নাইজেরিয়ার যে সম্প্রদায়ে টাকা দিয়ে বউ কেনা যায়
প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
সভ্যতার বিবর্তনে পৃথিবী এগিয়ে গেলেও এখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে নাইজেরিয়ার একটি সম্প্রদায়। যেখানে দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের শিশুদের টাকার বিনিময়ে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের নামে কিনে নেয় প্রভাবশালীরা।
নাইজেরিয়ার সর্বদক্ষিণের ক্রস রিভার রাজ্যের বেশেরে সম্প্রদায়ে এই বিয়ের প্রচলন। সেখানে মানি ম্যারেজ বা অর্থের বিনিময়ে অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ের নামে বিক্রি করে দেয়া একটি প্রচলিত প্রথা। শুধু বেশেরে-ই নয়, দেশটির আরও কয়েকটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও এ ধরণের বিতর্কিত প্রথার চল রয়েছে।
যেখানে বিক্রি হওয়া মেয়েটির না থাকে কোন স্বাধীনতা বা শিক্ষা/চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ। স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
বেশেরে সম্প্রদায়ে মূলত দুই ধরণের বিয়ে রয়েছে। একটি হল লাভ ম্যারেজ বা ভালবাসার বিয়ে এবং অপরটি এই মানি ম্যারেজ।
লাভ ম্যারেজে স্ত্রীর জন্য কোনো পণ দিতে হয় না। নববধূ স্বাধীনভাবে বাবার বাড়ি আসতে যেতে পারে এবং তার ঘরে যে সন্তান জন্ম নেবে সেটা মায়ের পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।
দুর্ভাগ্যবশত বেশেরের বেশিরভাগ গ্রাম প্রধানকেই মানি ওয়াইফ রাখতে দেখা যায়। কিন্তু মানি ম্যারেজে কম বয়সী মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়ায় তারা তাদের স্বামীর পরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এমনটাই জানান স্থানীয় মিশনারি ও শিশু অধিকার আন্দোলনকারী পস্তোর রিচার্ড।
তিনি বলেন, একজন মানি ওম্যানের কোন সম্মান থাকে না। তাদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি নেই, তাদেরকে ঠিকঠাক খেতেও দেওয়া হয় না। সে সবার উচ্ছিষ্ট খায়। তারা শিশুশ্রম থেকে শুরু করে অমানবিক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। অনেকে অন্ত:সত্ত্বা হলেও মায়ের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পায় না।
বেশেরে সম্প্রদায়েরই একজন সদস্য মনিকা। তিনি থাকেন গাছপালা বেষ্টিত একটি এলাকায় যার চারপাশ উঁচু পাহাড় আর সবুজের গালিচায় ছাওয়া।
তবে সেই সুন্দরের ছোঁয়া মনিকার পরিবারে নেই। তিনি তার দুই নাতনিকে খুব ছোট থাকতেই মানি ম্যারেজের জন্য বিক্রি করে দিয়েছেন।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পরিবারকে জুজু নামের অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে মোটা অংকের অর্থ দরকার ছিল। আর এজন্যই তিনি নাতনিদের বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবে এক বছর পর সেই সিদ্ধান্তের জন্য ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছেন মনিকা।
তার নাতনি হ্যাপিনেসের এখন বয়স ১৫ বছর। গত বছর সে তার মানি ম্যারেজ থেকে পালিয়ে এসেছে। হ্যাপিনেস জানান, ওই লোকটার এতোই বয়স যে তার নাতি নাতনির ঘরেও সন্তান রয়েছে। লোকটা প্রায়ই আমাকে মারত আর বলতো, আমাকে যদি সে পিটিয়ে মেরেও ফেলে তাকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। আমাকে মেরেও ফেললেও তার কিছু হবে না। কারণ আমি তার মানি ওয়াইফ।
ওই ঘটনার কারণে মনিকার সঙ্গে তার দুই মেয়ে ও দুই নাতনির সম্পর্ক আজও স্বাভাবিক হয়নি। এখনো দাদীর প্রতি তীব্র ক্ষোভের কথা জানান হ্যাপিনেস।
আমি আমার দাদিকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছি। সেখানে আমি লিখেছি যদি আমি মারা যাই এবং সে যদি আমার শেষকৃত্যে আসে, বাইকে করে। তাহলে একটা দুর্ঘটনায় তার হাত পা ভেঙ্গে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যেদিন আমি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে এলাম, সেদিন তাকে আমি বলেছি, কোনোদিন আমি এতোটাই রেগে যাব যে আমি একটা ছুরি নিয়ে তাকে খুন করে ফেলতে পারি।
মানি ওয়াইফ রাখা সামাজিক মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়ানোয় আর এই প্রথা বিলুপ্তির কোন আভাস দেখা যাচ্ছে না। তবে এই সম্প্রদায়ের প্রধান চিভসামদে চিলের দাবি, এখন মানি ওয়াইফ প্রথার কোনো অস্তিত্ব নেই।
যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের কাউকে মানি ওয়াইফ হিসেবে বিয়ে করা যায় না। তিনি বলেন, এখনও অনেক মানুষ মনে করে যে বেশেরে সম্প্রদায়ে এখনও মানি ম্যারিজ হয়ে থাকে। কিন্তু এখন আর এসব হয় না। এটা নব্বই দশকের শুরুর দিকেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
তবে বাস্তব চিত্র পুরোই উল্টো। দুর্ভাগ্যবশত বেশেরের বেশিরভাগ গ্রাম প্রধানকেই মানি ওয়াইফ রাখতে দেখা যায়।
২০০৯ সালেই নাইজেরিয়া থেকে মানি ম্যারেজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলেও দায়ীদের কাউকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। এ ধরণের প্রথাকে নিশ্চিহ্ন করতে পাস্তর রিচার্ডের মতো আরও অনেক আন্দোলনকারী কাজ করে যাচ্ছে।
তবে এখনও মানি ওয়াইফ রাখা সামাজিক মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়ানোয় আর এই প্রথা বিলুপ্তির কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না।
/ এআর /