয়া আঙ্গুলের অংশ জোড়া লাগানো যায়। ঢাকায় এখন এই সার্জারি হচ্ছে। তবে কাটা আঙ্গুল সরাসরি বরফে নেওয়া যাবে না। একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে আঙ্গুল নিতে হবে। তারপর আরেকটি প্যাকেটে নিতে হবে বরফ। এভাবে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

প্রশ্ন: ঈদের দিন দেখা যায় আপনারা ডাক্তাররা সাড়ম্বরে ঈদ করেন। সাধারন মানুষ বিপদে পড়লে তখন তারা কী করবে?

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন: সরকার ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে প্রত্যেকটি হাসপাতাল তাদের জরুরী বিভাগ খোলা রাখবে। নন মুসলিম ডাক্তার ও নার্সরা প্রচুর সার্ভিস দেয়। অনেক সময় দেখা যায় তারা এমন সময়ে টানা চব্বিশ ঘন্টা থেকে আট চল্লিশ ঘন্টা সার্ভিস দেয়। এরপরও দরকার হলে আমাদেরকে অবশ্যই ডাকবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন কোনো রোগী যেন বিনা চিকিৎসায় ফেরত না যায়। ঈদের আসল উদ্দেশ্য মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। মানুষের সেবায় আমাদের ঈদ পরিপূর্ণ করা সম্ভব।

লেখক: কনসালট্যান্ট, অর্থোপ্লাস্টি ও ট্রমা সার্জস, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল।

/ এআর /