ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এনায়েতপুরে মানব হিতৈষী কর্মবীর আমজাদ হোসেনের স্মরণসভা

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১২:০৭ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

পাকিস্থান সরকারের দমন পীড়ন উপেক্ষা করে এদেশে শিল্প কল-কারখানা স্থাপনের প্রথম উদ্যোক্তা বিটিএমএ এর সাবেক চেয়ারম্যান মানব হিতৈষী, কর্মবীর ডাঃ মীর আমজাদ হোসেনের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে তার প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সেবা প্রতিষ্ঠান খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে দিনব্যাপী নানা কর্মসুচির মধ্যে দিয়ে তাকে স্মরণ করা হয়।দুপুরে হাসপাতালে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করা হয়েছে। 

এই স্মরণ সভায় খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নাসিং কলেজ পরিচালনা পরিষদের মোহাম্মদ ইউসুফ, এম এ হায়দার হোসেন, ডাঃ রুবায়েত ফারজানা হোসেন, খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডাঃ হোসেন রেজা, খাজা ইউনুছ আলী মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ সাইফুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠান সমুহের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।  

এ সময় বক্তরা বলেন, ডাঃ আমজাদ হোসেন সমারোহ, বিলাস-বাসনাকে পছন্দ করতেন না। তিনি মানবতা আর মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। দেশে শিল্প প্রসারের জনক তিনি। এতো বিত্ত-বৈভরের মালিক হয়েও তিনি খুবই সাদা-সিধে জীবন যাপন করতেন।  

তারা আরও বলেন, পৃথিবীর অন্যতম মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ডাঃ আমজাদ হোসেন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরম সৌভাগ্য ডাঃ মীর আমজাদ হোসেন এদেশে জন্মেছেন। এদেশ চরম দুর্ভাগ্য, এ দেশ তাকে চিনতে পারেনি’। আমরা সবাই কর্তব্য সচেতন হলে তবেই তার ঋন শোধ করতে পারবো।

জানা যায়, ১৯২৫ সালের ১ অক্টোবর সালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর গ্রামের মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মীর মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন স্থল পাকড়াশী ইন্সটিটিউট থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৪৮ সালে ঐহিত্যবাহী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবি (বর্তমানে এমবিবিএস) পাশ করে ১৯৫১ সালে পাকিস্তানী মেডিক্যাল কোরে ক্যাপ্টেন পদে যোগ দিয়ে ১৯৫৩ সালে এ চাকুরি ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে সুতার রং ও কেমিক্যাল আমদানী ব্যবসা শুরু করেন। পাটের ব্যবসা ও তা বিদেশ রপ্তানী, তাঁত কারখানা, ঢেউটিন, ওষুধের কাঁচামাল কোরোসিন তেল আমদানী ব্যবসার পাশাপাশি পাকিস্তানীদের নানা বাধা পেরিয়ে দেশে প্রথম বারের মতো ১৯৫৮ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে আলহাজ টেক্সটাইল মিল স্থাপন করেন।

এরপর চট্টগ্রামে ক্যাপোক মিল, ১৯৬৭ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে আলহাজ জুট মিল, ১৯৮২ সালে ড্রাগ ইন্টাঃ লিমিটেড ঔষুধ কোম্পানী, ১৯৯৪ সালে সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান এটিআই, এটিআই সিরামিক, পঞ্চগড়ে এমএম টি এস্টেট লিমিটেডসহ বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানা গড়ে তোলেন।

এছাড়া তিনি টানা ৩ বার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল এসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রাষ্টয়াত্ব অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করেন।

দেশের শ্রেষ্ঠ করদাতা এই ব্যবসায়ী সিআইপি মনোনিত হয়েছিলেন। মানুষের দোর গোড়ায় বিশ্বের আধুনিক চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার বিস্তার কল্পে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) কে উৎস্বর্গ করে ২০০৩ সালে এনায়েতপুরে প্রায় ২’শ একর জায়গায় ৫৮৬ বেডের দেশের বৃহৎ বিশ্বমানের অলাভজনক খাজা ইউনুছ আলী মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়, খাজা ইউনুছ আলী নার্সিং কলেজসহ বেশ কয়েকটি সেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। যা দেশ ও জনগনের জন্য সেবামুলক অলাভজনক ট্রাষ্টি প্রতিষ্ঠান। মানবতার কল্যাণে নিবেদিত এই মহীয়সী ব্যক্তি ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন।

কেআই/এসি