মামুনের বর্ণাঢ্য জীবন
প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০২:২২ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার
মামুনুর রশিদ জন্মেছিলেন নড়াইলের অজপাড়া গা-তেলপাড়াতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে নিজেকে ক্রমেই প্রতিষ্ঠা করছিলেন সাংবাদিকতার জগতে এক উদীয়মান নক্ষত্র হিসেবে। সদ্য ডানা মেলা পাখি যেমন রঙ্গিন আকাশে লাফিয়ে বেড়ায়, তেমনি সাংবাদিকতায় নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো করে গড়ে তুলছিলেন তরুণ এ সাংবাদিক।
তবে বিধাতার অমোঘ বিধানে জীবনের মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ কিংবা গোধূলি না আসতেই কালের স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেল একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মামুনুর রশিদকে। তার এই অকালে চলে যাওয়া কিছুতেই যেন মানতে পারছেন না তার দীর্ঘদিনের সহপাঠী, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, গুণগ্রাহী ও বন্ধুপরিজন।
দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি মামুনুর রশিদের। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরই জনকণ্ঠ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মামুন। ২০০৮ সালে সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ করা মামুনের কর্মজীবনের প্রথম দিকে সাধারণ বিটে কাজ করলেও, খুব অল্পদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, সচিবালয়সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিটের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। জনকণ্ঠে এক বছর থাকার পরই যোগ দেন জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল-বাংলা ভিশনে।
দীর্ঘ ৫ বছর বাংলাভিশনে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এসময় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিট প্রধানমন্ত্রী বিট, রাষ্ট্রপতি বিট, পররাষ্ট্র বিট, ভিভিআইপি বিট এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিটে কৃতীত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপরই সিনিয়ন রিপোর্টার যোগ দেন এশিয়ান টেলিভিশনে।
এর কিছুদিন পরই দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল-একুশে টেলিভিশনে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন মামুনুর রশিদ। একুশে টেলিভিশনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছিলেন মামুন। মামুন স্বপ্ন দেখতেন নিজেকে একদিন সাংবাদিকতার দিকপাল হিসেবে গড়ে তুলবেন। দেশের সংবাদ ও সাংবাদিতার ক্ষেত্রকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ারও স্বপ্ন দেখতেন প্রয়াত গুণী এই সাংবাদিক।
নটরডেম কলেজ থেকে ২০০৩ সালে মানবিক বিভাগ থেকে কৃতীত্বের সঙ্গে এইসএসসি পাশ করেন মামুন। এরপরই ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। সেখান থেকে ২০০৭ সালে স্নাতক ও ২০০৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর একই বছর যোগ দেন দৈনিক জনকণ্ঠে।
মামুন বেড়ে উঠেছেন নড়াইলের লোহাগারা উপজেলার তেলকারা গ্রামে। তিনি মরহুম শেখ আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তার মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। দুই ভাই-দুই বোনের মধ্যে মামুন ছিলেন সবার ছোটো। গ্রামের দুরন্তপনা জীবনে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ও খেলাধূলায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি। এরপরই ছেলের উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করে, তাকে নটরডেম কলেজে ভর্তি করে দেয় তার মা-বাবা। সেখান থেকেই সাংবাদিকতার জগতে জ্বলে উঠার লক্ষ্যণ দেখা দেয় তার মধ্যে। লেখালেখিরও হাঁতেখড়ি হয় ওই ইন্টারমিডিয়েট জীবন থেকেই। এরপরই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে অনন্য উচ্চতায় এক উদীয়মান তারা। আর আজ সেই জাজ্জ্বল্যমাণ আকাশ থেকে খসে পড়া একখণ্ড ধূমকেতু, যা কেবলই স্মৃতি। স্মৃতির অম্লানে চিরভাস্মর হয়ে থাকবে আমাদের মামুন।
এমজে/