গর্ভাবস্থায় যত কুসংস্কার
প্রকাশিত : ০৪:৫৫ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার
নারীর জীবনে গর্ভাবস্থা যে খুব স্পর্ষকাতর সময় তাতে সন্দেহ নেই। তবে এ সময়কে পুঁজি করে গর্ভবতী মায়ের জীবনে চাপিয়ে দেওয়া হয় নানাবিধ কুসংস্কার। যা নারীর জীবনকে করে তো আরো কঠিন। আসুন জেনে নেই এমন কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে।
১) গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা ঠিক নয়: অনেকের ধারণা গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা করলে সঠিক সময়ের আগেই প্রসব বেদনা শুরু হবে। আসলে তা ঠিক নয়। বরং হবু মা’দের দিনে ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ব্যায়াম করা উচিত। এতে যেমন তাদের প্রসব সহজ হয় তেমনই প্রসবের পর সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগে না।
২) গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ করা বিপজ্জনক: গর্ভাবস্থার তিন থেকে ছয় মাসের মাঝে ভ্রমণ করতে বলেন ডাক্তাররা, কারণ এ সময়ে শারীরিক কষ্ট কম হয়, মর্নিং সিকনেস বা বমি ভাবটাও কমে আসে। ভ্রমণের সময়সীমা ৫ ঘণ্টার বেশি হলে হাঁটাচলা এবং বেশি করে পানি পান করতে বলা হয়। এছাড়া সাথে করে আপনার ম্যাটার্নিটি রেকর্ড নিয়ে নিন এবং যেখানে যাচ্ছেন সেখানের হাসপাতালের খোঁজখবর নিয়ে রাখুন।
৩) পানি ভাঙা মানেই বিপদ: প্রসব বেদনা ওঠার আগে পানি ভাঙা বিপজ্জনক নয় বরং সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। তবে যদি পানি ভাঙার পর সবুজ বা বাদামী তরল দেখা যায় তবে তা খারাপ লক্ষণ এবং দ্রুত সেই নারীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত।
৪) ইনডাকশনের পর অবশ্যই সিজার করতে হবে: সিজারিয়ান বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত। ইনডাকশন হলো সেই পদ্ধতি যেখানে মায়ের প্রসব বেদনা ওঠার অপেক্ষা না করে কৃত্রিমভাবে প্রসবের প্রক্রিয়া শুরু করানো হয়। ইনডাকশন করানো হলেই যে সিজার করতে হবে তা ঠিক নয় বরং এভাবেই নরমাল ডেলিভারি হতে পারে।
৫) একবার সিজার করলে বারবার সিজার করতে হবে: এ ধারণাটি প্রচলিত যে একবার সিজার করে সন্তান হলে এরপর প্রতিবারই সিজার করতে হবে। কিন্তু তা ঠিক নয়। সিজার করার পর আবার সন্তান নিতে চাইলে নরমাল ডেলিভারি করাও সম্ভব। এতে মা ও শিশু উভয়েই শারীরিক কিছু সুবিধা পায়।
৬) মা ও শিশুর জন্য সিজারিয়ান বেশি নিরাপদ: প্রচলিত এই ধারনাটি ভুল। বরং সিজারিয়ানের ক্ষেত্রেই মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি থাকে। মায়ের রক্তক্ষরণ, মুত্রথলি বা অন্ত্রে ক্ষত এমনকি দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার শঙ্কা থাকে। সন্তানেরও বেশকিছু সমস্যা দেখা দেয় যেমন ফুসফুসের সমস্যা, ব্রেস্টফিডিং করতে দেরি হওয়া, পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস, ওবেসিটি এবং অ্যালার্জির ঝুঁকি।
৭) ইনস্ট্রুমেন্টাল ডেলিভারি নিরাপদ নয়: নরমাল ডেলিভারি সহজ করতে অনেক সময়ে ফরসেপস ও ভ্যাকুয়ামের সাহায্য নেওয়া হয়, একে ইনস্ট্রুমেন্টাল ডেলিভারি বলা হয়। দক্ষ চিকিৎসকের কাছে গেলে এ ধরনের প্রসব নিরাপদ, এতে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
৮) গলায় নাড়ি পেঁচিয়ে গেলে সিজারিয়ান করতে হয়: প্রসবের আগে গর্ভের সন্তানের গলায় নাড়ি পেঁচিয়ে যাওয়াটাকে খারাপ লক্ষণ ধরে নেওয়া হয় এবং এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই সিজারিয়ান করতে হবে বলে ধরা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই নাড়ি অনেক আলগা থাকে এবং সন্তানের তেমন ক্ষতি হয় না। এভাবে প্রাকৃতিক প্রসব করানো সম্ভব। তবে অবশ্যই গর্ভবতীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
সূত্র- এনডিটিভি
আরকে//