চামড়া বাণিজ্যে বিপর্যয়: ক্ষতিগ্রস্ত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত : ০৩:৩৬ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০১৮ শনিবার
কোরবানির চামড়া বাণিজ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সরকার ও ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত দামেও বেচাকেনা হয়নি চামড়া। চামড়ার দাম এতোটাই কম যে, গত বছর মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়। এ বছর তা ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, এ বছর ৯শ’ থেকে ১১শ’ টাকার মধ্যে গরুর চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য গত বছরের তুলনায় একটু কম। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকদের হাতে টাকা নেই। অর্থ সংকটে আছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু তাহের জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য কমেছে। বিদেশি ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ট্যানারি মালিকরা অর্থ সংকটে পড়েছেন। এ দু’কারণে চামড়া বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু কোরবানি হয়েছে। আর দেশে মোট চামড়ার প্রায় ৬০ শতাংশই আহরণ করা হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির সময়।
চামড়া সংগ্রহ করতে ঈদের আগেই বেঁধে দেওয়া হয় মূল্য। এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫-৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অপরদিকে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩-১৫ টাকা।
তবে বেঁধে দেয়া দামে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাননি। ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, চামড়া কেনার আগে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা প্রতিফুট ৪০ টাকা মূল্য দিয়েছেন। সে হিসাবে চামড়া কিনে তাদের কাছে বিক্রি করতে গেলে উল্টো কথা বলছে। তিনি বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে চামড়া নিয়ে ট্যানারিতে আসছেন অনেকে। কিন্তু মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে মৌসুমি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এখন তারা চামড়া ফেরতও নিয়ে যেতে পারছে না আবার কম দামে বিক্রিও করতে চাইছেন না। তাই এসব ব্যবসায়ীকে চামড়া নিয়ে ট্যানারি মালিকদের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী আসাদুল মিয়া জানান, আমি সারা বছর ট্যানারিতে চামড়া সরবরাহ করেছি। কিন্তু ঈদের সময় ট্যানারি মালিকরা আমাকে চিনতেই পারছেন না। সিন্ডিকেট করে বেঁধে দেওয়া দামের অর্ধেক দামে চামড়া কিনতে চাচ্ছেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ী রফিক মিয়া জানান, তিনি ৩শ’ পিস চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন। সংরক্ষণ করে কিছুদিন পর সঠিক মূল্য পাওয়া যাবে এ আশায় তিনি চামড়ায় লবণ দিচ্ছেন। প্রতিটি চামড়ার পেছনে লবণ ও শ্রমিক ব্যয় বাড়তি আরও ৩০০ টাকা যাবে। শেষ পর্যন্ত তাও উঠবে কিনা সে আশা করতে পারছেন না তিনি।
আরকে//