ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত:মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের কী হবে?

প্রকাশিত : ০৩:৫১ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানোর দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেছে জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদন।

জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যা এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার।

এ প্রতিবেদনের পর কি হতে পারে? এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কি? এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন বিবিসির জনাথন হেড এবং ইমোজেন ফুকস।

 

এ রিপোর্ট কোন কিছু পরিবর্তন করবে?

জনাথন হেড:জাতিসংঘের এ রিপোর্টটি সাধারণভাবে বেশ শক্ত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের উপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে সেটির জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গণহত্যার জন্য দায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার দেশটির ভেতরে করা সম্ভব নয়।

সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে এর উদ্যোগ নিতে হবে। একথা উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।

এ প্রতিবেদনের পর মিয়ানমারের জেনারেলদের বিচারের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আরো জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারবে।

রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসব রিপোর্ট দিয়েছে সেগুলোকে বরাবরই খারিজ করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার।

কিন্তু জাতিসংঘের এ তদন্ত এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো হয়েছে।

তিনজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘে তদন্ত প্যানেল পরিচালনা করেছেন।

সেজন্য এ প্রতিবেদন জাতিসংঘের ভেতরে অনেকের সমর্থন পাবে এবং মিয়ানমারের পক্ষে সেটি খারিজ করে দেয় কঠিন হবে।

ইমোজেন ফুকস: জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেছেন, মিয়ানমারের এ ঘটনা বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো উচিত।

কিন্তু সেটি করতে হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।

এ ধরণের কোন উদ্যোগের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ভিন্নমত পোষণ করবে। তারা এটি চাইবে না।

ফলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো যাবে না।

তদন্তকারীরা পরামর্শ দিয়েছেন, রোয়ান্ডা এবং সাবেক ইউগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিচার যেভাবে হয়েছে সে রকম স্বাধীন একটি অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

এ ধরণের অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মাধ্যমেই গঠন করা যেতে পারে।

ফলে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো দেবার বিষয়টি এড়ানো সম্ভব হবে।

এ ধরণের একটি ট্রাইব্যুনাল যাতে কাজ করতে পারে সেজন্য মিয়ানমারকে সহায়তা করতে হবে যাতে অভিযুক্তদের আদালতে সোপর্দ করা যায়।

সার্বিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের দ্য হেগের ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তরের জন্য বহু বছর সময় লেগেছিল।

 

জাতিসংঘ কি তাদের কার্ড খেলে শেষ করেছে? এ ধরণের উদাহরণ আছে?

ইমোজেন ফুকস: গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সেরা প্রধানসহ ছয়জন শীর্ষ জেনারেলকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদন অনেক দূর এগিয়েছে।

সিরিয়ার যুদ্ধ নিয়ে অনেক তদন্ত হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের অপরাধীদের দীর্ঘ তালিকাও রয়েছে।

সে তালিকায় সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং সরকারের সিনিয়র ব্যক্তিরা রয়েছে। কিন্তু তাদের নাম কখনোই প্রকাশ্যে বলা হয়নি।

মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, সুনির্দিষ্টভাবে ছয় জেনারেলকে অভিযুক্ত করার মাধ্যমে তারা কিছু অর্জন করতে পারবেন।

এ রিপোর্ট প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সপ্তাহেই বৈঠক করবে এবং সে বৈঠকে তারা জাতিসংঘের তদন্তকারীদের বক্তব্য শুনবে।

ফেসবুক জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ স্থানীয় জেনারেলদের তারা `ঘৃণা এবং মিথ্যে তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ করেছে।

জাতিসংঘের রিপোর্টে যেসব জেনারেলদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

 

অং সান সু চি এবং অন্যদের দোষী সাব্যস্ত করা যাবে?

ইমোজেন ফুকস: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কিংবা অন্য কোন ধরণের ট্রাইব্যুনাল ছাড়া কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।

জাতিসংঘের প্যানেল শুধু তদন্ত করতে পারে, বিচার করতে পারে না।

তদন্তকারীরা যে ধরণের তথ্য-প্রমাণের কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে কোন না কোনভাবে একটা বিচার হবে। যদিও সে বিচার হতে অনেক বছর সময় লাগতে পারে।

জনাথন হেড: অং সান সু চি`র বিচারের সম্ভাবনা অনেক কম। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপর বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।

রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণের যে পরিকল্পনা সেনাবাহিনী করেছিল সেটি বেসামরিক সরকার জানতো না বলে এ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন থামানোর জন্য অং সান সু চি তাঁর নৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেননি।

তাছাড়া ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা দেয়া এবং স্বাধীন তদন্তকারীদের ঘটনাস্থলে যেতে না দেয়া এবং সেনাবাহিনীর অন্যায়কে অস্বীকার করার মাধ্যমে অং সান সু চি`র সরকার রাখাইন অঞ্চলে অপরাধ সংগঠনে ভূমিকা রেখেছে।

যদিও এ রিপোর্টের মূল কথা হচ্ছে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিচার। তবে অং সান সু চি`র জন্য জাতিসংঘ রিপোর্টের একটি প্রভাব থাকবে।

তিনি এখন এমন একটি দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন যেখানে জঘন্য মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তরাও রয়েছেন।

কারণ রাখাইন অঞ্চলে ঘটনা নিয়ে মিস সু চি বরাবরই সেনাবাহিনীর বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন।

ইমোজেন ফুকস: এ রিপোর্টের মাধ্যমে জাতিসংঘ হয়তো আশা করছে, এর মাধ্যমে অং সান সু চি বুঝতে পারবে যে তিনি যদি ক্ষমতায় থাকতে চান কিংবা সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চান, তাহলে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে তার অবশ্যই সমর্থন করা উচিত।

তাঁর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে এ তদন্তকে সমর্থন করা এবং সেনাবাহিনীর প্রধানকে পদত্যাগের আহবান জানানো।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

//এস এইচ এস//