পায়েল হত্যার বিচার দ্রুত সময়েই হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১২:০২ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলের পরিবার ও স্বজনেরা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের লবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বজনদের এই সাক্ষাৎ হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইফ আ স ম ফিরোজ, আাওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন, পায়েলের বাবা গোলাম মোস্তফা, মা কোহিনূর বেগম, পায়েলের তিন মামা কামরুজ্জামান চৌধুরি টিটু, দীপু চৌধুরি, দৈনিক সমকালের চট্টগ্রামের ব্যুরো চীফ সাংবাদিক সরোয়ার সুমন, একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সাংবাদিক কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক।
এ সময় পায়েলের বাবা মা’র মুখে পায়েল হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা শুণে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী গভীর মনোযোগ দিয়ে পায়েলের মা বাবার কথা শুনেন এবং তাদেরকে সান্তনা দেন।
আবেগতাড়িত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেও স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি। শেষ বারের মতো আমি আমার পরিবারের স্বজনদের দেখতে পারিনি। আপনাদের বেদনা আমি বুজতে পারি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পায়েল হত্যার বিচার হবে।
পায়েলের বাবা দ্রুত সময়ের মধ্যে ছেলের বিচার দাবি করলে, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি আপনার কর্মস্থলে ফিরে যান, আমরা তো দেশে আছি। এটা আমরা দেখবো। এ হত্যাকান্ডের বিচার হবেই।’
এই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হচ্ছে কী না? তা নিজেই নজরদারি ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন হয় সে ব্যাপারে স্বজনদের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, সাইদুর রহমান পায়েল গত ২১ জুলাই দিনগত রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে হানিফ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব- ৯৬৮৭ নম্বরের গাড়িতে রওনা করে। রাত ৪টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভবেরচর ব্রিজের কাছে যানজটে পড়ে বাস৷ এ সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাস থেকে নীচে নামে পায়েল৷ এরমধ্যেই যানজট কিছুটা কমলে বাস এগোতে থাকে৷ পায়েল দৌড়ে এসে বাসে উঠতে গিয়ে বাসের দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে নাকে মুখে আঘাত পায়৷ তাঁর নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হয়৷ তখন সুপারভাইজার মনে করে মারা গেছেন৷ সুপারভাইজার ড্রাইভারকে এ কথা জানায়৷ বলে, ওস্তাদ মনে হয় মরে গেছে। নড়াচড়া করেনা। পরে তারা মনে করে তাদের কোনো বিপদ হবে। তাই ড্রাইভার, সুপার ভাইজার ও হেলপার এই তিনজন মিলে মাত্র ৫০ গজ দূরে ভবেরচর ব্রিজের ওপর নিয়ে তাকে নদীতে ফেলে দেয়। পায়েলের পরিবারের সদস্যরা পরের দিন সকালে তার সন্ধান না পেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। ২৩ জুলাই সোমবার সকালে গজারিয়ার ফুলদি নদীতে পায়েলের মরদেহ ভেসে ওঠে।
এরপর পায়েলের মামা গোলাম সারোয়ারদী বিপ্লব বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় হানিফ পরিবহনের বাসচালক জামাল হোসেন (৩৫), সুপারভাইজার জনি (৩৮) ও হেলপার ফয়সালকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৫ জুলাই তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর জনি ও জামাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, কত নির্মমভাবে তারা পায়েলকে হত্যা করে মরদেহ গুমের চেষ্টা করেন।
অভিযুক্ত দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরেও, মামলার চার্জশিট না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পায়েলের পরিবার। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি করেছে পরিবার।
উল্লেখ্য, নিহত পায়েলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার হরিশপুর ইউনিয়নে। সে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলো। তার মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম ও ঢাকাতে দোষীদের বিচারের দাবিতে নানান কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন।
কেআই/