ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সমুদ্রের গভীরে আশ্চর্য জগতের সন্ধান

প্রকাশিত : ১১:২৮ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার

মানুষ মহাকাশের অনেক রহস্যের সমাধান করলেও গভীর সমুদ্রের অনেক অংশ এখনও মানুষের কাছে অজানা রয়ে গেছে৷ একদল গবেষক এমনই এক আশ্চর্য জগত আবিষ্কার করে সে বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করছেন৷

ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সমুদ্রের তলদেশে প্রায় এক অজানা জগতের সন্ধান পেয়েছেন৷ সেই প্রাচীর প্রায় ১০০ মিটার উঁচু ও ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত৷ শীতল পানির প্রবাল দিয়ে সেটি তৈরি৷ এই প্রবাল হাজার হাজার মিটার গভীরে কোনও আলো ছাড়াই বেঁচে থাকে৷ গবেষক দলের সদস্য ড. ক্লাউডিয়া ভিনব্যার্গ বলেন, ‘সমুদ্রের গভীরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে তারা থাকে৷ স্রোতের মাধ্যমে ক্ষুদ্র খাদ্যকণা আগমনের উপর তারা নির্ভর করে৷ সেই খেয়েই তারা বাঁচে৷’

তুষারকণার মতো ভেসে আসা প্ল্যাংকটন খেয়ে প্রবাল বেঁচে থাকে৷ কিন্তু সমুদ্রের গভীরে তাদের পরিমাণ কম হওয়ায় প্রবালের বংশবৃদ্ধির হারও কম৷ এক হাজার বছরে বড়জোর ১৫ মিটার বৃদ্ধি ঘটে৷ তা সত্ত্বেও গবেষকরা গত কয়েক বছরে তাদের অভিযানে আবার অসাধারণ আকারের প্রবাল আবিষ্কার করেছেন৷ ড. ভিনব্যার্গ বলেন, ‘বিশেষ করে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে আমরা অনেক প্রবাল প্রাচীর খুঁজে পেয়েছি৷ তাদের উচ্চতা এমনকি ৩০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে৷ আইফেল টাওয়ার বা বার্লিনের টেলিভিশন টাওয়ারের মতো উঁচু৷ এমন উচ্চতা পাবেন সেখানে৷’

মৌরিতানিয়া উপকূলের কাছে কীভাবে এই প্রাচীর সৃষ্টি হলো, তা জানতে ক্লাউডিয়া ভিনব্যার্গ ও তার সহকর্মীরা বিভিন্ন স্তরে পাথরের মতো জমে থাকা প্রবাল সংগ্রহ করেছেন৷ জানা গেছে, সেই প্রাচীর প্রায় ১০ লাখ বছর ধরে বেড়ে চলেছে৷ আজ তার অবস্থা কী? ড. ক্লাউডিয়া ভিনব্যার্গ সে বিষয়ে বলেন, ‘উষ্ণ যুগের সূচনা, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার বছর আগে থেকে এই এলাকায় আর কোনও প্রবাল নেই৷ অক্সিজেনের ঘনত্ব অত্যন্ত কম হওয়ায় কোরাল আর বাঁচতে পারে না বলে আমাদের ধারণা৷ তবে ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে আমরা জানতে পেরেছি যে সম্প্রতি আবার সেখানে প্রবালের সমাগম ঘটেছে৷ কিন্তু আগের মতোই সেখানকার পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় কোরালের পক্ষে প্রাচীর তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না৷’

গবেষকদের ধারণা, গোটা বিশ্বের সমুদ্রে আরও বেশি অংশে অক্সিজেনের ঘনত্বের অভাব দেখা দেবে৷ ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাবের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে চাপের বাড়তি এক কারণ দেখা দেবে৷

প্রবাল প্রাচীর সৃষ্টির ক্ষেত্রে লোফেলিয়া প্যারটুসা নামের এক শীতল পানির প্রবাল প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে৷ পাথুরে এই কোরাল শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বিশাল কলোনি গড়ে তোলে৷ সেই কলোনিতে তারামাছ, সি আর্চিন, মাছসহ নানা প্রাণী বাসা বাঁধে৷ সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের জ্ঞান এখনও সীমিত৷ ড. ভিনব্যার্গ জানালেন, ‘শীতল পানির কোরালকে গভীর সমুদ্রের বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়ে থাকে৷ বাণিজ্যিক স্বার্থে এমন কিছু প্রজাতির মাছ ধরা হয়, যারা প্রবাল প্রাচীরে ডিম পাড়ে, খাদ্য সংগ্রহ করে অথবা কোণঠাসা হলে সেখানে আশ্রয় নেয়৷ অর্থাৎ গভীর সমুদ্রের ইকোসিস্টেম গঠনের ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে৷’

এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ৬০০-রও বেশি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যারা শীতল পানির কোরালে থাকে৷ প্রত্যেকটি অভিযানে সেই সংখ্যা বেড়ে যায়৷ তবে শীতল পানির প্রবালের বংশবৃদ্ধি সম্পর্কে এখনও বেশি কিছু জানা যায়নি৷

সমুদ্রের তলদেশে জাদুময় ও রহস্যময় এক জগত সৃষ্টি হয়েছে৷ সে বিষয়ে বোঝার আগেই আমরা সেই সম্পদ হারালে তা অত্যন্ত দুঃখের কারণ হবে৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে

একে//