কম খরচে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা
প্রকাশিত : ০৫:২৯ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৫:৩৫ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার
অনেকেই বন্ধ্যাত্বের কারণে মা হওয়ার সৌভাগ্য হারিয়ে ফেলেন। তবে আধুনিকযুগে বিজ্ঞানের হাত ধরে টেস্ট টিউব বেবি ও সুপ্রজননবিদ্যার প্রয়োগে বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে এখন অনেক মা হতে পারছেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই শুধুমাত্র খরচের কারণে বন্ধ্যাত্ব দূর করে মা হওয়ার সুবিধা নিতে পারছেন না। আবার অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিষয়টি না জেনে শুধুমাত্র বেশি খরচ হবে ভেবেই এমন চিকিৎসা করান না। এটাই এখন অনেক বেশি কষ্ট, দুঃখেরও।
তবে খুশির সংবাদ, আগের তুলনায় এখন খরচ কিছুটা কম হয়েছে। এর কারণ তিনটি।
প্রথমত, আগের তুলনায় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির দাম অনেকটা কম হওয়ায় চিকিৎসার খরচ কমেছে। দ্বিতীয়ত, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান উন্নত হওয়ায় কম ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। তৃতীয়ত, জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়া শুধুমাত্র কাউন্সেলিং বা দু-একটা ওষুধ দিয়ে সহজে বাবা-মা হচ্ছেন অনেক দম্পতি। এছাড়াও আগের চেয়ে সংখ্যায় রোগী বেশি আসায় খরচ কম পড়ছে।
এবার বলা দরকার কে বা কারা চিকিৎসা করালে উপকৃত হবেন। (১) নারীর বয়স যদি ৩৮ বছরের বেশি হয়। (২) পুরুষের জটিল সমস্যা থাকলে। (৩) নারীর ডিম্বনালীতে যদি কোনও সমস্যা থাকে। (৪) স্ত্রীর শরীরে মারাত্মক ধরনের এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে।
গবেষকরা বলছে, যে সমস্ত রোগী অল্প ওষুধেই চিকিৎসায় সাড়া দেন তাদের টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসার খরচ কমই হয়। আজকাল সামান্য ওষুধে হয়তো ডিম্বাণু কম তৈরি হয় কিন্তু তার গুণমান বেশ ভাল হয়। আবার অল্প ওষুধে ডিম্বাণু উৎপাদন হওয়ায় জরায়ুর দেওয়ালের ক্ষতি হয় না। আর তাই শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনের পর ভ্রূণ তৈরি হলে সেটি প্রতিস্থাপনের পরেও জৈবিক নিয়মে জরায়ু সঠিকভাবে কাজ করে। তবে স্বল্প খরচে অল্পসংখ্যক ভ্রূণ তৈরি হওয়ায় গর্ভধারণের সাফল্য কিছুটা কম হয়।
সঠিক পরিমাণে ক্লোমিফেন সাইট্রেট ও কম পরিমাণে গোনাডোট্রপিন ইনজেকশন স্বল্প খরচে খুব ভাল কাজ দিচ্ছে। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় গোনাডোট্রপিন ও অ্যান্টাগনিস্ট এবং অ্যাগনিস্ট ট্রিগার দিয়ে তৈরি হওয়া ভ্রূণ প্রতিস্থাপন না করে হিমায়িত করে রেখে পরের মাসে প্রতিস্থাপন করলে ভাল সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে রোগীর শরীরে হরমোন নিঃসরণ থেকে শুরু করে জীবনশৈলীও বেশ খানিকটা প্রভাব ফেলে চিকিৎসায় সাফল্যর ক্ষেত্রে।
বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় সাফল্য কিন্তু রোগীর সহযোগিতা ও তথ্য প্রদানের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বিষয়গুলি হল- (ক) বন্ধ্যাত্বের সময়সীমা এবং অতীতে কোনও প্রেগন্যান্সি এসেছিল বা নষ্ট হয়েছিল কি না। (খ) রোগিণীর বয়স, ওজন ও উচ্চতার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য (বিএমআই) (গ) মাসিকের দুই বা তিনদিনে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন ও অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন এবং ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর ঘরের আকার-আয়তন ও পরিমাণ, (ঘ) জরায়ুর দেওয়ালের গুণগত মান ও ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের দিন।
চিকিৎসার একটা গোপন বিষয় জানানো প্রয়োজন, তাহলে ভুল ধারণা কিছুটা দূর হবে। অল্প ওষুধ দিয়ে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করলে এবং একটি মাত্র নির্বাচিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করলেই যমজ সন্তানের সমস্যা এড়ানো যায়। এই চিকিৎসায় শিশুর জন্মগত ত্রুটি খুব কম। কারণ, প্রতিস্থাপনের আগে ভ্রূণের ক্রোমোজমের পরীক্ষা হয়। জন্মগত ত্রুটির জন্য বেশিরভাগটাই দায়ী হচ্ছে বাবা বা মায়ের ক্রোমোজোমাল ত্রুটি। সমীক্ষা বলছে, যেসব দম্পতির ত্রুটিপূর্ণ সন্তান হয় তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স বেশি, চেহারা মোটা এবং রক্তচাপ, ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা আছে বা ডিম্বাণু, শুক্রাণুর গুণমান খুব খারাপ।
৪০ বছরের আশেপাশে বয়স আছে এমন একজন নারীর শরীরে যদি বড় মাপের কোনও জটিলতা না থাকে তবে বন্ধ্যাত্ব দূর করার প্রথমবারের চিকিৎসা এখন ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। এক্ষেত্রে নিডল, ক্যাথিটার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের জন্য ১৫ হাজার এবং ওষুধ লাগবে ৩০-৫০ হাজার টাকা। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা লাগছে। এছাড়াও ইউএসজি এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়ে থাকে। সন্তানলাভে এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা ধরলেও উন্নতমানের চিকিৎসার মাধ্যমে সাফল্য পেতে আনুমানিক এক লক্ষ টাকা খরচ পড়ছে।
তবে ওই জ্যোতি আলুর দামে কখনওই চন্দ্রমুখী পাওয়া যায় না। ভাল ফলের জন্য একটু বেশি দাম দিতেই হয়। কিন্তু আমাদের একটা টার্গেট রয়েছে, তা হল অচিরেই বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে খরচ মাত্র ৫০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা। আমার স্থির বিশ্বাস, শীঘ্রই আইভিএফ-এর খরচ নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালে নিয়ে আসা খুব একটা কঠিন হবে না।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন।
কেএনইউ/