ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১

চিত্রনায়িকা সুজাতা

‘এখন লেখালেখি করে সময় কাটছে’

প্রকাশিত : ০৩:৩৭ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৮:৩৮ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার

রূপালি পর্দার প্রথম ‘রূপবান’ তিনি। আছে আরও অনেক স্মরণীয় চরিত্র। সংসারও করেছেন এক নায়কের সঙ্গে (আজিম)। এখনো অভিনয় করে চলেছেন ‘সুজাতা’। ‘রূপবান’, ‘ডাক বাবু’, ‘জরিনা সুন্দরী’, ‘অপরাজেয়’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘কাঞ্চনমালা’, ‘আলিবাবা’, ‘বেঈমান’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘প্রতিনিধি’ সহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে সোনালী যুগের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন তিনি।

জমিদার বাড়ির এই মেয়েটির নাম তন্দ্রা মজুমদার। এখন লোকে তাকে ‘সুজাতা আজিম’ নামেই চেনেন। কুষ্টিয়ার থানাপাড়া জমিদার বাড়ির মেয়েটি জন্মের মাত্র ছয় মাস পরই বাবাকে হারান। তাদের বিরাট জমিদার বাড়ি ছিল। কয়েক বিঘা জমির ওপর অবস্থিত ছিল সেই বাড়ি। এত বড় বাড়ি পুরো অঞ্চলে মনে হয় একমাত্র তাদেরই ছিল। সে বাড়িতেই শৈশব কেটেছে সুজাতার।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সুজাতা জানালেন সেই সব দিনের গল্প। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ

একুশে টিভি অনলাইন : কেমন আছেন?

চিত্রনায়িকা সুজাতা : অনেক ভালো।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনি কিংবদন্তি চিত্রনায়িকা। সেই ষাটের দশক থেকে চলচ্চিত্রের সঙ্গে পথ চলা শুরু। এখনও অভিনয় করছেন। আজকের এই দিনে পেছনে ফিরে যখন তাকান সেই সোনালী দিনগুলোর কথা মনে পড়ে নিশ্চই। কেমন অনুভুতি হয়?  

চিত্রনায়িকা সুজাতা : আসলে এক একটা বয়সে এক একটি সময় আসে। সেই ৬৩ সালে আমি যখন চলচ্চিত্রে আসি তারপর থেকে অনেক স্মৃতি রয়েছে। অনেক কিছু দেখেছি। এখনও দেখছি। আসলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সবাইকেই থাকতে হয়। তখন কিন্তু সাদা-কালোর যুগ ছিল। এখনকার মত ডিজিটাল ছিল না। তখন আমরা খুব কষ্ট করে অভিনয় করেছি। তখনকার সময়ে অভিনয়ে নামাটা বেশ কষ্টকর বিষয় ছিল। এখন কিন্তু সেটি নেই।

একুশে টিভি অনলাইন : যতোটুকু শুনেছি আপনি জমিদার পরিবারের মেয়ে। অভিনয়ের নেশা কিভাবে হলো?

চিত্রনায়িকা সুজাতা : বাবাকে হারাই সেই ছোট বেলায়। মা মাত্র ২৭-২৮ বছরে বিধবা হয়েছিলেন। আরও কিছু ঘটনা আছে আমাদের জমিদারি নিয়ে। সে কথা থাক। দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কিছুদিন পর মা আমাদের নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমালেন। আমরা প্রথমে পুরান ঢাকায় উঠলাম। তারপর ৪০ টাকা বাড়িভাড়ায় নতুন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে চলে এলাম। একদিন আলাপ প্রসঙ্গে সেই বাড়ির বাড়িওয়ালার ভাই মাকে বললেন, তার সঙ্গে মঞ্চের পরিচালক আমজাদ হোসেনের পরিচয় আছে। মা তাকে অনুরোধ করে বললেন, বাবা আমার ছোট মেয়েটাকে যদি অভিনয়ে দিতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হতো। মায়ের অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল, তার কোনো একটি সন্তান সিনেমার জগতে আসুক। তিনি উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা দেখতে খুব ভালোবাসতেন। সেসব দেখেই তিনি এই জগতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি আমাকেও এসব সিনেমা দেখতে উৎসাহিত করতেন। এমনকি আমার মা বাড়িতে সুচিত্রা সেনের অনুকরণে অভিনয়ও করতেন। একটু বড় হয়ে আমিও যখন সুচিত্রা-উত্তমের সিনেমা দেখতে শুরু করলাম, তখন থেকে মাকে আমার ‘গুরু’ আর সুচিত্রা সেনকে ‘আদর্শ’ হিসেবে মেনে এসেছি। তারপর তো আমজাদ হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হলো। তিনি আমাকে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দিলেন। ঢাকায় অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছি। পরবর্তীকালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা, নারায়ণ চক্রবর্তী, আমজাদ হোসেনের অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। নাজমুল হুদা বাচ্চু, ইউসুফ ইমাম, ইমাম ভাই নামে এক ভদ্রলোকের নাটকেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এসব মানুষের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।

একুশে টিভি অনলাইন : সিনেমায় এলেন কিভাবে?

