ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

রাজশাহীতে আশ্রয়ণের প্রকল্পের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ!

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:৩৭ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার

১০ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে মিলবে সরকারি এক লক্ষ টাকা। এমনই প্রলোভন দেখিয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রথমে টাকা দেবার কথা বললেও এখন তাদের ঘর করে দিচ্ছে। এরই মধ্যে কারো কারো আঙ্গিনায় শুরু হয়েছে ঘর নির্মানেরও কাজ।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ বাস্তবায়নে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। আর ঘর পাওয়া পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে এক লাখ টাকা, এমনই প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের হাতে দুই দফায় সাত হাজার ৬০০ টাকা তুলে দেন পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের মোসাজ্জেল হকের স্ত্রী চাঁনবানু।

পরে তাকে জানানো হয় টাকা নয়, তার জমিতেই করে দেওয়া হবে একটি ঘর। ইতোমধ্যেই তার ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

চাঁনবানু জানান,স্থানীয় ৯নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও ৭নং ওয়ার্ডের মাহবুব হোসেন ঘর করার জন্য এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে তার নাম লিখে নেন। এরপর তারা ১০ হাজার টাকা চান। এই সময় চার হাজার ৬০০ টাকা তার বাড়িতেই ছিল। আর তিন হাজার টাকা ধার করে নিয়ে এসে তাদের সাত হাজার ৬০০ টাকা দিয়েছি। বাকি দুই হাজার ৪০০ টাকা দিতে না পারায় তারা কয়েক বার অপমান করেছেন বলে জানান এই নারী জানান।

চাঁনবানুর মত একই অবস্থা গ্রামের আরও অনেকের। পাশেই দেখা গেলো, পরপর কয়েকটি বাড়ির আঙ্গিনায় চলছে ঘর নির্মাণের কাজ। কারও কারও ঘর উঠছে বসতবাড়ির আঙ্গিনায়। এই ঘর অনেকের কাছেই অপ্রয়োজনীয় বলছেন তারা।

ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের সানাউল্লাহ স্ত্রী লাইলী বেগম জানান, তার ঘর আছে। যেটি অর্থ অভাবে সংস্কার করতে পারছি না। সরকার ঘর করার জন্য এক লাখ টাকা করে দেবে বলে তার কাছ থেকে ১০ হাজার ৬০০ টাকা নিয়েছেন স্থানীয় মেম্বার। মনে করেছিলাম সে টাকা দিয়ে বাড়ি সংস্কার করবো। কিন্তু পরে জানতে পারলাম সরকার থেকে ঘর করে দেবে। তার বাড়ির আগিনায় একটি ঘর করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

একইভাবে ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের মৃত তসলেমের স্ত্রী সুকজানের কাছে ৯ হাজার ৬০০, তারিকুলের কাছে ১০ হাজার ৬০০, মৃত রঞ্জুর স্ত্রী জুতির কাছ থেকে পাঁচ হাজার, বাবর উদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে ১০ হাজার ৬০০,পশ্চিম জামিরার মৃত শাহীদুলের স্ত্রী রানীর কাছ থেকে ১১ হাজার, সাইফুল ইসলামের স্ত্রী হিরা বেগমের কাছ থেকে ১১ হাজার, আব্দুল কুদ্দুসের কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা বরাদ্দ নিয়ে আসার জন্য কাগজপত্র তৈরি ও কর্মকর্তাদের দেওয়ার নাম করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা এসব অর্থ নিয়েছে বলে  জানিয়েছেন তারা।

বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বদি বলেন, বেলপুকুর ইউনিয়নে বরাদ্দ এসেছে ১৮৮টি ঘর।এর তালিকা তৈরি করেছেন ৯নম্বর ওয়ার্ডের  ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও ৭নং ওয়ার্ডের মাহবুব হোসেন। তারাই তালিকা জমা দিয়েছেন। সে তালিকা আমাকে তারা দেখায়নি। আমিও শুনেছি, প্রায় সবার কাছ থেকে এভাবে গড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছে তারা।

তবে ঘর দিয়ে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহাবুল ইসলাম বলেন,আমরা শুধু তালিকা প্রস্তুত করে স্থানীয় এমপির কাছে দিয়েছি।এমপি সাহেব ডিও লেটার দিয়ে বরাদ্দ নিয়ে এসেছেন।

৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন,উপকারভোগিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। বিরোধী পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ ও যার কুড়ে ঘর আছে তার ঘর নির্মাণ’ এই দুই ক্যাটাগরিতে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৩০৪টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে বেলপুকুর ইউনিয়নে ১৮৮টি, বানেসর ইউনিয়নে ৫৫টি ও জিউপাড়া ইউনিয়নে বরাদ্দ আসবে ৬১টি ঘর। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য একলাখ টাকা করে বরাদ্দ এসেছে।গত ১১ জুন প্রকল্প পরিচালক এ বরাদ্দ অনুমোদন করেন। ইতোমধ্যেই এসব ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, উপকারভোগি দুঃস্থদের কাছ থেকে ঘর অথবা টাকা দেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই ধরণের কয়েকটি অভিযোগ তার কাছে এসেছে।বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে জানান তিনি।

কেআই/  এসএইচ/