ইটস এ থ্যাংকলেস জব
শাওন সোলায়মান
প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার
রাজধানীতে দায়িত্বপালনরত ট্রাফিক পুলিশ। ছবি তুলেছেনঃ নুরে আলম
প্রায় দুই লক্ষ জনবলের দক্ষ বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভয়াল ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার গৌরব এই পুলিশ বাহিনীর। সেই পুলিশ বাহিনীর চাকরিকেই বলা হয় ‘থ্যাংকলেস জব’। আর দশটি সাধারণ চাকরি থেকে একেবারেই ভিন্ন এবং চ্যালেঞ্জিং এই পেশার পেশাগত দায়িত্বে মাঝে মাঝেই জীবনের ছোট ছোট ব্যক্তিগত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন পুলিশ সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার। শেষ ঈদ উল ফিতরে ছুটি পাননি তিনি। পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিজ জেলা শরীয়তপুরে পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি ডিএমপি ট্রাফিক এর পশ্চিম বিভাগের এই সার্জেন্ট। ঈদ এর দিন গণভবনে ডিউটি ছিলো তার। ঈদের দিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ঝোটন সিকদার বলেন, “গত ঈদ উল ফিতরে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত গণভবন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসা ভিআইপি অতিথিদের আসা যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে দায়িত্ব পালন করেছি। ঈদের নামাযটাও পড়তে পারিনি”।
রাজধানীর বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) ইয়াসিন গাজী। গত ঈদ উল আযহা এর অল্পকিছু দিন আগে বাড্ডা থানায় যোগদান করেন হলি আর্টিজান ঘটনায় জঙ্গিদের প্রতিরোধকারী প্রথম দলের সদস্য ও গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক ইয়াসিন গাজী। ঈদ এর দিনটি কাটে নতুন কর্মস্থলের সহকর্মীদের নিয়ে। ইটিভি অনলাইনকে ইয়াসিন গাজী বলেন, “বিষয়টা এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। চাকরির শুরুর দিনগুলোতে খারাপ লাগতো। এখন তো এটাই একটা পরিবার। এমনও ঈদ গেছে যে পরিবারই থানায় চলে এসেছে। এভাবেই আমাদের দিন যায়”।
দায়িত্বের প্রতিশ্রুতিতে এভাবেই দিন কাটে পুলিশ সদস্যদের। জন্মদিনে ছুটি পাননি ডিএমপি’র তরুণ সার্জেন্ট আবু তালেব। অসুস্থ মেয়ের খোঁজখবর মুঠোফোনেই নিতে হয় কনস্টেবল মোহাম্মদ তোফাজ্জলকে। সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার বলেন, “অন্য অনেক ধরনের সরকারি বা বেসরকারি পেশায় অন্তত ঈদের ছুটি পাওয়া যায়। এছাড়াও ব্যক্তিগত কারণেও ছুটি পাওয়া যায়। কিন্তু পুলিশে এসব ব্যক্তিগত আনন্দ বা বিনোদনের অবকাশ নেই। অবশ্য সবকিছু জেনেই এই দায়িত্ব নিয়েছি আমরা”।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী ২০ দিন সাধারণ ছুটি পান পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও আরও ৪৪ দিন ছুটি পেতে পারেন তারা। ডিএমপি’র ট্রাফিক (পশ্চিম) এর উপ কমিশনার লিটন সাহা বলেন, “প্রতি ১৩ দিন দায়িত্ব পালনের জন্য ১ দিন এবং ১১ দিনের জন্য অর্ধদিবস ছুটি পায় পুলিশ সদস্যরা। সেই হিসেবে সাধারণ ২০ দিন ছুটির সাথে আরও ৪৪ দিন ছুটি পেতে পারেন একজন পুলিশ সদস্য। কিন্তু দায়িত্বের কারণে সেগুলোর সিংহভাগই আমরা সেসব ছুটি কাটাতে পারি না”।
তবে এতকিছুর পরেও সাধারণ মানুষের মাঝে পুলিশের ‘ইমেজ’ এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। কতিপয় ঘটনায় দায়িত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ ন্যূনতম একটা ‘ধন্যবাদ’ও অনেক সময় পান না পুলিশ সদস্যরা। একদম মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে সার্জেন্ট মোখলেসুর রহমান বাবু বলেন, “আমরা পোশাকধারী; তাই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও বেশি। তবে এটা এমন এক পেশা যেখান থেকে সাধারণ জনগণকে সরাসরি সেবা করার সুযোগ পাই। ভাল-মন্দ তো থাকবেই। তাই কী পেলাম তার বদলে কী দিতে পারলাম সেটিই আমরা চিন্তা করি”।
আর ডিএমপি’র উপ কমিশনার লিটন সাহা বলেন, “আমরা পুলিশেরা যে কী কাজ করি তা পুলিশে কেউ কাজ না করলে বুঝবে না। পুলিশে যোগদানের আগে আমিও বুঝিনি। তবুও অভিযোগ তো থাকেই। আর সেগুলোর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। স্পট পানিশমেন্ট (তাৎক্ষণিক সাজা) এর মতো পদক্ষেপ নেই আমরা। তারপরেও দিনশেষে ‘ইটস এ থাংক্সলেস জব’।
//এস এইচ এস//এসএইচ/