ফখরুলকে যে বার্তা দিলেন খালেদা জিয়া
প্রকাশিত : ০৭:১২ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:৪৮ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৮ বুধবার
ফাইল ছবি
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বন্দিদশার কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তোলতে পারে নি বিএনপি। দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানও দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে লন্ডনে। এদিকে জোট-মহাজোট নিয়ে আলোচনা এক কদম আগায় তো, তিন কদম পেছায়। এমতাবস্থায় জাতীয় নির্বাচনও আসন্ন।
এই যখন অবস্থা তখন বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবি সামনে আনবে নাকি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যস্ত রাখবে-এসব নিয়ে দোলাচল চলছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি সহায়ক সরকারের যে দাবি গত ১০ বছর ধরে করে আসছে সেটি নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলেছে, নির্বাচনকালীন ছোট পরিসরে সরকার হবে, সেই সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকবে। তার মানে হলো নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশ নেওয়ার দরজা বন্ধ।
সেই সঙ্গে এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক তো বলেই দিয়েছেন যে, আগামী নির্বাচন তথা দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা হতে পারে, একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নয়।
এদিকে হাজার হাজার নেতাকর্মীর মামলার জালে আটকা। অনেকে বাড়িতে থাকতে পারছে না। এমতাবস্থায় কী করবে বিএনপি? নির্বাচনে যাবে না আবারও বয়কট করবে? দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তিরই বা কি হবে? তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে এই প্রশ্ন বহুদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। জবাব দিতে পারছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।
এই যখন অবস্থা তখন গত শনিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেখা করেছেন দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে। সেখানে দুই নেতার মধ্যে সোয়া ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে মির্জা ফখরুল যদিও দাবি করেন যে, তাদের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক আলাপ হয় নি। কিন্তু দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারপারসন মহাসচিবকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন বৈঠকে।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট ভাঙতে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্কতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
খালেদা-ফখরুল বৈঠকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের বিষয়টিও উঠে আসে। শিগগিরই এ মামলার রায় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রায়ে তারেক রহমানের সাজা হওয়ার আশঙ্কা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার নির্দেশে গ্রেনেড হামলার মামলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া দলের মহাসচিবকে বলেছেন, তার অনুপস্থিতিতে অতীতেও অনেকবার বিএনপিকে ভাঙতে চক্রান্ত হয়েছে। এবারও বিএনপিকে দুর্বল করতে নানা ভয়-ভীতি এবং লোভ-লালসা দেখিয়ে দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শুধু বিএনপি নয়, ২০ দলীয় জোটেও ভাঙন ধরানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে দল ও জোটের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে সরকার কিছুই করতে পারবে না।
সূত্র জানায়, দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসনের `বিশেষ নির্দেশনা` পাওয়ার পর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল রোববার দিনভর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। দফায় দফায় বৈঠক করেন দল, জোট ও বৃহত্তর জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে দলের চেয়ারপারসনের বার্তা পৌঁছে দেন। আবার গুরুত্বপূর্ণ কোনো কোনো নেতার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে নির্দেশনা জানিয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করেন। বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সম্পাদক মন্ডলীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, দল ও জোটকে ঐক্যবদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখার।
শনিবার মির্জা ফখরুল সাক্ষাৎকালে খালেদা জিয়াকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার রূপরেখার খসড়া এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিরিজ বৈঠকের সুপারিশগুলো জানান। চেয়ারপারসন এ সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্রুত বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার নির্দেশ দেন। ঐক্যের পথে যে কোনো বাধা-বিপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনাও দেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছোটখাটো দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থ না দেখে দেশের গণতন্ত্র, জনগণ ও মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বলেছেন, তফসিল ঘোষণার আগে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি মূল দলসহ সব সহযোগী সংগঠনগুলোর অসমাপ্ত কমিটিগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণার কথা তাকে অবহিত করেছেন মির্জা ফখরুল। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে নামার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী। তিনি সরকারের মনোভাব দেখে পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
পাশাপাশি আগামী একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন খালেদা জিয়া। দলের মহাসচিবকে তিনি বিএনপি, ২০ দলীয় জোট এবং সম্ভাব্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য জোটের যোগ্য ও জনপ্রিয় সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের খসড়া তালিকা প্রণয়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়ার পর মির্জা ফখরুল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করেন। সাক্ষাৎ শেষেও শনিবার তাদের অবহিত করেন তিনি। এর আগে সর্বশেষ ৬ এপ্রিল তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দলের মহাসচিব তাদের সংক্ষেপে সব কিছু জানিয়েছেন। মহাসচিবের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন তিনি।
সূত্র জানায়, দলের মহাসচিবকে খালেদা জিয়া মামলাগুলো পরিচালনার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশনার পর শনিবার রাতেই খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মহাসচিব।
/ এআর /