সন্দ্বীপে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফুড ব্যাংক প্রকল্প
প্রকাশিত : ১০:০২ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
সন্দ্বীপের দরিদ্র ও নিন্মবিত্তদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফুড ব্যাংক। দুর্যোগকালীন বা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য ঘাটতি ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে তোলার লক্ষ্যে এসডিআইয়ের রিকল-২০২১ প্রজেক্ট এই ফুড ব্যাংক সেবা চালু করে। এর আওতায় দ্বীপ উপজেলাটির প্রতিটি ঘরে একটি করে ফুড ব্যাংক দেওয়া হয়েছে, যেখানে মুষ্ঠি চাল সংরক্ষণ করে পরিবারগুলো। মাস শেষে সে চাল জমা করা হবে এলাকার নির্দিষ্ট একটি ড্রামে, যা আপদকালীন বিতরণ করা হবে।
এদিকে জমানো চাল বেশিদিন না রেখে বিক্রি করে টাকা সঞ্চয়েরও কৌশলও হাতে নিয়েছে এলাকাবাসী। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া চালের টাকা এলাকার তিনজন সদস্যের নামে খোলা ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হবে। শুধু তাই নয়, জমাকৃত চাল থেকে কারও পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দিলে তাকে ঋণ হিসেবে চাল দেওয়া হবে। পরবর্তীতে সচ্ছলতা ফিরে আসলে, তাকে সে চাল ফেরত দিতে হবে।
এদিকে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা থেকে কারও মেয়ের বিয়ে,অসুস্থতা, মূলধন সংকট, সাময়িক উপার্জন বন্ধ থাকলে তাদের বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে লোন নিতে পারবে। সকল সদস্যের মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজুলেশন করে এই ঋণ প্রদান করা হয়। ফলে তাদের স্থানীয় মহাজন বা বনিকদের কাছ থেকে চড়া সুদে লোন নিতে হয় না। গত নভেম্বর মাসে এই ধারণা দিয়ে সিবিওতে ফুটব্যাংক গঠন করার পর আর কষ্ট করতে হয়নি রিকল প্রতিনিধিদের। মুখে মুখে এই ধারণা প্রচার হয়ে প্রতিফলন ঘটতে থাকে পাশ্ববর্তী গ্রামে। কয়েক মাসে রিকল প্রজেক্টের কর্ম এলাকার ৪টি ইউনিয়নের ১২টি ওয়ার্ডে গঠন হয় ১৭টি ফুডব্যাংক। আরও কয়েকটি ফুডব্যাংক গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, এই ফুডব্যাংক গুলোতে জমাকৃত চালের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১৪৬৪১.৫ কেজি বা ১৪.৬৪ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত বিক্রিত চালের মূল্য দাঁড়িয়েছে পাচ লক্ষ সাতাশি হাজার ছয়শত (৫,৮৭,৬০০) টাকা। রিকল প্রজেক্ট দল গুলোকে অনুপ্রাণীত করার জন্য বা চাল সংরক্ষণের জন্য দিয়েছে ৩৯,৬০০ টাকা। সব মিলিয়ে তাদের ব্যাংক জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় লক্ষ চৌদ্দ হাজার চার’শ টাকা। এই অগ্রগতিতে ও গ্রামে গ্রামে ফুডব্যাংকের সাইনবোর্ড দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে অন্যরাও । আগ্রহ বাড়ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে। এই প্রজেক্টের কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই ফুডব্যাংকের পরিমাণ হবে দ্বিগুন । সে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিকল টিম । মাস শেষে সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে দাড়িয়ে গ্রাম্য নারীদের চাল জমা দানের দৃশ্য দেখে সমাজ সেবক ও জনপ্রতিনিধিরা ধারণা করছেন, এই ফুডব্যাংক একসময় তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে তৈরি হবে একজন করে উদ্যোক্তা । এবং ৪ থেকে ৫ বছর পর তাদের জমাকৃত সে চালের টাকাই হয়ে উঠবে তাদের ব্যাবসা শুরুর মুলধন। বর্তমানে ফুডব্যাংকগুলোর সদস্য সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়েছে বলে জানান এসডিআই কর্মকর্তা বাদল রায় স্বাধীন।
কেআই/ এমজে