কবি মিলটন রহমান সাহিত্য জীবন ও কর্মে নিজস্ব ভুবন গড়ে তুলেছে
তাজিন সাদিয়া
প্রকাশিত : ১১:৪৫ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৮ রবিবার
কবি মিলটন রহমান। কবিতা, সাহিত্য, গবেষক হিসেবে সর্বত্র তাঁর দীপ্ত পদচারণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও কর্মসূত্রে (স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা) তাঁর কয়েকটি বই ও প্রবন্ধ, নিবন্ধ, অনুবাদ আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেমন, ব্রেুটাস পর্ব এবং কর্তার শারীরিক অবনতি (ছোট গল্প), চূর্ণকাল (কবিতা), নকশা পুরাণ ( ছোট গল্প), কবি শহীদ কাদরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ (প্রবন্ধ) ইত্যাদি।
যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডন প্রবাসী। তবে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা থেকে তার সাহিত্যবোধ, রুচি, সৃজন উদ্যান আমাদের চেতনায় নানাভাবে ছাপ ফেলেছে। তার রচনায় জিজ্ঞাসা আছে, আছে প্রেম, প্রকৃতি, মনস্তত্ব, মৃত্যু চিন্তা, নারী, রহস্যময়তা। কখনো মুক্ত ছন্দের রচনার পারঙ্গমতা উপহার দিয়ে চলেছেন। ভাষার অপূর্ব মিথস্ক্রিয়ায় ব্যতিক্রমী এ লেখকের দর্শন মননের ঔজ্জ্বল্যে দীপ্ত পদচারনায় সন্তষ্টির দাঁড়ি পাল্লায় আমি মুগ্ধ পাঠক। যার রচনায় আছে অপূর্ব গতি, নবীনতা, আধুনিকতা। যার বুকের ঘরে নিরন্তর শব্দ মিছিলের দহন চলেছে।
অত্যন্ত অনুভূতিশীল, স্বপ্নচারী এই ব্যক্তিত্ব বর্তমানে লন্ডনে বাংলা ভাষা-ভাষী প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা টিভিতে কর্মরত আছেন সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে। পেশাগত কাজের পাশাপাশি তিনি সব সময় একজন ধ্যানি কবি। সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক কবি মিলটন রহমানের জন্ম চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে (হাজারী তালুক)। পিতা ডা. এ.কে এম ওয়াহিদ। মাতা নুরজাহান বেগম।
তিনি ইউরোপে বিশ শতকের লিটলম্যাগ আন্দোলনের গবেষনা কর্ম হিসেবে বিশ পর্বের ধারাবাহিক রচনা করেছেন। অত্যন্ত কষ্টসাধ্য পর্বসমূহ শেষ করতে উনার প্রায় তিন বছরের অধিক সময় লেগেছিল। দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে রচনাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। অনেক গুণী কবি সাহিত্যিকদের মতে, তাঁর এই গবেষনা কর্মটি একদিন হয়ত ইতিহাস ছোঁবে।
বাংলা কাব্য সাহিত্যের বৈশ্বিক চিত্র ফুটে উঠেছে স্নো ড্রপ চুম্বনেরা’ কবিতা গ্রন্থের কবিতাগুলোতে। কবিতাগুলো পাঠমুগ্ধতায় অনন্য। কখনো নিজেকে প্রেমিক-প্রেমিকার স্থানে বসিয়ে দিচ্ছে। ‘দৃশ্য’ কবিতার অংশ বিশেষ ‘প্রযত্নে বইয়ের পাতায় তুমি পাঠিয়েছিলে দুটো পাপড়ি/বহু বছর আগলে রেখেছি সেই বই ও পাপড়ির সৌরভ।’
কবিতাটি পড়লে মনে হবে সত্যি পুরনো প্রেমিক যুগল বইয়ের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে করোটির ভিতর অনেকদিন পর কাঁচা পাপড়ির মাতাল করা সুগন্ধ ভরে তুলছে।
‘রূপান্তর’ কবিতায় বলেছেন, ‘আমরা এখন আর আগের মতো নেই/ঝোলাঝুলি ফেলে দিয়ে, তুলে নিয়েছি ডিজিটাল হৃদপিন্ড’। মানুষের জীবন ও কর্মের মধ্যে কিভাবে প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে তা কবি নিরবে দেখছেন।বুকের মধ্যে কবি অকবি, প্রেমের অপ্রেমের বিনিময় কালক্রমে কতটা বদলে গেছে তা কবির কাছে অঅনুমেয়।এখন আর প্রেমে কলম নিবেদিত থাকছে না। যা কবির অন্তরকে খোঁচা দিয়ে যায়।
‘জী+ব+ন’ কবিতায় সাধারণ অতিসাধারণ মানুষের মতই অনুভূতির জগৎটাকে সূক্ষ জীবনের সত্বা, জীবনের অস্তিত্বের অনুভূতির শুদ্ধতম প্রকাশের মধ্যে পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে। জীবনের আত্মা একটি জালের ফোকরের ছিদ্রের মাঝে সমর্পিত অস্তাচলে কিংবা সহস্রতরঙ্গে বেচেঁ থাকবার স্বপ্নালোক। কবি যাকে বলেছেন, বিন্দু ও বিশাদ…
‘অক্ষমতার মাত্রা বিয়োগ’ কবিতায় কবি কন্ঠে প্রতীকি প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে।
পরিশেষে কবি প্রেম পূজারী। ‘স্নোড্রপ চুম্বনেরা’ কবিতায় স্নোড্রপ চুম্বনেরা ভোরের নির্মল হাওয়ার মত চুম্বনহীন প্রেমিক প্রেমিকার কাছে চুম্বন বিলি বন্টন করে। ইন্দ্রিয়কে শীতল করে নেয়। ভালোবাসার অন্তর্লিন শক্তি বার বার কবি মনে প্রেমের সমর্থনের শক্তি জুটায়। সত্যি কাব্য জগতের রোমান্টিসিজমের সাগরকূল পেরিয়ে কবি প্রেম ইপ্সিত ব্যঞ্জনায় যাত্রা করে যাচ্ছে।
‘এখানে সেখানে ঝুলে আছে, এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে/বৃত্ত কিংবা ওষ্ঠের মতো, সিঁথি কিংবা সিঁদুরের মতো বরফকুচি/আমি প্রতিদিন নিয়ম করে, ছুয়ে দিয়ে যাই, রাখি খেলোয়া হাত স্নোড্রপ চুম্বন থেকে টেনে নিয়ে আসে মায়াবী মায়াবী চুম্বনগুলো ‘সত্যি সময়ের দ্রবণক্রিয়ার রসদ এ কবিতাগুলো। কবির এই মিশ্র দ্রবণে হাত বাড়িয়ে বলতে চাই, কবিতাটির আঙ্গিক চমৎকার, শক্তিশালী। শব্দের দ্যুতি আছে।
কবি বলেছেন, ‘এ জীবনে লেখালেখি ছাড়া আর কিছু শিখিনি’’… লেখালেখি কবি মনের ভেতরে কিভাবে নি:শব্দে ঢুকে গেছে কবি জানেন না। সীতাকুন্ডের নদী, খাল, পাহাড়, বৃক্ষরাজি, ক্ষেত, পাখির গান, রিমঝিম বৃষ্টির ফোটা তার বুকের ভেতরে লেখালেখির উষ্ণতার স্বর অম্বিত করেছে। তাইতো কবি মনের নিযুত সময় ঠেলে চলেছে প্রগাঢ়ভাবে লেখালেখির অক্ষরে অক্ষরে ছুটে বেড়ানোয়।
কবির জন্য শুভ কামনা থাকলো।
(লেখক পরিচিতি: তরুন লেখক)