২৩ হাজার পোস্ট-মর্টেম করেছেন যিনি
প্রকাশিত : ০৯:১৯ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৬:৫৯ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত কিছু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ডা. রিচার্ড শেফার্ড। ৯/১১ তে টুইন টাওয়ারে বোমা হামলায় নিহতদের থেকে শুরু করে ২০০৫ এর লন্ডন হামলার শিকাররা, ১৯৯৩ সালে খুন হওয়া সাড়া জাগানো স্টিফেন লরেন্স থেকে শুরু করে প্রিন্সেস ডায়ান’র মৃতদেহ- ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন তিনিই।
দীর্ঘদিন যাবত এই কাজ করার ফলে দেখা দিয়েছে নানা ধরণের মানসিক জটিলতা। ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট পেশা তার মানসিক স্বাস্থ্যকে কতটা প্রভাবিত করেছে তা প্রকাশ করতে বিবিসি’র ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার অনুষ্ঠানকে রিচার্ড শেফার্ড বলেন, ‘এক জায়গায় ২০০টি টুকরা টুকরা, ক্ষতবিক্ষত প্রাণহীন দেহ আপনার মনে একটি ছাপ রেখে যায়’।
‘মৃত্যুর সঙ্গে আমি খুবই পরিচিত, গত ৩৫ বছর ধরেই মৃত্যুর সঙ্গে আমার পরিচয়- কিন্তু এর মধ্যে এমন একটা সময় আসে যখন এটিকে দৈনন্দিন জীবন থেকে আলাদা করা সম্ভব হয় না’।
মানসিক সমস্যার সূত্রপাত
ডা. শেফার্ডে’র অনুমান অনুযায়ী তার ক্যারিয়ারে ২৩ হাজারেরও বেশি পোস্ট মর্টেম করেছেন তিনি।
এর মধ্যে অনেক দেহই ছিল গত কয়েক দশকে সংঘটিত হওয়া বহুল আলোচিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়া মানুষের মরদেহ। দীর্ঘদিন এই পেশায় থাকার কারণে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগতে হয়েছে তাকে।
ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট হিসেবে সাফল্যের শীর্ষে থাকা অবস্থায়, তার বয়স যখন ষাটের কোঠায়, এই সমস্যা শনাক্ত করতে সক্ষম হন তিনি। পানীয়ের গ্লাসে বরফের উপস্থিতি তাকে তার মানসিক সমস্যা শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বোমা হামলায় নিহতদের ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ড. শেফার্ড। সে সময় বরফ না থাকায় মৃতদেহগুলো শীতল রাখা সম্ভব হয়নি। সে সময় মানসিক সমস্যার সূত্রপাত হলেও ড. শেফার্ড মনে করেন এর গোড়াপত্তন হয় আরও বছর দশেক আগেই।
‘উদ্ভট এবং অস্বস্তিকর’
‘হাঙ্গারফোর্ড হত্যাকাণ্ডের পর মানসিক অস্থিরতার প্রথম ইঙ্গিতটা পাওয়া যায়,’ বলেন ড. শেফার্ড।
১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের হাঙ্গারফোর্ড এলাকায় বন্দুকধারী মাইকেল রায়ান নিজেকে হত্যা করার আগে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ড. শেফার্ডের প্রথম বড় কেস ছিল সেটি।
‘ওই ঘটনাটি খুবই উদ্ভট ও অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি তৈরি করেছিল আমার ভেতরে। যা পরবর্তীতে ক্রমশ বিস্তার লাভ করে,’ বলেন ড. শেফার্ড।
তার নতুন বইয়ে ডা. শেফার্ড লিখেছেন, এক সময় চোখ বন্ধ করতেও অস্বস্তি বোধ করতেন তিনি, কারণ তার মনে হতো চোখ বন্ধ করলে রক্তাক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার চিন্তাকে গ্রাস করবে।
‘পরিপাকতন্ত্র, স্যাঁতস্যাঁতে যকৃত, স্পন্দনহীন হৃদয়, ছিন্ন হাত, দম আটকানো রক্তের গন্ধ প্রতিনিয়ত আমার শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা দিতো’।
তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমার মনে হতো এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মনে হয় মৃত্যুই ভালো’। তবে পোস্ট-মর্টেম বা ময়নাতদন্ত যে কোনও নির্দয় বিষয় নয় তা’ও মনে করিয়ে দেন তিনি।
‘মানুষের মধ্যে ভুল ধারণাটা কেন তৈরি হয়েছে তা আমি বুঝি। কিন্তু এটিও একটি জটিল অস্ত্রোপচার আর এর ফলে মৃতদেহগুলো দেখতে কদর্য হয়ে যায় না’।
পেশাগত নৈতিকতা
ড. শেফার্ড বলেন, ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে মূল কাজটিই হলো সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করা। ‘সত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - আমি এই নীতিতে বিশ্বাসী,’ বলেন ড. শেফার্ড। ‘আমি মৃতের পরিবারকে সবচেয়ে নিখুঁত তথ্য জানানোর চেষ্টা করি’।
ড. শেফার্ড জানান, মৃতের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন তিনি হয়ে থাকেন তা হলো, ‘মৃত্যুর সময় কী সে ব্যথা অনুভব করেছিল?’
ড. শেফার্ড বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তরে পরিবারের সদস্যরা যতই আঘাত পাক না কেন, আমি সাধারণত সত্যটাই বলে থাকি’।
সূত্র: বিবিসি
একে//