চলে গেলেন কোচ কায়সার জাহিদ আহমেদ
প্রকাশিত : ০৯:৩৩ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
বান্দরবানের লামায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বাংলাদেশ জাতীয় হ্যান্ডবল দলের সহকারী কোচ কায়সার জাহিদ আহমেদ (৪০)। বৃহস্পতিবার লামা সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত এক টুর্নামেন্ট শেষে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের নারী হ্যান্ডবল টিমকে নিয়ে ফেরার পথে গজালিয়া ডিসি রোডে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। রাস্তার উল্টোপাশে থাকা একটি গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে পাহাড়ি বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায় তাদের জিপটি।
আহতদের দ্রুত প্রথমে লামা সদর উপজেলা হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান কোচ জাহিদ আহমেদ।
সেদিন রাতেই চট্টগ্রাম থেকে লাশ নিয়ে আসা হয় ঢাকার বনশ্রীতে তার মা-বাবার কাছে। সেখানেই বাদ জুমা স্থানীয় একটি মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে ঢাকার অদূরে গ্রামের বাড়ি বেরাইদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
কোচ কায়সার জাহিদ আহমেদ ছিলেন- বাংলাদেশের একজন কৃতি খো খো ও হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। খো খো-র প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনও ছিলেন তিনি। ক্যাপ্টেন ও খেলোয়াড় হিসেবে খো-খো ও হ্যান্ডবলের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন কায়সার জাহিদ!
পেশা জীবনে তিনি ছিলেন কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজের ডেপুটি স্পোর্টস লিডার এবং খো খো ও হ্যান্ডবলের হেড কোচ।
উল্লেখ্য, জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অসাধারণ নৈপূণ্যের জন্যে বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়নে অবস্থিত এ স্কুলটি ক্রীড়াক্ষেত্রে ‘দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ মনোনীত হয়েছে ২০১৭ এবং ২০১৮- পর পর দুবছর। আর এ সাফল্যের নেপথ্য নিয়ামক ছিলেন কোচ কায়সার জাহিদ আহমেদ।
তার যোগ্য নেতৃত্বেই কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের খো খো ও হ্যান্ডবল টিম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজ একটি পরিচিত নাম। কাদামাটি থেকে গড়ে নেবার অসাধারণ ক্ষমতা তার ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯ সাল থেকে তার হাত ধরেই একের পর এক উঠে এসেছে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের প্রতিভাবান সব হ্যান্ডবল ও খো খো খেলোয়াড়! যাদের অনেকেই আজ জাতীয় পর্যায়েও খেলছেন সুনামের সঙ্গে।
সাম্প্রতিক প্রিমিয়ার লীগের কথা বলা যায়! প্রশিক্ষিত বিদেশি খেলোয়াড়সমৃদ্ধ স্বনামধন্য সব ক্লাবগুলোর সঙ্গে এবার তিনি আসেন প্রথমবারের মতো অংশ নেওয়া কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের মতো একটি আনকোরা অনভিজ্ঞ দলকে নিয়ে। তাও দলের সবচেয়ে চৌকস খেলোয়াড়দের বাদ রেখে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপরীক্ষার কারণে তাদের আসার সুযোগ ছিল না।
সেরকম একটি দলের মনোবলকে চাঙ্গা রেখে পরামর্শ এবং কোচিং দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করার মতো জাদুকরী দক্ষতা দেখিয়েছিলেন কোচ কায়সার জাহিদ।
তার মৃত্যু দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক বড় ক্ষতি! আর কোয়ান্টাম কসমো স্কুল স্পোর্টসের ক্ষেত্রে তার শূন্যতা বোধ হয় কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয়।
তবে কায়সার জাহিদ বেঁচে থাকবেন তার ছাত্রদের মাঝে। দেশের ক্রীড়াকে নিয়ে যে স্বপ্ন তিনি দেখতেন, সেই স্বপ্নের মাঝে। কারণ এই দেশের একদল মানুষ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মানসেই অহোরাত্র চালাচ্ছে প্রাণান্ত প্রয়াস!
এসএইচ/