ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

মোবাইল অপারেটরদের সেবায় অসন্তুষ্ট গ্রাহক

অভিযোগ ১৪৩৬টি, নিষ্পত্তি হয়নি একটিও

প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার

মোবাইল অপারেটরগুলোর সেবা ও পণ্য নিয়ে দিন দিন অসন্তোষ বাড়ছে ব্যবহারকারীদের মাঝে। ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) এবং গ্রাহক সেবার মান নিয়েও আছে অসন্তোষ।

এছাড়া আছে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা যে যাই বলুক না কেন, গ্রাহকদের অভিযোগের কোনো সমাধান নেই।

২০১৭ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযোগ কেন্দ্রে মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পরেছে এক হাজার ৪৩৬টি। কিন্তু অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি একটিরও।

অসন্তোষ গ্রাহক সেবার মান নিয়ে

মোবাইল অপারেটরগুলোর কোনো সেবা নিয়ে অসন্তোষ থাকলে গ্রাহকেরা প্রথমে ছুটে যান অপারেটরগুলোর গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে। কিন্তু সেসব সেবা কেন্দ্রের মান নিয়েও আছে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ।

মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছ থেকে গ্রাহকেরা সরাসরি, কল সেন্টার এবং অনলাইনে লাইভ চ্যাট; এই তিনভাবে সেবা নিতে পারেন। লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে খুবই সীমিত পরিসরে সেবা দেওয়া হয় গ্রাহকদের। তাই গ্রাহকদেরকে কল সেন্টার অথবা সরাসরি সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সেবা নিতে হয়।

কল সেন্টারে ফোন দিলে প্রথমেই অংকের ক্লাসে বসতে হয় গ্রাহকদের। বিভিন্ন সেবার ধরণের নামে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত বিভিন্ন নম্বরে চাপ দিতে বলা হয়। একটি নম্বরে চাপ দিয়ে এক ধরণের সেবায় গেলে আবার আরেকটি নম্বর। এভাবে কয়েক দফা বিভিন্ন নম্বর চাপার পরেও গ্রাহক সেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে হলে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘক্ষণ।

একই অবস্থা গ্রাহক সেবা কেন্দ্রগুলোতেও। গ্রাহক অনুপাতে ব্যস্ততম জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রাহক সেবা কেন্দ্র না থাকা এবং কেন্দ্রগুলোতে গ্রাহকদের অনুপাতে কম সংখ্যক কর্মী থাকায় সেবা কেন্দ্রগুলোতেও সমস্যার সমাধান পেতে গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। এসব কারণে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগেও অনুৎসাহিত হয়ে পরেন তারা। 

যেখানে অভিযোগ জানাবে গ্রাহক

মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে সমাধান পেতে বেশ নাজেহালই হতে হয় গ্রাহকদের। ভোক্তা হিসেবে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য গ্রাহকেরা প্রথমেই যান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কেন্দ্রে। কিন্তু সেই সংস্থাটি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না।

রাজধানীর টিসিবি ভবনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সহকারী পরিচালক (তদন্ত) মো. মাসুম আরেফিন বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলোর পক্ষে করা এক রিটের কারণে উচ্চ আদালত এক আদেশ জারি করে।

২০১৭ সালের ২৮ মে’তে জারি করা ওই আদেশের কারণে মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা আমরা নিতে পারছি না। আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসে আমরা শুধু সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।       

যে যা বলছে

গ্রাহকদের এমন সব অসন্তোষ এবং অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটর এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ইটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে।

মোবাইল অপারেটরগুলো গ্রাহকদের এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। গ্রাহকদের অভিযোগ এবং অসন্তোষের জবাবে প্রতিটি মোবাইল ফোন অপারেটর বক্তব্য কমবেশি একই রকম।

ব্যবহৃত ইন্টারনেট যাচাইয়ের জন্য নিজেদের পাঠানো এসএমএস এবং মোবাইলভিত্তিক অ্যাপসেই ভরসা রাখতে হবে বলে জানায় গ্রামীণ ফোন এবং বাংলালিংক।

আর কলড্রপ হলে গ্রাহকদেরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘মিনিট’ দেওয়া হয় বলে জানায় অপারেটরগুলো। এসব মিনিটের মেয়াদ একদিন হয় বলে জানায় গ্রামীণ ফোন।

অন্যদিকে ভ্যাস সেবার নামে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয় টাকা কাটার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে অপারেটরগুলো। বাংলালিংক জানায়, গ্রাহকেরা চাইলে মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখে ৬৮৮৮ নম্বরে পাঠালে বন্ধ হয়ে যাবে গ্রাহকের সব ধরণের ভ্যাস সেবা।

আর গ্রাহক সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি অপারেটরগুলোর।

এছাড়া মোবাইল ডাটা ও অফারের ক্ষেত্রে বিটিআরসি’র নিয়ম নীতি মেনেই সবকিছু করা হয় বলে দাবি করে অপারেটরগুলো।

মোবাইল ডাটার ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরকে যে অপারেটরগুলোর এসএমএস এর ওপরেই নির্ভর করতে হবে তেমনটা জানালো বিটিআরসিও। তবে মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট ডাটা, ভয়েস কল এবং গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা অর্থের ওপর বিটিআরসি নিয়মিত অডিট করে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির মিডিয়া উইং এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক জাকির হোসেন খান।

মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে গ্রাহকদেরকে তা বিটিআরসিকে জানানোর পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা। অপারেটরগুলোর গ্রাহক সেবা কেন্দ্র থেকে যদি কাংখিত সেবা কোন গ্রাহক না পেয়ে থাকেন এমনকি গ্রাহক সেবা নিয়েও যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে ১০০-তে কল করে তা বিটিআরসি’কে অভিযোগ আকারে জানাতে বলেন জাকির হোসেন।

সেবার মান নিশ্চিতকরণে নীতিমালা

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, অপারেটরগুলোর সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিস গাইডলাইন নামের ওই নীতিমালা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে।

এই নীতিমালা পাস হলে গ্রাহকদের প্রতি অপারেটরগুলোর সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা সংস্থাটির। এছাড়া এই নীতিমালার ফলে অপারেটরগুলোর জবাবদিহি আরও বাড়বে বলে মনে করছে টেলিকম বিশেষজ্ঞরা।

এই নীতিমালায় অপারেটরগুলোকে কল ড্রপ ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ৯৭ শতাংশ ফোন কল সফলতার সাথে সংযোগ দিতেও বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। আর প্রতিটি ফোন কল সংযোগ দিতে হবে সর্বোচ্চ ৭ সেকেন্ডের মধ্যে। ৯৭ শতাংশ এসএমএস সফলভাবে প্রাপকের কাছে পৌঁছাতে হবে। ফোর-জির ক্ষেত্রে ডাউনলোড স্পিড হবে কমপক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ৭ মেগাবিট।
আর গ্রাহকদের প্রতি সেবার মান বজায় রাখতে না পারলে অপারেটরগুলোকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে নীতিমালায়।

এ সংক্রান্ত আরও খবর

কলড্রপ ও ডাটা ব্যবহারে অসন্তোষ বাড়ছে গ্রাহকদের

//এস এইচ এস// এআর