সু চিকে নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেন দণ্ডিত দুই সাংবাদিকের স্ত্রীরা
প্রকাশিত : ০৮:৩১ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার
মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা নিয়ে খবর প্রকাশ করার কারণে দণ্ডিত রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের স্ত্রী অং সান সুচিকে নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। নিজেদের পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তারা সু চিকে দায়ী করেন।
প্রতিবেদক ওয়া লোনের স্ত্রী প্যান ই মোন বলেন, যখন আমি ইংরেজি বুঝতাম না, তখন অং সান সু চি বক্তব্য দিতেন। আমি সব সময় তাদের বক্তব্য শুনতাম। কারণ আমি জানতাম, দেশের নেত্রী কথা বলছেন।
দেশটির ইয়াঙ্গুনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে ভালোবাসতাম। তাকে খুবই সম্মান করতাম। কিন্তু তিনি বলেছেন, আমার স্বামী প্রতিবেদক না। কারণ তারা দেশের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন। তার জবাবে আমি বিপর্যস্ত বোধ করছি।’
প্যান ই মোন বলেন, ‘আমাদের দেশের নেত্রী মামলাটি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত নন। আমাদের দুই পরিবারই তাকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু যাকে এত শ্রদ্ধা করতাম, তিনি যখন আমাদের ভুলভাবে তুলে ধরেন, তখন আমরা খুবই অনুশোচনা বোধ করি। দুই মাস আগে জন্ম নেওয়া আমাদের কন্যা তার বাবার আদর পাচ্ছে না। যখন আমার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়,তখন আমি ভেবেছিলাম, সন্তান প্রসবের আগেই তিনি ছাড়া পাবেন। কিন্তু আমার সন্তান ভুমিষ্ঠ হলেও স্বামী মুক্তি পায়নি। আমার জোরালো বিশ্বাস ছিল, আমার কন্যা তার কারামুক্ত বাবাকে দ্রুতই দেখতে পাবে।কিন্তু কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণার পর আমার সব আশা ধুলোয় মিশে গেছে।’
জাপানিজ সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে-কে গত জুনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুচি বলেছেন, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় লঙ্ঘনের দায়ে দুই প্রতিবেদককে আটক করা হয়েছে।
রাখাইনের সেনা অভিযানের সময় ইনদিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলার একটি ঘটনা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ও (২৮)।
নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসা এ দুই সাংবাদিক মামলার বিচারের সময় আদালতকে বলেছিলেন, গত ১২ ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের এক রেস্তোরাঁয় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে দুই পুলিশ সদস্য তাদের হাতে কিছু মোড়ানো কাগজ ধরিয়ে দেন এবং তার পর পরই সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
দুই সাংবাদিকের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ওয়া লোন ও কিয়াও সো নির্দোষ, তাদের মুক্তি দিয়ে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি বলেছেন, রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে সত্য বলার অপরাধে। তাদের মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরও সোচ্চার ভূমিকা নেবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার জবাবে সেনাবাহিনী ওই নির্মম দমন অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘ বলছে, সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই দমন-পীড়নের মুখে গতবছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
কেআই/এসি