পিআইবি’র কর্মশালা
‘সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের উদ্যোগ এখনই নেওয়া প্রয়োজন’
প্রকাশিত : ১১:০২ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
বর্তমানে আমাদের ল্যান্ডে গ্যাস আছে ১০ থেকে ১২ ডিসিএফ। প্রতিবছর আমরা ব্যবহার করি এক ডিসিএফ। তাহলে একটা বাচ্চাও সহজে বলতে পারবে যে আমাদের গ্যাসে আর মাত্র ১২ বছর চলবে। আর ১২ বছর ভয়াবহ গ্যাস সংকটে পড়বে দেশ। তাই গ্যাস সংকট মোকাবেলায় সরকারকে এখনই ব্লূ ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগামী ১২ বছর পর গ্যাসের সংকট মোকাবেলায় যে পরিমান উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল। সে পরিমান উদ্যোগ কর্তৃপক্ষ আগে থেকে নেয়নি। তবে বর্তমান সরকার যদি এখনও সমুদ্রে সম্ভাবনাময় গ্যাস কাজে লাগাতে কার্যকরী উদ্যোগ নেই, আমাদের গ্যাস সংকট অনেকটা দূর হতে পারে।
‘মেরিন ইকোলজি, ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড কনজারভেশন’শীর্ষক তিনদিন ব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় পিআইবির সম্মেলন কক্ষে। ১০ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয়োজিত এ কর্মশালায় সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকরা অংশ নেই।
কর্মশালায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ,সেন্টার ফর অ্যাডভ্যান্স রিসার্স ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ড. এস এম এ রশিদ, আইইউসিএন বাংলাদেশের সাবেক বাইওডাইভার্সিটি এক্সপোর্ট ড. আনিসুজ্জামান খান, ম্যারিটাইম ল অ্যান্ড পলিসির মানসুরা আক্তার, সেভ আওয়ার সি এর পরিচালক এস এম আতিকুর রহমান প্রমুখ প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেই।
কর্মশালায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার সম্ভাবনাময় সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সমুদ্র অর্থনীতির উপর খুব বেশি গরুত্ব দিচ্ছে। সমুদ্রের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত আমরা সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর গৃহীত পদক্ষেপ দৃর্শমান হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণে আমাদের ৫০ জনের একটি সদস্যদল রাশিয়া গেছে।
কর্মশালার সমাপনি অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ বলেন, সমুদ্রে আমাদের সম্ভাবনা যাচাইয়ে এখনও কোন দক্ষতা সম্পন্ন জনবল বা কাঠামোগত ভীত তৈরি হয়নি। আমরা অনেকবার সরকারকে বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমুদ্র অর্থনীতি বিভাগ চালু করা হোক। আমাদের কথা আমনে নেওয়া হয়নি। কিন্ত যেদিন সমুদ্র বিজয় হয়, তার তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নির্দেশে আমাদের সে একশ’ বছরের দাবি পূরণ হয়েছে। তাই সরকার ইচ্ছা করলেই কালই সমুদ্র সম্ভাবনা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারে। যত দ্রুত এ উদ্যোগ নিবে ততই দ্রতই আমাদের গ্যাস সংকট মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন হবে।
তিনি জানান, সমুদ্র ঘিরে দুই ধরণের সম্ভাবনা আছে। একটা হচ্ছে রিসোর্সেস, অন্যটি হচ্ছে ইকো-সিস্টেম সার্ভিস। রিসোর্সকে আবার আমরা দুইভাগে ভাগ করে থাকি। একটা হচ্ছে লিভিং রিসোর্সেস আর একটা হচ্ছে নন-লিভিং রিসোর্সেস। নন-লিভিং রিসোর্সেস এর মধ্যে তেল, গ্যাস, বালু প্রভৃতি। লিভিং রিসোর্সের মধ্যে সমুদ্রে যতগুলো প্রাণী আছে সবগুলোই লিভিং রিসোর্সেস। তবে এসব লিভিং রিসোর্সেস এর মধ্যে আমরা চোখে যেটা দেখতে পায়- সেটা হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি।
এ লিভিং ও নন-লিভিং রিসোর্স ছাড়াও সমুদ্রে বিপুল পরিমান ইকোসিস্টেম আছে। যেমন সমুদ্রে জাহাজ চলাচল করে। জাহাজ চলাচলের বিষয়টি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া সমুদ্রে ব্যাপক ইকোসিস্টেম আছে। যেমন সমুদ্র ব্যাপক কার্বনডাই অক্সাইড শুষে নেয়। আবার সমুদ্রের পানিতে আছে অক্সিজেন। যা জীববৈচিত্র বাঁচতে সাহায্য করে। এছাড়া সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারসহ সমুদ্রকে ঘিরে পর্যটনের মতো আরও অনেক সম্ভাবনা আছে।
কর্মশালার সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ। এ সময় পিআইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মেরিন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরকে//