‘গ্রাহককে ব্যাংকে না গিয়ে লেনদেনের সুবিধা দিতেই সিআরএম’
প্রকাশিত : ০৭:২৫ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:৫৪ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার
ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেওয়া বা উত্তোলন করার ভোগান্তি দূর করতে দেশে চালু হয়েছিল অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ। যেখানে এতোদিন শুধু টাকা উত্তোলন করা যেত। কিন্তু জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি এবার জমা দেওয়ার ভোগান্তিও কমাতে গ্রাহকপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্যাশ রিসাইক্লার মেশিন (সিআরএম)। এরই মধ্যে দেশের তিনটি ব্যাংকে অর্ধশতাধিক সিআরএম মেশিন বসানো হয়েছে। যেখানে গ্রাহকরা লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি ছাড়াই নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারছেন।
জানা গেছে, এটিএম মেশিনের স্থলে সিআরএম ম্যাশিন প্রতিস্থাপন খুব দ্রুত দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই মেশিন নোট গুণতে পারবে, সেগুলো জ্বাল কি না, ছেড়া বা ফাটা কি না তাও যাচাই করতে পারবে। টাকাগুলো একই সময়েই হিসাবে জমা করতে পারবে। এতে করে ব্যাংক সেবায় কায়িক শ্রমের পরিমাণ কমে যাবে।
দেশে এ পর্যন্ত তিনটি ব্যাংকে এ পদ্ধতির সিআরএম মেশিন বসানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো-সাউথইস্ট, সিটি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এ তিনটি ব্যাংক এ পর্যন্ত ৫৬টি সিআরএম স্থাপন করেছে। আগামী এক বছরে আরো ১৬৬টি সিআরএম স্থাপনের ব্যবস্থা নিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সাউথইস্ট ব্যাংক ঢাকা নগরীতে ১২টি সিআরএম স্থাপন করেছে। আগামী বছর মার্চের শেষ নাগাদ তারা আরো ৫০টি মেশিন স্থাপন করবে।
সিআরএম ম্যাশিনের ব্যবহারসহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় সাউথইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাইনুদ্দিন চৌধুরীর।
তিনি বলেন, গ্রাহককে ব্যাংকে না গিয়েও ব্যাংকিং লেনদেনের সুযোগ দিতে আমরা সিআরএম ম্যাশিন চালু করেছি।গ্রাহকরা এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা সেবা নিতে পারবেন। যার জন্য গ্রাহককে কোনো অতিরিক্ত সেবামূল্য দিতে হবে না। আমরা আগামীতে এ সেবা দেশের সবচেয়ে বড় বড় বিপনি-বিতানে চালু করবো।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের ব্যাংকিং লেনদেনে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল এটিএম বুথ। এখন বুথের স্থলে নতুন করে সিআরএম ম্যাশিন স্থলাবিষিক্ত হচ্ছে।দেশের তিনটি ব্যাংক এ ম্যাশিন স্থাপন করেছে। সাউথইস্ট সে ব্যাংকগুলোর একটি।কোন ধারণা থেকে আপনারা এ সিআরএম ম্যাশিন স্থাপনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন?
এস এম মাইনুদ্দিন: আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আগামীতে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে যে পুরো লেনদেনটাই ক্যাশ ছাড়াই হচ্ছে।তবে সেই জায়গা যেতে আমাদের একটু সময় লাগবে।এরই মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। যেমন বিকাশ ব্যাংক বিমুখ জনগণকে ক্যাশলেস লেনদেনে নিয়ে আসছে।
তবে ক্যাশলেস লেনদেন শুরু হলেও আমাদের ক্যাশ নির্ভরতা কিন্তু রয়েই গেছে। তাই আমরা ভেবেছি যে ক্যাশ নির্ভরতা রেখেই লেনদেনে যতরকম আধুনিকতা করা যায়, আমরা তা করবো। আমরা দেখেছি যে এটিএমের সঙ্গে আমরা যদি রিসাইকেলার যোগ করি, তবে মানুষ টাকা উত্তোলন এবং টাকা জমা দেওয়া দুটিই করতে পারবে।
ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ৮০ শতাংশের কাজ হলো টাকা উঠানো ও জমা দেওয়া।এর বাইরে তারা বেশি কিছু করে না।লোন নেওয়া, লোন দেওয়া ও বিল পরিশোধ করার সংখ্যা কম।তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে ব্যাংক গ্রাহকদের এই বড় অংশের জন্য যদি আমরা সিআরএম ম্যাশিন বসাতে পারি, তবে ব্যাংককিং লেনদেনের ক্ষেত্রে যে জট লেগে যায় তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ভবিষ্যতে আমাদের লক্ষ্য হলো-আমরা শুধু ক্যাশ উঠানোর পদ্ধতি রাখবো না, আমরা ক্যাশ উঠানো ও জমা উভয় পদ্ধতি এক সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব।এ বছরই আমরা একটা সাইজেবল এমাউন্ট সিআরএম আমরা স্থাপন করবো।
উন্নত বিশ্বে যারা ব্যাংকে এটিএম চালু করছে, তারা কিন্তু এটিএম ম্যাশিনে শুধু টাকা উত্তোলন নয়, উত্তোলনের সঙ্গে আরো অনেক কিছু যোগ করছে।ওইদিকেই আমারা যেতে চাই।কেননা উন্নত বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতে এ সিআরএম ম্যাশিন আছে।আমরা বাংলাদেশীরা বেশির ভাগে ক্যাশে লেনদেন করতে পছন্দ করি।তাই আমাদের দেশে এটার প্রচলনের সম্ভাবনাও বেশি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনাদের শুরুটা কিভাবে হলো?
এস এম মাইনুদ্দিন: আমরা ২০১৬ সালে প্রথম ধারণা নেয় যে ব্যাংকে আমরা সিআরএম ব্যবহার করবো। আমরা প্রথমে মতিঝিল কর্পোরেট অফিসে এটা স্থাপন করি। পরে বিভিন্ন প্রকৃয়ার মাধ্যমে সর্বশেষ ২০১৭ তে আমরা এটা স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ধারণা পাওয়ার পরও স্থাপনে এতো দেরি হওয়ার কারণটা আসলে কি?
এস এম মাইনুদ্দিন: ধারণাটা পেলেই সাথে সাথে এটা স্থাপন করা যায় না। কারণ এটার ব্যবহার উপযোগী করতে একটা দীর্ঘ প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমন আমাদের টাকা।টাকাটাকে ম্যাশিনের চেনার উপযোগী হতে হবে। সেজন্য টাকার সাইজ, টাকার শেফ, টাকার সিকিউরিটি ভ্যালুকে চিনাতে হবে।আমরা ১ হাজার টাকা এবং ৫০০ টাকা চেনাতে পেরেছি।এটার মধ্যে আবার ফেক নোট, সইল নোট আছে। সেগুলো ম্যাশিন কিভাবে চিনবে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া একুরেসিরও একটি বিষয় আছে।কারণ কেউ ৫০ টাকা দিয়ে বল্ল ১০০ টাকা দিয়েছি। তবে তো হলো না।টাকা যদি ম্যাশিন না চিনতে পারে তবে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।এরকম অনেক ছোট ছোট বিষয় ভেবেচিন্তে আমরা এটা চালু করেছি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একটি সিআরএম ম্যাশিন স্থাপনে ব্যাংকের কত টাকা খরচ করতে হচ্ছে?
এস এম মাইনুদ্দিন: দেখুন বাংলাদেশে প্রথম এটিএম ম্যাশিন নিয়ে আসে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক।ওরা যখন এক একটা ম্যাশিন নিয়ে আসে, তখন ম্যাশিনের দাম পড়তো ৩০ লাখ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। সেটা আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগে। কিন্তু এখন এটার দাম সহনীয় পর্যাযে আসছে।এখন শুধু ক্যাশ আউটের জন্য একটি এটিএম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় পাওয়া যাবে। সিআরএম ম্যাশিনও তাই। এখন এটির দাম উচ্চ হারে আছে। এটাও এক সময় কমে আসবে। ব্যবহার বেশি হলে একসঙ্গে অনেকগুলো কিনলে দাম কমে আসবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একজন গ্রাহক কিভাবে সিআরএমের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা রাখবেন?
