ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

নোট অব ডিসেন্টে যা লিখেছেন মাহবুব তালুকদার

প্রকাশিত : ০২:০৮ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন বিষয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভা বর্জন করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। একইসঙ্গে তিনি আরপিও সংশোধনের এই সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।

জানা গেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কমিশন সভা শুরু করে। নির্বাচন ভবনে সিইসির সভাকক্ষে ওই সভায় কমিশনের পাঁচ সদস্যের পাশাপাশি কমিশন সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সভা শুরুর আধা ঘন্টার মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সভা থেকে বেরিয়ে পঞ্চম তলায় নিজের কক্ষে চলে যান। পরে এক কর্মচারীর মাধ্যমে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ পাঠিয়ে দেন কমিশনের কাছে।

সেখানে তিনি লিখেছেন, আমি মনে করি, স্থানীয় নির্বাচনে ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ সমর্থন করি না। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি।

এই আপত্তির কারণ হিসেবে ইভিএম নিয়ে ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক বিরোধিতা’ এবং ‘দক্ষ জনবলের অভাব’ এর কথা বলা হয়েছে ওই নোট অব ডিসেন্টে।

তিনি লিখেছেন, আমি ধারণা করি, জনমত বা সর্বসম্মত রাজনৈতিক মতের বিরুদ্ধে ইভিএম ব্যবহৃত হলে তা নিয়ে আদালতে অসংখ্য মামলার সূত্রপাত হবে। অন্য কারণ ছাড়া কেবল ইভিএম ব্যবহারের কারণেই সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বর্তমান ইসির পক্ষে এ ঝুঁকি নেওয়া সঙ্গত হবে না।

যন্ত্রের অগ্রগতির এ যুগে ইভিএম ব্যবহারের ‘বিরোধী নন’ জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেছেন, স্বল্প সময়ে এতো বিশাল জনবলের প্রশিক্ষণের অপর্যাপ্ততা এবং ভোটারদের অজ্ঞতাপ্রসূত কারণে ইভিএম নিয়ে অনীহাও থাকবে।

সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচনে কিছু ‘বিশৃঙ্খলা’ এবং ইভিএম কেন্দ্র দখলের অভিযোগের কথাও নোট অব ডিসেন্টে তুলে ধরেছেন তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ইভিএম নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের অবস্থান ছিল পরস্পরবিরোধী। আর সিইসি প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হলেই কেবল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরও আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তিনি লিখেছেন, শুরুতে স্থানীয়ভাবে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার হয়েছিল। এজন্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ইভিএম কেনায় আমি ভিন্নমত পোষণ করেছিলাম। সম্প্রতি ৩৮২১ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ইভিএম কেনা কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন মনে জাগে।

মাহবুব তালুকদার বলছেন, পরিকল্পনা কমিশন এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করেনি। যে ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে বিনা টেন্ডারে কেনা হচ্ছে, তার কারিগরি বিষয় বুয়েট বা অনুরূপ কোনো সংস্থা থেকে যাচাই করা হয়নি। কারিগরি দিক থেকে এ যন্ত্র সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করা হয়নি।

গতবছর ফেব্রুয়ারিতে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত অন্তত তিনটি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

কমিশন সভা বর্জনের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মাহবুব তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এখন আমার অফিসে আছি। আপাতত এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।

তার একান্ত সচিব মুহাম্মদ এনাম উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, স্যার বিকাল ৩টায় এ বিষয়ে কথা বলবেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে থাকার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটল। গত রোববার কমিশনের ৩৫তম সভায় আরপিও সংশোধন নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। কিন্তু সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা মুলতবি করে আজকের জন্য দিন রাখা হয়।

প্রসঙ্গত, গত দুদিন আগে নির্বাচন কমিশন সচিব এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হবে। অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। এই নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার বিষয়ে ইসি চিন্তা ভাবনা করছে বলেও জানান তিনি। তার এই বক্তব্যের পর বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আপত্তি উঠে।  

/ এআর /