ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটা

প্রকাশিত : ০৯:১২ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৮ শুক্রবার

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নীতিমালা লঙ্ঘন করে কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে দুইশতাধিক ইটভাটা। অনুমোদনহীন এসব ইটভাটাগুলো দিনের পর দিন গ্রাস করে চলছে উর্বর আবাদি জমি । এতে ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন। ভাটার কাজে রেজিহেমশনবিহীন ট্রাক ব্যবহার হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

অভিযোগ উঠেছে যাচাই-বাছাই ছাড়াই এসব ইটভাটাগুলোকে ছাড়পত্র দিচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর। পরিবেশ নিধনকারী এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নিকট অতীতে অভিযান পরিচালনার খবর পাওয়া যায়নি । তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসেন বলছেন, গত ছয় মাস আগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা সরেজমিনে না দেখে রাজশাহীতে বসেই ছাড়পত্র দিচ্ছেন। যেখানে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে পরিবেশ নীতিমালার পরিপন্থী হচ্ছে কিনা মূলত সেটিও খোঁজ খবর নিচ্ছেনা পরিবেশ অধিদফতরের কর্তারা। জেলা পর্যায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস না থাকায় এ বিভাগে অরাজকতা চলছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা । পরিবেশ অধিদপতরের কার্যালয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেও দ্বায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। বেশির ভাগ ইটভাটা আমবাগান সংলগ্ন ফলে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরি ফল আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধভাবে অবাধে ব্যবসা করে যাচ্ছেন প্রভাবশালী ভাটা মালিকরা, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের শত শত একর ফসলি জমি।
শিবগঞ্জ উপজেলার মর্দনা তেতুলিয়া গ্রামে আব্দুস সালাম নামে এক প্রভাবশালী ক্ষমতার জোরে ভয়ভীতি দেখিয়ে আশপাশের লীজ নিয়েছেন । তিনি ফসলি কৃষি জমিতে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা । চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের সেতাউর মাওলানা ও তার ভাই নাইমুলসহ ৮/১০ জন মিলে ভাবানিপুর মৌজার আমবাগানের মধ্যে ভাটা নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছেন । এতে আশপাশের কৃষক ও জমির মালিকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে । সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বড় বড় আমগাছ কেটে ফেলা হচ্ছে ভাটা নির্মাণের উদ্দেশ্যে। চঁপাইনবাবগঞ্জ সদর , শিবগঞ্জ, নাচোল , গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটর পাঁচ উপজেলায় দুইশতাধিক ইটভাটা রয়েছে । সে হিসেবে প্রায় ১ হাজার একরের অধিক কৃষি জমি ইটভাটার দখলে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, পরিবেশ বিধিমাল -১৯৯৭, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০১ এবং শব্দ দূষণ বিধিমালা-২০০৬ এর তোয়াক্কা না করে নতুন নতুন ইট ভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য অবাধে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। আবাদি জমির টপ সয়েল ব্যবহারের জন্য কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। অনাবাদি দুই একর জমি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রতিটি ইট ভাটা পাঁচ একরেরও অধিক বেশি আবাদি উর্বর জমি ব্যবহার করছে। বিধিমালা অনুযায়ী ভাটার এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে আবাসিক বাড়ি, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এলজিইডির পাকা রাস্তা থাকলে সেখানে ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। এর ব্যত্যয় ঘটলে কৃষি বিভাগ ইটভাটার নির্ধারিত স্থানটি কৃষি জমি হিসেবে দাবি করলে সে ক্ষেত্রে ইটভাটা মালিক ভাটা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়কসহ গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা ব্যবহারে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কাঁচা রাস্তায় ভাটার কাজে নিয়োজিত যানবাহনগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় সাধারণ পথচারিদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, ইটভাটার বিষয়গুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে। এ বিষয়ে নালিশী ক্ষমতাও তাদের। তবে পরিবেশ অধিদফতর চাইলে আমরা যে কোন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অনিয়ম পেলে জরিমানা বা উচ্ছেদ করতে পারি। যে দপ্তর তাদের ছাড়পত্র বা নিবন্ধন দেয় সে বিষয়ে তারাই ভালো জানবে। পরিবেশ অধিদফতর না চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে উপজেলা প্রশাসনের তেমন কিছু করার নেই।

আরকে//