ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

পাঠ্য বই হতে হবে চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী: আলী আহসান

প্রকাশিত : ০৭:১৩ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:৪৩ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার

একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা, চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর ৩ থেকে ৪ বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। করতে হচ্ছে কোচিংও। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলদটা আসলে কোথায়?

অন্যদিকে দেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের বা জনসংখ্যার বোনাস যুগ অতিবাহিত করছে। যেখানে দেশের বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু কতটা কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে সে কর্মক্ষমের সুযোগ?

এসব প্রশ্নের সুলোক সন্ধানে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আলী আহসানের।

তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যে হারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করছে সে হারে চাকরি হচ্ছে না। কারণ আমাদের চাকরির বাজার সংকীর্ণ। আমাদের ছেলে-মেয়েদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের পরিধিও কম। তারা সর্টিফিকেট নিচ্ছে কিন্তু ভিতরে জ্ঞান ও দক্ষতার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

প্রকৃত শিক্ষিত ও জ্ঞানী না হওয়ার কারণে তারা চাকরি পাচ্ছে না। তাদের বদলে বাহিরের লোক এসে চাকরির বাজার দখল করে নিচ্ছে। তাই ছেলে-মেয়েদের চাকিরির উপযোগী করে তুলতে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে।  বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। চাকরির বাজারের পরিবর্তীত চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যবই তৈরি করতে হবে।

দুই পর্বের সাক্ষাতকারটি প্রথম পর্ব আজ পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: জনসংখ্যার বোনাস যুগ অতিবাহিত করছে দেশ। অথচ সরকারি হিসেবে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি। দেশের এই বিশাল জনশক্তিকে কেন কাজে লাগাতে পারছি না? মূল সমস্যা ও সমাধান কোথায়? কেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রি নেওয়ার পরও চাকরি মিলছে না?

আলী আহসান: আমাদের শিক্ষিতের হার বাড়ছে কিনা বলতে পারবো না, তবে সার্টিফিকেটধারীর সংখ্যা বাড়ছে এটা বলতে পারি। আপনি যেখানেই যাবেন, হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্টকাটে পড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আমরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। তাতে অবিজ্ঞতা হলো যে সর্টকাটে পড়াতে পারলেই ভালো শিক্ষক। যারা বেশি পড়ায় বছর শেষে দেখা যায় তার গ্রেট অনেক নিচে নেমে গেছে। বেশি পড়ানো শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে মূল্যায়ন করে না।

কাজেই আমরা একেবারেই শর্টকাটে চলে গেছি। গত বছর পরীক্ষায় যতটুকু পড়েছিল, শিক্ষক পড়িয়েছে ৫ পাতা, আর সিলেবাসে আছে ১০ পাতা। এসব কিছু কাটছাট করে আড়াই পাতা পড়েই আমাদের ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে। যার কারণে তাদের জ্ঞানের প্রসার ঘটছে না। সর্টকাটের কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের জ্ঞান ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে। আমাদের প্রাইমারি লেভেল থেকে সেকেন্ডারি লেভেল পর্যন্ত  ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাসিকে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। যার কারণে তারা উপরে এসে হাবিডুবি খাচ্ছে। চাকরির জন্যও যোগ্য হয়ে উঠছে না।

 

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: জনসংখ্যার বোনাস যুগ (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) এর সুযোগ কাজে লাগাতে আমাদের করণীয় কি হতে পারে?

আলী আহসান: ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের অ্যাডভ্যান্টেজ অনেক দেশই নিয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধের পর বাঁচ্চার সংখ্যা হঠাৎ করে অনেক বেড়ে গেল। পরে ওই বাঁচ্চারাই বড় হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিল। আমাদের দেশেও তেমন একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের সে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজের উপযোগী দক্ষ করে তুলতে পেরেছি। না পারি নাই। চাকরির বাজারের পরিবর্তীত চাহিদা অনুযায়ী কি তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। পারি নাই।

আমাদের গার্মেন্টসগুলোতে যান। দেখবেন আগে যে কাজগুলো মানুষ করতো এখন তার অনেকটা ম্যাশিনে করছে। আর সেই একটি ম্যাশিন ১শ’ মানুষের কাজ করছে। ফলে ম্যাশিনের ওই কাজ শিখে বসে থাকলে তো বেকারই থাকতে হবে। কারণ যে কাজ এখন ম্যাশিনে হচ্ছে তার জন্য তো কোন প্রতিষ্ঠান ইমপ্লয়ি নিয়োগ দিবে না। তবে ইমপ্লয়িকে কি করতে হবে। ওই ম্যাশিন পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবেই আমাদের দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে এতো শিক্ষিত যোগ্য লোক, অথচ পোশাক শিল্পসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বিদেশি এক্সপার্টদের বেশি বেতনে আনা হচ্ছে। কেন আমরা সে জায়গাটা নিতে পারছি না?

আলী আহসান: আগেই বলেছি গার্মেন্টসে এখন একটি ম্যাশিন কাজ করছে ১শ’ লোকের। তাই আমাদের কাজের পরিধি কমে আসছে। যতদিন আমরা ওই ম্যাশিন পরিচালনার প্রশিক্ষণ না নিতে পারছি। ততদিন বেকারের সংখ্যা বাড়বে। আর ম্যাশিন পরিচালনা করবে বিদেশীরা এসে। তারা নিয়ে যাবে দেশের বড় একটি অংশ। কারণ তাদের শিক্ষার বিষয়ে ম্যাশিন পরিচালনা ছিল। তারা শিক্ষার সঙ্গে শিখেছে কিভাবে ম্যাশিন পরিচালনা করতে হয়। আমাদের ক্রিয়েটিভ প্রকৃত জ্ঞানিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে তারাই আমাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে ৬ বছর পর্য্যবেক্ষণে রাখা হবে।পর্য্যবেক্ষণকালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে গিয়ে আমাদের কী ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা লাগতে পারে?

আলী আহসান: উন্নয়নশীল হলে আমাদের কিছু ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে। যেমন আমাদের অর্থনীতির প্রাণ গার্মেন্টস খাত বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়।যেগুলো উঠিয়ে নেওয়া হবে। তাই আমাদের যাতে সেটা না উঠাতে পারে তার জন্য দেনদরবার করতে হবে। আর একান্ত উঠিয়ে নিলে তার বিকল্প  কিছু বের করতে হবে। আবার আমাদের স্বল্পসুদে যে বৈদেশীক ঋণ পায়তাম তাও উঠে যাবে। সে জন্য আমাদের বিকল্প ঋণের উৎস্য খুঁজতে হবে। এছাড়া আমাদের প্রকৃতিক দুর্যোগসহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে। তা না হলে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েও আমাদের কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে।

আরকে/ এআর /