প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: যেভাবে নেবেন প্রস্তুতি
একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৬:৪৪ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার
দেশব্যাপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১২ হাজার পদের বিপরীতে আগস্ট মাসজুড়ে আবেদন করেছে ১৯ লাখ প্রার্থী। আবেদন পর্ব শেষ। এখন প্রস্তুতির সময়। চাকরি প্রত্যাশি লাখ প্রার্থীর সুবিধার্থে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তুতির খুঁটিনাটি নানাবিধ বিষয় তুলে ধরা হলো। পরামর্শ দিয়েছেন সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষক।
প্রথমেই সিদ্ধান্ত ফাইনাল করুন যে আপনি শিক্ষক হতে চান। যদি আপনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান? তবে প্রথমেই জানতে হবে--
পরীক্ষা পদ্ধতিঃ প্রাথমিক সহকারীশিক্ষক এবং প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগপরীক্ষার বিষয়বস্তু বিগত বছরের মতো থাকলেও এবার প্রশ্নের মান উন্নত হবে। আগে লিখিত পরীক্ষায় মাধ্যমিক পর্যায় থেকে প্রশ্ন করা হলেও এবার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকেও প্রশ্ন আসবে। ৮০ নম্বরের লিখিত এবং ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষাসহ মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে বহু নির্বাচনী বা এমসিকিউ পদ্ধতিতে। প্রশ্ন করা হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান-এই চারটি বিষয়ে।
প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। সাবধান, নেগেটিভ মার্কিং মানবণ্টনে পরিবর্তন না এলেও এবার চালু হচ্ছে নেগেটিভ মার্কিং। একটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। ফলে চারটি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলে ১ নম্বর কাটা যাবে। তাই নিশ্চিত না হয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না।
অনেক সময় সঠিক উত্তর জানা থাকলেও বৃত্ত ভরাটের সময় অসাবধানতাবশত ভুল উত্তর দাগা হয়। একটুখানি সতর্ক হলেই এ ভুল এড়ানো যায়।এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৮০ মিনিট।অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নে পাওয়া যাবে এক মিনিট।
২০১২সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যশোরের মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শফিকুর রহমান মিঠুন বলেন, যেপ্রশ্নগুলো সহজেই উত্তর করা যায়, তা শুরুতেই দাগিয়ে ফেলতে হবে। কোনো প্রশ্নে বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না, কঠিন প্রশ্নগুলো রেখে দিতে হবে পরে উত্তর করার জন্য। অনুমান নির্ভর উত্তরের চেয়ে না দাগানোই ভালো। তবে চারটি অপশনের মধ্যে দুটি ভুল উত্তর বের করতে পারলে বাকি দুটির মধ্যে একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
যেভাবে নিবেন প্রস্তুতি- বর্তমানে দেশের শিক্ষিত বেকারদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি চাকরি। কারণ একটি চাকরির সাঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনার জীবনের অনেককিছু। তাই চাকরিটা নিশ্চিত করতে জেনে নিন কোনকোন বিষয়ে আপনার প্রশ্ন আসবে? যেহেতু সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষ প্রার্থীরা স্নাতক পাস এবং নারী প্রার্থীরা কমপক্ষে এইচএসসি পাস হলে আবেদন করতে পারেন। তাই নিয়োগ পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের বইয়ের আলোকে প্রশ্ন করা হয়।
বাংলা অংশে ব্যাকরণ ও সাহিত্য বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। ইংরেজিতে প্রশ্ন আসে গ্রামার থেকে। গণিতে পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি থেকে প্রশ্ন থাকে। সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ বিষয়াবলী, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ও সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে।
সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া পূবাইলের মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যে কোনো চাকরির জন্য লেখা-পড়ার কোন বিকল্প নেই।কেউ চাকরি করবে অথচ লেখা-পড়া করবে না এটা ভাবা বোকামি।তাই চাকরি পেতে আগেই তার পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিনই পড়তে হবে।প্রাথমিকের চাকরি নিতে এসএসসি ও এইচএসসি’র পাঠ্য বইয়ের প্রতি বেশি নজর দিতে হবে।
মানবন্টন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুই ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়।
প্রথমে নেওয়া হয় এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী পরীক্ষা। এমসিকিউ পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর যোগ হবে। প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় ৮০ মিনিট বা ১ ঘন্টা ২০ মিনিট। গড়ে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরের জন্য ১ মিনিট সময় পাওয়া যাবে।
এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষায়। এ ধাপে থাকে ২০ নম্বর। ভাইভায় টিকলে পরবর্তী যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সহায়ক বই: নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে হলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই আয়ত্ত্বে থাকতে হবে। বিশেষ করে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি বোর্ড বইগুলো সংগ্রহে রাখতে পারেন। বিগত বছরের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখলে প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনে জেলাওয়ারী প্রাথমিক শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশ্নগুলো সংগ্রহে থাকলে প্রস্তুতিতে বেশ কাজে দেবে। বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ গাইড বই পাওয়া যায়। ভালো প্রস্তুতিতে এগুলোও সহায়ক হবে।
সিলেবাস:
ইংরেজিঃ গ্রামারে Right forms of verb, Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- এর নিয়ম জানতে হবে এবং গ্রামার বইয়ের উদাহরণ থেকে চর্চা করতে হবে। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idioms, Synonym, Antonym. ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ আসতে পারে। তাই বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করলে ভালো করা সম্ভব।
বিগত পরীক্ষায় ইংরেজি থেকে যা এসেছে: বিগত দুই পর্যায়ের পরীক্ষায় ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ এসেছে। গ্রামারে Right forms of verb, Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction থেকে প্রশ্ন এসেছিল।
এবার জেনে নেয়া যাক কোন টপিকস গুলোতে হিট করলে পরীক্ষায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে…..