চিত্রনায়িকা সুজাতা : ‘রূপবান’খ্যাত সালাহউদ্দিন সাহেব তার ‘ধারাপাত’ সিনেমার জন্য একটি নতুন মুখ খুঁজছিলেন। আমজাদ ভাই তখন তার সহকারী পরিচালক ছিলেন। যত দূর মনে পড়ে, তখনই আমি আমজাদ ভাই পরিচালিত ‘মায়ামৃগ’ নাটকে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছিলাম। তিনি আমার কথা সালাহউদ্দিন সাহেবকে বললেন। ধারাপাতের পরিচালক নাটকটির মঞ্চায়নের দিন আমার অভিনয় দেখতে এলেন। আমাকে দেখে তার পছন্দ হলো। অভিনয়ও ভালো লাগল। এর পরই তার সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে মনোনীত করলেন। তবে সিনেমায় একটি নাচের দৃশ্যের মাধ্যমে আমার প্রথম আগমন। সেই সিনেমাটির নাম ছিল ‘দুই দিগন্ত’; কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে প্রথম মুক্তি পেয়েছে ‘ধারাপাত’। এই আমার পথচলা শুরু হলো।’

একুশে টিভি অনলাইন : নায়ক আজিমের সঙ্গে বিয়ে হলো কবে?

চিত্রনায়িকা সুজাতা : ১৯৬৭ সালের জুলাইয়ে আজিম সাহেবের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরও সিনেমায় অভিনয় করেছি। আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো বাধা আসেনি। যদিও আমার শাশুড়ি একটু পর্দা করতেন। তবে কোনো দিন আমি মেকআপ মুখে শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে যাইনি। তারাও আমাকে মেয়ের মতো স্নেহ করেছেন। বিয়ের ১০ বছর পর ১৯৭৭ সালে আমাদের ঘর আলো করে সন্তান ফয়সাল জন্ম নিল। আমি সংসার ও চলচ্চিত্র—দুটি দিকই একসঙ্গে চালিয়ে গিয়েছি। কোনো অসুবিধা হয়নি।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনি যখন চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছেন সেই সময়টাকে স্বর্ণালী যুগ বলা হয়। এখনও সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু সে সময়টার মত নির্মাণ হচ্ছে না। বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

চিত্রনায়িকা সুজাতা : আসলে ভালো গল্প থাকতে হবে। তখন অনেক ভালো ভালো নির্মাতারা ছিলেন, এখনও আছে। এখনও ভালো সিনেমা হচ্ছে। তবে সময়কে ধরতে হলে যা যা প্রয়োজন তার অভাব রয়েছে বলেই এখন এই অবস্থা।

একুশে টিভি অনলাইন : অবসর সময় কি করেন?

চিত্রনায়িকা সুজাতা : আমি লেখালেখি পছন্দ করি। একটি উপন্যাস লিখছি। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক। সেটা নিয়েই অবসর সময়টা কেটে যাচ্ছে।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনাকে নিয়ে লিখতে গেলে আপনার অজানা সব কথা শুনতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তারপরও আমি আমাদের যতটুকু সময় দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

চিত্রনায়িকা সুজাতা : তোমাকেও ধন্যবাদ। একুশে টেলিভিশনকেও ধন্যবাদ।

সুজাতা অভিনিত সিনেমা

[আগুন নিয়ে খেলা, ‘মোমের আলো, ‘মেঘভাঙা রোদ, ‘ডাক বাবু, ‘মধুমালা, ‘সাইফুলমুলক বদিউজ্জামানসহ আরো অনেক সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলাম। আমার নামকরা ছবির মধ্যে আরো আছেনারায়ণ ঘোষ মিতার ‘এতটুকু আশা, মহিউদ্দিন ভাইয়ের ‘গাজী-কালু-চম্পাবতী, খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘রাজাসন্ন্যাসী, নুরুল হক বাচ্চুর ‘বড় বউ, বশির আহমদের ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন, সফদার আলী ভুঁইয়ার ‘কাঞ্চন মালা, ইবনে মিজানের ‘জরিনা সুন্দরী, ‘নাগিনীর প্রেম, নাজমুল হুদা মিঠুর ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন, আজিম সাহেব পরিচালিত ‘টাকার খেলা, ‘প্রতিনিধি, ‘বদলা, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল, হাসান ইমাম পরিচালিত ‘লালন শাহ, ইবনে মিজান পরিচালিত ‘তিতুমীর, ‘নাগিনীর প্রেম, ‘আমির সওদাগর, ‘ভেলুয়া সুন্দরী, রাজ্জাক পরিচালিত ‘বেঈমান, ‘আপনজন, সুমিতাদির (দেবী) ‘মোমের আলো, ‘মায়ার সংসার, ‘আদর্শ ছাপাখানা ইত্যাদি।]

এসএ/