কেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্য বন্ধ করে দিলো যুক্তরাষ্ট্র?
প্রকাশিত : ১০:২৪ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দেখাশোনার জন্য ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর একটি সাহায্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে জাতিসংঘ। প্রতিষ্ঠানের নাম ইউনাইটেড নেশন্স রিলিফ এন্ড ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডাব্লিউএ)।
বর্তমানে গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবাননে যে প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছে, তাদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আরও নানা ধরণের সামাজিক সেবামূলক কাজে সহায়তা দেয় তারা।
বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান যোগানদাতা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র একাই ইউএনআরডাব্লিউকে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন গত বছর এই সাহায্য প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। আর এবার যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিল।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ত্রাণ সংস্থায় মারাত্মক `গলদ` আছে। একই কথা ইসরায়েল বহুদিন ধরেই বলে আসছে। কিন্তু কথিত এই `গলদ` ঠিক কোথায়?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এতো সাহায্য করে কিন্তু বদলে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে কোনো `সম্মান` বা `প্রতিদান` পায় না।
এ বছরের গোড়ার দিকে তিনি হুঁশিয়ার করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে মীমাংসায় রাজী না হলে, তিনি ফিলিস্তিনিদের সাহায্য বন্ধ করে দেবেন। পর্যবেক্ষকদের মতে- সমস্যা আরও গভীরে।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলে ফেলে আসা বাস্তুভিটায় ফেরত যাওয়ার অধিকারকে সমর্থন করে, যেটি নিয়ে ইসরায়েল বরাবরই ক্ষুব্ধ।
ইসরায়েলের সেই অবস্থানের সঙ্গে এখন গলা মিলিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এ সপ্তাহের গোড়ায় জাতিসংঘে মার্কিন দূত নিকি হেলি বলেন, ইউএনআরডাব্লিউএ সব সময় ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে বলে। তিনি খোলাখুলি বলেন, এই সংস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন।
"তাকিয়ে দেখুন অসংখ্য শরণার্থী ক্রমাগত সাহায্য নিয়ে চলেছে, কিন্তু আরও যেটা লক্ষণীয় তা হলো এই ফিলিস্তিনিরাই আবার দিন-রাত আমেরিকার সমালোচনা করছে।"
ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলে ফেলে আসা বাস্তুভিটায় ফেরত যাওয়ার অধিকারকে সমর্থন করে বলে ইউএনআরডাব্লিউএ`র ব্যাপারে ইসরায়েল সবসময় সমালোচনা করে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু অনেকবারই এই সংস্থায় অনুদান কমিয়ে দেওয়ার আহ্বান করেছেন। তিনি এমন প্রস্তাবও করেছেন ইউএনআরডাব্লিউএ`র ভূমিকা জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হাতে তুলে দেওয়া হোক।
তার মতে- ইউএনআরডাব্লিউএ ফিলিস্তিনি সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে করা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এক মারাত্মক আঘাত।
কট্টরপন্থী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি সংকটকে আরও গুরুতর করে তুললো।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেস এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গুটেরেস এই ত্রাণ সংস্থার তহবিলে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা পূরণে অন্য দেশগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, তারা তাদের অনুদান বাড়িয়ে দেবেন। আর তাদেরকে মারাত্মক `গলদে` ভরা একটি সংস্থা বলে যে সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্র করেছে, তাকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইউএনআরডাব্লিউএ।
সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস গানেস বলেছেন, "ইউএনআরডাব্লিউএ`র স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জরুরি সাহায্যের কর্মসূচিকে `শোধরানোর অতীত গলদপূর্ণ` বলে যে বর্ণনা করা হয়েছে আমরা তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এসব কর্মসূচি মধ্যপ্রাচ্যে মানব উন্নয়নে অন্যতম সফল কর্মসূচি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এজন্য এই সংস্থাকে প্রশংসা করেছে।"
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।
এমএইচ/ এসএইচ/