বোরো চাষের নতুন পদ্ধতি: ফলন বাড়বে দেড়গুণ
প্রকাশিত : ০৭:২৯ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৮ সোমবার
দীর্ঘ গবেষণার পর একটি চারা রোপন পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন কৃষি গবেষক মো: মমিনুল ইসলাম। একটি মাত্র ধানের চারা রোপন করে অধিক ফলনের এক অবিশ্বাস্য ফর্মূলা আবিস্কার করেছেন এ গবেষক। সুইডিস ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার সায়েন্স থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর থেকে বীজ সাশ্রয় ও উচ্চ ফলনের লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় তিনি গবেষনা চালান। এ পদ্ধতি কৃষকদের উৎপাদন খরচ সাশ্রয়ী ও অধিক উৎপানের সর্বাধুনিক আবিস্কার।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষিখাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে প্রযুক্তিটি। একটি চারা রোপন পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করলে বাড়বে উৎপাদন- লাভবান হবেন কৃষক।
২০১৫ সালে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ১৪ শতাংশ জমিতে এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করে এ পদ্ধতিটি। এরপর এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার অব ব্যাংক ম্যনেজমেন্ট বিষয়ের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের আলম রাজুর বাস্তবায়ন ও কৃষি গবেষক মমিনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ভাগনাগর কান্দীর জয়নগরে ৮.৫ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করেছে।
দেখা গেছে, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় একটি চারা রোপন পদ্ধতিতে লাগানো ধানের জমি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। একটি চারা থেকে প্রতিটি গোছে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ টি পর্যন্ত তেড় নিয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চাইতে এ পদ্ধতিতে অন্তত দেড়গুণ বেশি ফলন হবে। এ পদ্ধতিতে প্রায় ৮০ ভাগ বীজ সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। প্রচলিত নিয়মে ৮/১০টি করে চারা রোপন করে কৃষকরা। এ পদ্ধতি ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে একের অধিক চারা রোপন অপচয় ছাড়া কিছু নয়।
এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক মো. মমিনুল ইসলাম আবিষ্কৃত নতুন চাষ পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে বীজ সাশ্রয় ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ সংকট মোকাবেলা সর্বপরি সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ধান চাষ গবেষণার বিষয়টি ২০১৬ সালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইকোনোমিক্স এন্ড সোস্যাল সায়েন্স ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এন্ড সোস্যাল সায়েন্স রিসার্চ কনফারেন্স শীর্ষক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।
এ পদ্ধতিটি বিভিন্ন শিরোনামে অস্ট্রেলিয়া এন্ড নিউজিল্যান্ড জার্নাল অফ সোস্যাল বিজনেস ইনভারোনমেন্ট এন্ড সাসটেনইবিলিটি ৪র্থ সংখ্যার ৪৬ থেকে ৫৭ পৃষ্টায় ও অস্ট্রেলেশিয়ান জার্নাল অফ ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড বিজনেস এর ৩নং সংখ্যার ১ থেকে ৮নং পৃষ্টায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও হোটেল রেডিসন ব্লুতে অর্গানিক ধান বীজ ধারনাটি সম্পর্কে আলোচনা করেন। সেখানে বর্তমান চাষ পদ্ধতির ত্রুটি ও এর থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোকপাত করেন তিনি।
কৃষি গবেষক মমিনুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ব্যবহার ও আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশের মত জনবহুল ও দরিদ্র দেশগুলো ক্রমহ্রাসমান খাদ্য উৎপাদনের বৈশ্বিক বাস্তবতায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে জনসংখ্যার চাপ এবং খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের কারণে আবাদি জমি অকৃষিখাতে চলে যাওয়ায় আবাদি জমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও রাসায়নিক সার ব্যবহারে দিনদিন নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গুণাবলী, দেখা দিচ্ছে ফলন বিপর্যয়। ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারে সচেতন না হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে কৃষকরা। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, যেহেতু কৃষি জমি বৃদ্ধি পাবে না, সেহেতু জমিতে ফলন বাড়ানো ও ব্যয় সাশ্রয় করতে হবে। কৃষকদের উৎপদন ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ প্রযুক্তির উদ্ভভাবন করা হয়েছে।
গবেষণার প্রেক্ষাপট: মহা পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন থেকে তিনি এ চাষ পদ্ধতির ধারনা নেন। তিনি জানান, সুরা বাকারা’র ২৬১ নং আয়াতে একটি বিজে ধান চাষের ধারনা রয়েছে। কৃষি গবেষক অধ্যাপক মোঃ মমিনুল ইসলাম সুইডিস ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এ নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। এরপর তিনি কৃষি জমিতে এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগের কাজ শুরু করেন। ২০১৫ সালে নাটোরে ১৪ শতাংশ কৃষি জমিতে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। বোরো চাষের নতুন পদ্ধতি প্রায় শতভাগ সফল। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ পবিত্র আল কোরআন থেকে নেওয়া ধারনার আলোকে চাষ পদ্ধতি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আশা করেন তিনি।
আরকে//