মানসিক শক্তিই এনে দিতে পারে সুস্থতা! :ডা. নূর সাঈদা
ডা. নূর সাঈদা
প্রকাশিত : ০৮:২৬ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৮:৫১ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার
ডা. নূর সাঈদা
কয়েকমাস আগে অফিসিয়াল ট্যুরে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। বেশ হাঁটাহাঁটি হলো। মনে হলো পিঠে যেন একটু একটু ব্যথা হচ্ছে। কদিন পর ব্যথাটা আরও বাড়ল। ডাক্তার বললেন, কিছুই হয়নি, তবে ব্যথা হচ্ছে যেহেতু, কয়েকদিন বেডরেস্ট নিন।
মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে সাধারণত শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকা যায় অনেক। সামান্য অসুখের জন্য মানসিকভাবেই সুস্থ থাকলে অসুখ সেরে যায় অনেক ক্ষেত্রে। তাই অসুস্থ হলে ভেঙ্গে না পড়ে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হবে। আর মানসিক শক্তিই পরে সুস্থ করতে।
কিন্তু আমার মন খুঁতখুঁত করতে লাগল। এমআরআই করলাম। ধরা পড়ল ডিস্ক কলাপস। ডাক্তার হিসেবে জানি যে, এটার নেক্সট স্টেপ হচ্ছে প্যারালাইসিস।
শুরু হলো দৌড়াদৌড়ি। ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম, ট্রাকশন, ইলেকট্রিক শেক- কোনোকিছুই বাদ গেলো না। তারপরও ব্যথা কমে না। ব্যথার জন্যে কোমরে একটা বিশেষ ধরনের বেল্ট পরতে হয়। কোর্সে আসার আগের দিনও ট্রাকশন নিতে হয়েছে আমাকে।
ভাবছিলাম চার দিন বসে থাকব কি করে। বেল্ট ছাড়াই বা বসব কি করে। কী মনে করে যেন, চলে এলাম। ভাবলাম আজ না হয় নাই পরলাম এই বেল্ট।
আশ্চর্য ব্যাপার! প্রথমদিন ১০ ঘণ্টা একটানা বসে থেকেও আমার একটু ব্যথা হলো না। বাসায় গিয়ে যখন ছেলেরা আমাকে ঘিরে ধরল যে, তোমার ব্যথার কী অবস্থা! আমি হেসে বললাম, ব্যথা নেই, রেখে এসেছি। চার দিন পর তো আজ অনেক অনেক ভালো।
এ কোর্সে এসে বুঝলাম, আমি হয়তো ব্যথার কথা বলে বলেই আমার জন্যে এই ব্যথাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছি। এখন থেকে তাই ঠিক করেছি আর কাউকে ব্যথার কথা বলব না। কারণ ডাক্তার-ওষুধের চেয়েও সুস্থতার জন্যে মনের জোরটাই বড়। বছর পাঁচেক আগে যখন ক্যান্সার থেকে নিরাময় লাভ করেছিলাম আমি, তখনও এই সত্যকেই অনুভব করেছিলাম।
২০০৯ সালে যখন আমার ক্যান্সার ধরা পড়ল, চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম কেমোথেরাপি নেওয়ার জন্যে। হঠাৎ হাসপাতালের একটি ব্রোশিওর হাতে এল আমার। সেখানে অনেক কথার মাঝখানে একটি কথা আমার মাথায় ঢুকে গেল-রোগ দিয়েছেন স্রষ্টা। নিরাময়ও করবেন তিনি।
মনে হলো, তাই তো! কেন এত চিন্তা করছি। সে যাত্রায় স্রষ্টায় ইচ্ছায়, আমার পরিবারের সহযোগিতায়, দোয়ায় সেরে উঠেছিলাম আমি।
শোকর আলহামদুলিল্লাহ। অনেক ভালো আছি এখন। যতটুকু ব্যথা ট্যথা ছিল, এ কোর্সে এসে সেরে গেছে তাও।
লেখক: ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ৩৭৮ ব্যাচের গ্রাজুয়েট।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে সংগৃহীত।
এসএইচ/