অস্বচ্ছলতার মধ্যেই জীবন সবচেয়ে আনন্দের ছিল: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৪:০১ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৭৯তম জন্মদিনের অনুষ্ঠান। জন্মদিনে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও ভক্ত-অনুরাগীরা। তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হুবহু বক্তব্যের কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।
গত ৩৫ বছর ধরে কে বা কাহারা অদৃশ্য থেকে আমার এ জন্মদিনের অনুষ্ঠানটার আয়োজন করে। আমি তাদের কাউকে কাউকে কখনও কখনও দেখি, কাউকে কাউকে দেখিও না, জানিও না। তো বুড়ো মানুষদের জন্মদিন এমনিতেই একটা বিরক্তিকর ব্যাপার। তবুও এর মধ্যে যে কিছু ভালো যে একেবারে নাই, তা না। তবে আমার জন্যে যেটা সেটা হচ্ছে একটা আতঙ্কের। আতঙ্ক এই জন্য যে প্রত্যেক বছর জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটা করে বক্তব্য করতে হবে। ৩৫ বছর আমার জন্মদিনে এক বিষয়ের উপর আমি ৩৫টি বক্তব্য করেছি। আর কত এটা পারা যায়। আমি যদি তোমাদের মতো তরুণ-তরুণি হতাম। তাহলে এটা হয়তো পারা যেত। কারণ মুস্তফা আলী বলেছেন, আজকালকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মাথায় এতো প্যাচ, যে মাথার ভিতর পেরেক ঢুকিয়ে টেনে বের করলে স্ক্রু হয়ে বের হয়ে আসে। কিন্তু আমাদের বুড়োদের বেলাইতো ব্যাপারটা উল্টো। আমাদের স্ক্রু ঢুকিয়ে টেনে বের করলে পেরেক হয়ে বের হয়। আমাদের তো সব সাদা।
আমি নিজের কথা খুব একটা বলি না। আজকে দু-একটা নিজের কথা বলি। নিজের কথার একটি হচ্ছে যে আমি সেই ছেলেবেলা থেকে- কেন যে আমারে মনে এসেছিল আমি জানি না। আমার মনে হয়েছিল যে আমি সারাজীবন অন্যদের জন্য কাজ করবো। তো পরে দেখলাম যে অন্যদের জন্য কাজ করার আবার অসুবিধাও আছে। অন্যদের জন্য কাজ করতে গেলে নিজের জন্য টাকা রোজগার করা যায় না। আজকাল যারা টাকা রোজগার করে তাদের জীবন তো দেখি। সকাল ৮টার সময় দৌড়াতে দৌড়াতে অফিসে ছুট লাগায়। সারাদিন অফিস করে কেউ ৮টা কেউ ৯টার সময় ফেরে। তাহলে তো ১২-১৩ ঘণ্টা চলেই গেল। তারপর ঘুমায় ৬-৭ ঘণ্টা। তারপর কাজটাজ করে। এটা সেটা করে। আবার দৌড় দেয়।
আগে ব্যাংকারদের বলা হতো যে তোমার ছেলে কত বড়। তো বলে যে এতোটুকু। কারণ যখন বাবা অফিসে যায় তখনও সন্তান ঘুমায়। আর যখন ফেরে তখনও সে ঘুমিয়ে পড়েছে। সুতরাং তাকে উচু অবস্থায় দেখা যায় না। তো আমাদের জীবন তো একটা সময়, সেই সময়-ই যদি চলে গেল তাহলে জীবনের কি থাকলো। সেই নাসির উদ্দিন হোজ্জার কথাটা মনে পড়ে গেলে আমার হাঁসি পায়। যে এটা যদি সময় হয়, তো জীবন কোথায়। আর সময় যদি জীবন হয় তো সময় কোথায়। এইভাবেই তো আমাদের জীবনগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি তখন ঠিক করেছিলাম যে একটা গড়পড়তা জীবন আমি যাপন করবো। শেষ পর্যন্ত একটা চাকরিও পেলাম। বেতন ২৫০ টাকা। আর ৩০ টাকা হচ্ছে মহার্ঘ ভাতা। মোট হলো ২৮০ টাকা। তৃতীয়টা বড়ই দু:খজনক। সেটা শুধু যারা বিয়ে করেছে তাদের জন্য। বিয়ে করলে ১৮ টাকা অতিরিক্ত। যেন একটা বউ ১৮ টাকা তার দাম। আমার তখনও বিয়ে হয়নি। আমার সামনে দিয়ে এরা কড়কড়ে ১৮টাকা গুণে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। সেই ক্ষোভে এবং ক্রোধে আমি বিয়ের জন্য উতলা হয়ে উঠলাম। তো এখন চাকরি পেলাম। চাকরিতে বেশ আরামে আছি। সাহিত্য আন্দোলন করছি। টেলিভিশন করি। সবকিছু করি। কিন্তু একটা অস্বচ্ছল জীবন। যদিও আনন্দ কম ছিল না। আমার মনে হয় আমর জীবনে যখন আমি সবচেয়ে অস্বচ্ছলতায় ভুগেছি, তখন আমার জীবন সবচেয়ে আনন্দময় ছিল।
অনুলেখক-রিজাউল করিম
আরকে//