বৃহত্তর ঐক্য গড়ার পক্ষে বিএনপির জেষ্ঠ্য নেতারা
একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৪:২১ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩৬ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিকল্পধারা, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এজন্য প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ ছাড় দিতেও যেন কার্পণ্য করা না হয় সেই পরামর্শ দিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যানরা।
গতকাল সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এই পরামর্শ দেন তাঁরা। রাত সাড়ে ৭টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক চলে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ৩৫ জন। বৈঠকে ২০ জনের বেশি ভাইস চেয়ারম্যান হাজির ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ১৫ জনের মতো ভাইস চেয়ারম্যান বক্তব্য দেন। প্রত্যকের বক্তব্যে ঘুরে ফিরে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য করার বিষয়টি উঠে আসে।
এ সময় সবাই বলেছেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করতে প্রয়োজন হলে আমাদের সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য করতে হবে।
আর এটা হয়ে গেলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে গতি বাড়াতে হবে। এছাড়া সবাই বলেছেন, জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য স্থায়ী কমিটি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা ঠিক আছে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলোচনার মূখ্য বিষয় ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য চেষ্টা করা। সেই সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে কিভাবে বৃহত্তর একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। তিনি জানান, বৈঠকে প্রায় সবাই জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে একমত হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে সর্বোচ্ছ ছাড় দিতে রাজি আছে বিএনপি।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেনের কথায়ও। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ঐক্য এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।
তবে বৈঠক সূত্র জানান, জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর শর্ত হিসেবে জামায়াতকে বাইরে রাখার প্রসঙ্গটি বারবার ঘুরে ফিরে আসে। ওই দুই নেতার জামায়াতের বিষয়ে ঘোর আপত্তি। তবে ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য করার সিদ্ধান্ত নেবে কি-না সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেণ। কেউ কেউ বলেন, জামায়াতের রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে গেছে। তাঁরা জোট সঙ্গী হয়েও লাভ নেই। যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলেন, চলমান আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াতের অংশ গ্রহণ নেই।
তবে ভাইস চেয়ারম্যানদের দু’ একজন অবশ্য জামায়াতকে জোটে রেখেই জাতীয় ঐক্য গড়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন। তারা জামায়াতের ভোট ব্যাংকের বিষয়টি সামনে এনেছেন। এ জন্য ড. কামাল ও বি. চৌধুরীকে ম্যানেজ করার কথা বলেছেন তারা।
তবে জামায়াত প্রসঙ্গে যখন একমত হওয়া যাচ্ছিল না তখন প্রায় সবাই একমত হয় যে, বিষয়টি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত। তারা স্থায়ী কমিটিকে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন।
বৈঠকে উপস্থিত অপর এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান কথা বলেছেন। মহাসচিব বলেছেন, সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি আশা করি, জাতীয় ঐক্য হবে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও পজেটিভ।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, যদি জাতীয় ঐক্য নাও হয় তবুও বিএনপিকে তার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ আন্দোলন করে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। সরকারকে কোনও প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না। গ্রেফতার এড়াতে আন্দোলনে আরও কৌশলী হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন শেষে পুলিশ যেভাবে সারা দেশে আটক করেছে এটার নিন্দা জানিয়েছি। ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে স্থায়ী কমিটি যেভাবে দল পরিচালনা করছে, এটাকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচন নিয়ে দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির নেতারা যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলোর বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যানরা একমত হয়েছেন।
দুজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, যুক্তফ্রন্টের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন তো হবে ৩০০ আসনে। এর মধ্য থেকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যের মধ্য থাকা সব দলকে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে সবাইকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রয়েছে বিএনপির।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কথা বলেননি বলে জানা গেছে।
/ এআর /