বাংলা ও ইংলিশের জন্য যেকোন সিরিজের বই(নতুন সংস্করণ) থেকে শুধু মাত্র চ্যাপ্টারের শেষে যুক্ত বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন গুলি সলভ করবেন বিস্তারিত পড়ার সময় নাই।তাছাড়া প্রশ্ন ডিরেক্ট কমন পড়বে অযথা প্রেসার নেবার দরকার কি!
#বাংলা: সন্ধি(২),বিপরীত শব্দ(২/৩),সমার্থক শব্দ(২),শুদ্ধ বানান(২),এককথায় প্রকাশ(২),সমাস(২),বাগধারা(২), কারক-বিভক্তি,ছদ্মনাম/উপাধি,দ্বিরুক্ত শব্দ,ধ্বনি,বর্ণ,বাক্য(সরল,জটিল,যৌগিক),পদ নির্ণয়।
প্রচীন যুগ,মধ্যযুগ* থেকে ১ অথবা ২ মার্কস আসতে পারে তবে মধ্যযুগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ,আধুনিক যুগের সাহিত্য কর্মের মধ্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস/রচনাসমগ্র(১/২ মার্কস)এবং পরিচিত কবি সাহিত্যিকের রচনা বা জন্ম মৃত্যু নিয়ে ১/২ মার্কস আসতে পারে যেগুলো পারার মত।
#ইংলিশ: যেকোন সিরিজের বই থেকে পড়লেই চলবে তবে English For Competitive Exams বইটিতে বিগত সালের প্রশ্ন বেশি থাকায় এটাই বেস্ট বই।
Right form of verb,Fill in the blank with appropriate word/preposition(2), Voice Change (1/2),Narration(1), Sentence Correction(2),
Spelling (2),Parts of speech Identification(2),Synonym+antonym(3/4),Idioms & Phrase.
#গণিত:দশমিকের(যোগ,বিয়োগ,গুণ*,ভাগ*),শতকরা,লাভ-ক্ষতি,মুনাফা,ল.সা.গু,গ.সা.গু,ঐকিক নিয়ম(কাজ,খাদ্য,সৈন্য),অনুপাত:সমানুপাত,সংখ্যা পদ্ধতি, বীজগাণিতিক মান নির্ণয়,উৎপাদক নির্ণয়,গড়,মধ্যক,প্রচুরক নির্ণয়,ত্রিভুজক্ষেত্র,বর্গক্ষেত্র,
আয়তক্ষেত্রের বেসিক সূত্রের অংক সমূহ,সরলরেখা,ধারা,গাছের উচ্চতা/মিনারের উচ্চতা/মইয়ের দৈর্ঘ্য /সূর্যের উন্নতি কোন ইত্যাদি বিষয়ক অংক সমূহ।
#সাধারণ_জ্ঞান ও দৈনন্দিন_বিজ্ঞান_ও_কম্পিউটার: এই অংশে ভাল করার জন্য খুব বেশি পড়তে হবেনা।সাধারণ জ্ঞান অংশে ১৪/১৫ টার মত প্রশ্ন আসতে পারে তার ভিতর ১০-১২ টাই হবে সালের রিপিট প্রশ্ন।বাকী ২/৩ টা সাম্প্রতিক বিষায়াবলী দিতে পারে।
তারপরও ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ,বাংলাদেশের জনপদ,নদ-নদী,বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্য অন্তর্জাতিক সংগঠন,জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন,বিশ্বের বিভিন্ন শহরের নাম ইত্যাদি….
বিজ্ঞান থেকে দু’তিনটি কমন প্রশ্ন আসবে যেগুলো চোখের পলকে গোল্লা ভরাট করা যাবে মানে হরহামেশা রিপিটেড সাল।কম্পিউটার থেকে একটি বা দু’টি প্রশ্ন আসবে একেবারে বেসিক কম্পিউটার থেকে। নিজের মগজের সফটওয়্যার থেকে কম্পিউটারের বৃত্ত ভরাট করবেন।
মৌখিক_পরীক্ষাঃ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরই শুধু মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। মৌখিক পরীক্ষায় থাকবে ২০ নম্বর। একাডেমিক ফলাফল বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর থাকবে ৫ নম্বর। এক্সট্রা কারিকুলাম (নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি) এর ওপর বরাদ্দ থাকবে ৫ নম্বর।বাকি ১০ নম্বর থাকবে সাধারণ জ্ঞানের ওপর। মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রার্থীর নিজ জেলার থানা বা উপজেলার আয়তন, জনসংখ্যা, সংস্কৃতি, জেলার ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।
আরকে// এআর