নয় কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৮৮ শতাংশই মোবাইল ব্যবহারকারী
শাওন সোলায়মান
প্রকাশিত : ০৬:২৪ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:৫২ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন নয় কোটির বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশ গ্রাহকই মোবাইল ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় নয় কোটি পাঁচ লক্ষ্য মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন।
আজ বৃহস্পতিবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এসব তথ্য প্রকাশ করে বিটিআরসি। তবে ইন্টারনেটের মোট ব্যবহারকারীর মধ্যে সিংহভাগই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। প্রায় ৮ কোটি ৪৬ লক্ষ্য মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে ওয়াইম্যাক্স এবং আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ও পিএসটিএন (পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক) এর দেওয়া ইন্টারনেট সেবা থেকে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫৮ লক্ষ ১৬ হাজার।
এই হিসেব অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশ গ্রাহকই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। আর ডেস্কটপ অথবা ল্যাপটপ তথা ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন প্রায় ১২ শতাংশ গ্রাহক।
একই সাথে কিউবি বা বাংলালায়নের মতো ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুর দিকেও প্রায় ৮৮ হাজার ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহারকারী থাকলেও এখন তা প্রায় ৮৩ হাজার।
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা এমন একটি সংখ্যায় এসে দাঁড়াবে এমনটা অনেক আগেই বলেছিলাম আমরা। এখন যারা একটি হাত নাড়াতে পারে তারাই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ১৬ কোটি জনবলের মধ্যে ৯ কোটি গ্রাহক তো গ্রাহকই”।
ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যার এমন বৃদ্ধিতে সরকারকে কৃতিত্ব দিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আজ যে এত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তার অবকাঠামো কিন্তু সরকার তৈরি করেছে। আজকে যে অবস্থা হয়েছে সরকার সেই অবকাঠামো তৈরি করেছে বলেই এই অবস্থায় দাড়িয়েছে। আরও অবকাঠামো উন্নয়ের যেসব প্রকল্প পাইপলাইনে আছে সেগুলো হয়ে গেলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আগামী পাঁচ বছর পর দেখবেন একদম সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু ছাড়া আর সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে”।
এদিকে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যার তুলনায় ব্যক্তিগত কম্পিউটার ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে কম হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছে, কম্পিউটার ভিত্তিক ইন্টারনেটের ব্যবহার আয়মুখী। ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের মাধ্যমে দেশে বসেই ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে বিদেশ থেকে আয় করতে পারেন ফ্রিল্যান্সাররা যা মোবাইল দিয়ে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বাজারের জন্য ফ্রিল্যান্সারদের আরও উতসাহিত করতে ব্যক্তিগত কম্পিউটার ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ এবং ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান বিজকপ এর প্রতিষ্ঠাতা নাহিদ হাসান বলেন, “আসলে গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের উদ্দেশ্যের ভিন্নতার ওপর ডিভাইস ভিত্তিক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় তারতম্য হয়। তবে ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন ভিত্তিক আয়ের জন্য ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের বিকল্প এখনও হয়ে উঠতে পারেনি মোবাইল। মোবাইল দিয়ে হয়তো টুকিটাকি কিছু কাজ খুব দ্রুত করে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, আমাদের পুরো দেশে ব্রডব্যান্ডের কানেকটিভিটি এখনও অনেক দুর্বল। রাজধানী ঢাকা বা জেলা শহরগুলোর বাইরে ব্রডব্যান্ড সংযোগ এখনও সেভাবে পৌছায়নি”।
অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে কম্পিউটারে ইন্টারনেট চালানো বেশ খরচের ব্যাপার। তাই ডেস্কটপ ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হলে সাশ্রয়ী মূল্যে ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন নাহিদ হাসান।
//এস এইচ এস//