ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার প্রস্তাব

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ০৪:৪৪ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩২ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার

সরকার চাকরিতে প্রবেশের বিদ্যমান বয়স ৩০ থেকে ৩২ বছর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। চাকরিতে প্রবেশে বয়স বাড়ানোর দাবিটি দীর্ঘদিনের হলেও দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ দিকে এসে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

তবে চাকরিতের প্রবেশের বয়স বাড়ানো হলেও আপতত বাড়ছে না অবসরের বয়স। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হবে বলে জনাপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানো সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা ৩২ বছর করার প্রস্তাব করলেও সরকার ইচ্ছা করলে সেটা আরও বাড়াতে পারে। তিনি আরো জানান, সরকার চাইলে বয়স সীমা আরও বাড়াতে পারে। এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। তবে বিভিন্ন দিক চিন্তা করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। বর্তমানে মুক্তিযোদ্দার সন্তান ও নাতি নাতনিদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর। আর সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০।

চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের এমন উদ্যোগের বিষয় জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর উদ্যোগকে সমর্থন করি না। সরকার চাকরিতে বেশি বয়স সীমা বৃদ্ধি করে খুব একটা লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগের থেকে এখন অনেকটা সেশনজটও কমছে।

তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা বলছেন, ৩২ বছর নয় ৩৫ বছরই করতে করতে প্রবেশের সময়সীমা। যতদিন তাদের দাবি অনুযায়ী ৩৫ বছর না করা হবে তত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রয়ত ব্যক্ত করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করলেও তাঁদের আন্দোলন চলবে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা সঠিক হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন না। ২০১১ সালে চাকরিতে অবসরের বয়স বৃদ্ধির সময় প্রবেশের বয়স ৩২ করলে তখন ঠিক ছিল। এখন ৩৫ বছর করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বা তার বেশি। এছাড়া বাংলাদেশেও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের আগে দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে সেটা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ বছর। এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চাকরিতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়।

অবসরের বয়স বাড়ানোর কারণে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা কমে যায়। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার পথ সংকুচিত হয়। পাশাপাশি একদিকে চাকরিতে তীব্র প্রতিযোগিতা, আরেক দিকে শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি পেতেও অনেকের দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এজন্য অবসরের বয়স বাড়ানোর পর থেকেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। তাঁরা মানববন্ধন, অনশনসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দাবি আরো জোরালো হয়। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি আলোচনা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দিচ্ছিল না। এর মধ্যে গত জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯ তম সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়। এর আগে কমিটির ২১ তম সভায় ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল।

 টিআর/ এআর