ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

অ্যাকর্ড থেকে বাদ পড়ল আরো ৭ কারখানা

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ০৩:০৬ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার

দেশের পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তা মূল্যায়নে নিয়োজিত ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা জোট অ্যাকর্ডের তালিকা থেকে বাদ পড়লো আরো ৭টি কারখানা ইউনিট। সংস্কার কার্যক্রমে অনগ্রসরতার কারণে জোটটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া কারখানার সংখ্যা এ নিয়ে ১৭১টিতে দাঁড়িয়েছে বলে অ্যাকর্ড সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১৫ ও ১৯ তারিখে অ্যাকর্ড সাতটি কারখানা ইউনিটের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে। কারখানাগুলো হলো— সুপার সিনথেটিকস, সুপার থ্রেড লিমিটেড, ভিজুয়াল ইকো স্টাইলওয়্যার লিমিটেড ও এসবি নিটেক্স, সুপার নিটিং অ্যান্ড ডায়িং মিলস লিমিটেড, গ্রিনল্যান্ড অ্যাপারেল লিমিটেড, ঈপ্সিতা গার্মেন্টস লিমিটেড।

অ্যাকর্ডের প্রধান নির্বাহী রব ওয়েজ সম্প্রতি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটেনি। আমাদের পরিদর্শনে কোন কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত না হলে সে কারখানার জন্য আমাদের সম্পর্ক ছিন্নের কথা ভাবতে হয়। আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করাটা বড় করে দেখি না। দেখি কারখানাটা যেন কর্ম উপযোগি ও  শ্রমিকবান্ধব হয়ে উঠে। কিন্তু যারা কারখানাকে কর্ম উপযোগী না করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেই হয়।

সংস্কারের প্রমাণ দিতে ব্যর্থতা, মূল্যায়নে অসহযোগিতা, কারখানা নকশার ঘাটতি, শ্রমিকদের স্বার্থে কারখানার নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা, ত্রুটিযুক্ত কারখানা খালি করায় অনীহা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি কারণে কারখানার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয় অ্যাকর্ড।

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী করা হয় কারখানার নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাকে। এসব কারখানার সঙ্গে লেনদেনে না জড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের প্রতি সুপারিশ জানানো হয় জোটের পক্ষ থেকে।

জানতে চাইলে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, অ্যাকর্ড একদিকে কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। অন্যদিকে তাদের কার্যক্রমের মেয়াদ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করে। পাশাপাশি আমাদের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু নিজেরা পোশাকের দাম বাড়ানোর কোনো পরামর্শ ক্রেতাদের দেয় না। বলা যায়, সামগ্রিকভাবে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্দ। তাই আমি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাই না।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ২০১৩ সালের মে থেকে বাংলাদেশে পোশাক খাতের উন্নয়নে সংস্কারকাজ তদারক করছে অ্যাকর্ড। বাংলাদেশের কারখানা থেকে অ্যাকর্ডের সদস্য ক্রেতারা পোশাক আমদানি করে, এমন ২ হাজার ৯৬টি কারখানা ইউনিটকে প্রাথমিক পরিদর্শনের আওতায় নেয়া হয়। প্রাথমিক পরিদর্শনে কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নিনিরাপত্তা ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত ৮৬ হাজার ৭৮৯টি ত্রুটি শনাক্ত হয়। অ্যাকর্ডের তদারকিতে এসব ত্রুটির ৮৪ শতাংশ এরই মধ্যে সংশোধন করা হয়েছে।

অ্যাকর্ডের নতুন করে ৭৪টি কারখানা ইউনিট পরিদর্শনের কথা রয়েছে। ৪৯টিকে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ৮৮টি কারখানা। বিদ্যমান অবস্থান থেকে স্থানান্তর করা প্রয়োজন, এমন ৫৮টি কারখানা ইউনিট এখন আর অ্যাকর্ডের আওতায় নেই।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১০৪টি গ্রুপের মোট ১৭১টি কারখানা ইউনিট অ্যাকর্ডের টার্মিনেটেড তালিকায় যুক্ত হলো। এর মধ্যে গত বছর সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে ৬১টি কারখানা ইউনিটের। আর চলতি বছরের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় আট মাসে অ্যাকর্ডের টার্মিনেটেড ঘোষিত কারখানা ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭।

এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, অ্যাকর্ড পোশাক শিল্প মালিকদের কারখানা কমপ্লায়েন্স করা সহ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে তাগিদ দেয়। মালিকরা এ কাজে ব্যর্থ হলেই অ্যাকর্ড কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এখন অ্যাকর্ড ছিন্ন কারখানার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তার মানে হচ্ছে কারখানাগুলোতে কমপ্লায়েন্সের ঘাটতি আছে। তবে এ অভিযোগও আছে যে অ্যাকর্ড কোন কোন ক্ষেত্রে অহেতুক কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। যা মালিকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অ্যাকর্ড ও  মালিকদের গাফিলতির দোলাচলে বরাবরই  শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আরক// এআর