ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২০ ১৪৩১

পরমাণু হামলা ঠেকাতে তৈরি নয় যুক্তরাষ্ট্র!

প্রকাশিত : ১১:১২ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৮ শুক্রবার

উত্তর কোরিয়া বা পরমাণু অস্ত্রে শক্তিশালী অন্য কোনও দেশ আচমকা হাইড্রোজেন বা পরমাণু বোমা ফেললে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আমেরিকার একটি বড় অংশ। মৃত্যু হতে পারে লাখ লাখ মানুষের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন ওয়াশিংটন, ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও আলেকজান্দ্রিয়ার লাখ লাখ মানুষ।

বড় ধরনের পরমাণু হামলা ঠেকানো তো দূর অস্তই, বিস্ফোরণের পর পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্সও যথেষ্টই অপ্রতুল মার্কিন মুলুকে।

আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিজ অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন ও মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিওরিটি (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) দফতরের এক বিশেষ বৈঠকে, ওয়াশিংটনে গত সপ্তাহে এই রিপোর্ট দিয়েছেন মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে কী কী করণীয়, তা জানিয়ে আগামী ডিসেম্বরে তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে সবিস্তার রিপোর্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

‘নিউজ অ্যান্ড টেররিজম’ শীর্ষক সেই ফ্যাক্ট শিটে (রিপোর্ট) বলা হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বড় ধরনের পরমাণু হামলা ঠেকানোর আর কোনও প্রস্তুতি নেয়নি আমেরিকা। তার জন্য মার্কিন বাজেটে অর্থবরাদ্দ করা তো দূরের কথা, তা ৫০ শতাংশেরও বেশি কাটছাঁট করা হয়েছে।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিওরিটি দফতরের আয়োজনে ওই বৈঠকে আমন্ত্রিত বক্তা জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী অমর্ত্য চট্টোপাধ্যায় ও অরুণ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘আমেরিকার নজর এখন সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলায়। যারা বড়জোর ১ কিলো টন (১ হাজার টন) ওজনের পরমাণু বোমা বানাতে পারে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের হাতে যে ধরনের পরমাণু বোমা বানানোর প্রযুক্তি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকটির ওজন খুব কম হলে, হতে পারে ১৮০ কিলো টন। সেগুলো ফেলা হলে, তার জেরে যে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তা সামলানোর মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত আমেরিকার হাতে নেই।’

বৈঠকে প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ টেনের ভিনিমা ও আথেন্সের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী কাম ডালাস।

অমর্ত্য জানাচ্ছেন, যে ধরনের পরমাণু বোমার হামলা ঠেকানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখন মার্কিন মুলুকে, তা ওজনে খুবই হাল্কা। ওই বোমাগুলোকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় পরমাণু বোমা বলাও যায় না। আদতে এদের নাম- ‘ডার্টি বম্ব’ বা, ‘রেডিওলজিক্যাল ডিজপার্সাল ডিভাইস’ (আরডিডি)। এগুলো আকাশ থেকে কয়েকটি প্রচলিত (কনভেনশনাল) তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে দিতে পারে। তার বেশি ক্ষমতা নেই ওই ডার্টি বম্বের।

অরুণ শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘উত্তর কোরিয়ার মতো পরমাণু অস্ত্রে শক্তিশালী দেশগুলোর হাতে যে বোমাগুলো রয়েছে সেগুলো হাইড্রোজেন বা খুব শক্তিশালী পরমাণু বোমা। তা পড়লে ক্ষয়ক্ষতি হবে অনেক বেশি পরিমাণে। আর তার ক্ষত থেকে যাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। সেই ক্ষয়ক্ষতি সামলানোর মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই আমেরিকার।’

তবে বিজ্ঞানীদের একাংশ এখনই হতাশ হয়ে পড়তে রাজি নন। তাদের বক্তব্য, সোভিয়েতের পতনের পর পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের আন্তর্জাতিক চাপে এ ব্যাপারে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেটে অনেক কাটছাঁট হয়েছে ঠিকই, তবে বড় পরমাণু হামলা মোকাবিলার ব্যবস্থা আমেরিকায় নেই, এটাও বোধহয় পুরোপুরি ঠিক নয়। সেই ব্যবস্থা হয়তো পর্যাপ্ত নয়। তাই আগামী ডিসেম্বরে জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা কী রিপোর্ট দেন, এখন তারই অপেক্ষায় রয়েছেন বিজ্ঞানী মহল। এবং অবশ্যই অপেক্ষায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রসাসনও।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//