এস এম মাইনুদ্দিন: একজন একাউন্ট হোল্ডারের একটি কার্ড থাকবে। সে কার্ডের নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড চেপে এটিএম বুথের মতোই এ সিআরএম বুথে প্রবেশ করবে। পরে নির্দিষ্ট একটি বাটন চাপলে দুটি অপশন আসবে। দুটি অপশনের একটিতে লেখা থাকবে আপনি কি টাকা উত্তোলন করতে চান? নাকি টাকা জমা দিতে চান?
যদি কেউ উত্তোলন করতে চান তবে উত্তোলনের বাটনে চাপ দিবেন। আর যদি জমা দিতে চান তবে জমার বাটনে চাপ দিবেন। জমার বাটনে চাপ দিলে তার সামনে টাকা রাখার একটি জায়গা খুলে যাবে। সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। নির্দিষ্ট ওই জায়গাতে টাকা জমা দেওয়ার পর সিআরএম ম্যাশিনে তা গণনা হবে। আবার টাকা ছেড়া-কাটা বা জ্বাল কিনা তাও যাচাই হবে মেশিনে। মুহুর্তে এ কাজটি সম্পন্ন হবে এবং টাকা সঠিক থাকলে জমাকারি গ্রাহককে একটি কনফরমেশন রশিদ দেওয়া হবে।
যেখানে জমা দেওয়া টাকার সিরিয়াল নম্বর, পরিমান, যে একাউন্টে জমা হচ্ছে তার নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য লেখা থাকবে।টাকা জমাকারি গ্রাহককে রশিদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার টাকা তার নিজের হিসেবেই জমা হয়ে যাবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আগামীতে এটিএম বুথ উঠিয়ে নিবেন কি না?
এস এম মাইনুদ্দিন: আগামীতে গ্রাহকের পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। তবে এ মুহুর্তে এটিএম উঠানোর কথা ভাবছি না। বরং এটিএমের পাশাপাশি সিআরএম স্থাপন করা হচ্ছে। গ্রহকের চাহিদা অনুযায়ী সিআরএম আরো বসানো হবে।
খুব শিগগিরই আমরা আমাদের বড় ব্র্যাঞ্চগুলোতে এ ম্যাশিন সরবরাহ করবো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী বড় বড় বিভাগগুলোতে এ ম্যাশিন সরবরাহ করা হবে।এছাড়া চাহিদা সম্পন্ন সুপার মার্কেটগুলোতেও আমরা এসব নিয়ে আসবো।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশে নতুন প্রচলিত এ ম্যাশিনগুলোর ব্যবহারে কোন প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা দেখছেন কি না?
এস এম মাইনুদ্দিন: যেকোন ম্যাশিনে কিছু না কিছু সমস্যা তো থাকেই। ম্যাশিনে টাকা আটকে যাবে। ম্যাশিনের রোলারগুলো কাজ করবে না। অন্যান্য ম্যাশিনগুলোর যেমন সমস্যা আছে এটাও তেমন আছে। তবে এটা ব্যবহার করতে আমরা প্রস্তুত। যত সমস্যাই থাক মেরামত করেই তা ব্যবহার করা হয়।
ফলাফল: আমরা সিআরএম বসানোতে বেশ ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি।গ্রাহকরা খুব সহজেই এটা গ্রহণ করেছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নতুন সিআরএম সম্পর্কে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতে চান?
এস এম মাইনুদ্দিন: আমাদের বক্তব্য হচ্ছে-গ্রাহকরা একটা সময় এটা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তাদেরকে আর টাকা জমা দিতে দৌড়া-দৌড়ি হুড়োহুড়ি করা লাগবে না।এটার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা নেওয়ার সুযোগ পাবেন। ব্যাংকিং আওয়ারে টাকা জমা দেওয়ার তাড়া থাকবে না। গ্রাহকরা যাতে ব্যাংকে না এসে ব্যাংকের কাজ করতে পারে, নিরাপদভাবে লেনদেন করতে পারে সে নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি।
/ এআর /