আরও জানার আগ্রহ মৌসুমীর
জুবাইর উদ্দিন, চবি
প্রকাশিত : ১১:১৫ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার
ঘুরাঘুরি, আড্ডা, গান শোনা, বই পড়া, অ্যানিমেশন দেখা আর চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটা পড়াশোনায়ও খুব ভালো। নাম মৌসুমী ভৌমিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন। সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে তার ছিল ৩.৭২! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, এ রকম সিজিপিএর পাশে আশ্চর্যবোধক চিহ্নটা বেমানান দেখায় না।
ফেনীর মেয়ে মৌসুমি ২০০৯ সালে এসএসসি এবং ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করেছেন সীতাকুণ্ড গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হন। ক্যারিয়ারে ক্লিনিক্যাল সেক্টরে কাজ করার ইচ্ছা এবং এ পেশার মাধ্যমেই পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য অবদান রাখতে চান মৌসুমী।
মৌসুমি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক থ্রি মিনিট থিসিস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেন। অস্ট্রেলিয়ার দি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের সহযোগিতায় আয়োজিত এই বিখ্যাত প্রতিযোগিতায় দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এর আগে থ্রি মিনিট থিসিস প্রতিযোগিতাটি বিশ্বের ৯০টি দেশে অনুষ্ঠিত হত। মূলত মাস্টার্স, পিএইচডি ও এমফিলে যারা গবেষণা করে তাদের জন্যই এটি। এই গবেষণাটি তিন মিনিটের মধ্যেই এমনভাবে উপস্থাপন করতে হয় যাতে সর্বস্তরের লোকজন বুঝতে পারে। যেখানে কোনওভাবেই সায়েন্টিফিক ও টেকনিক্যাল টার্ম ব্যবহার করা যায় না।
মৌসুমী এমন কিছু করতে চায়, যা করলে মানুষজন তাকে চিনবে তার কাজের মাধ্যমে। এমএসসি করার জন্য ব্রিটেন এবং জার্মানিতে সুযোগ পেলেও দেশেই কাজ করার মানসে দেশের থিসিসে মনোযোগ দেয় সে। যা করবে দেশের জন্য করবে। তার ইচ্ছে আছে, দেশের বাইরে এম এসসি করার। তবে কখনও তার ইচ্ছে হয়নি দেশের বাইরেই থেকে যাওয়ার।
মৌসুমী এখন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস এ থিসিস করছেন। তার থিসিসের বিষয়টার ফলাফল হলো যদি সে জিন আর মানুষের ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে ডায়বেটিসের কোনও সংযোগ পায়, তাহলে এই জিনকে টার্গেট করে, অ্যান্টি ডায়াবেটিক ড্রাগ ডিজাইন করতে পারবে এবং যাদের ডিএনএ তে এই জিনটির পলিমরফিজম আছে, কিন্তু ডায়াবেটিস নেই, তাদেরও মলিকুলার ডায়াগনোসিস এর মাধ্যমে টেস্ট করে প্রিডিক্ট করা যাবে এবং যাদের ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি আছে ডাক্তার তাদেরকে সেভাবে প্রেস্ক্রাইব করতে পারবেন বা তাদের সাজেশন দিতে পারবেন। কিভাবে লাইফ স্ট্যাইল মেইন্টেইন করলে, ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যাবে।
গবেষণায় মৌসুমীকে তার দুই সুপারভাইজার চবির জিইবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম এবং বিইউএইচএস এর সহযোগী অধ্যাপিকা ড. সেলিমা আখতার ছাড়াও সে জোর দিয়ে বলেন মামুন মিয়ার কথা। বিইউএইচএস এর লেকচারার। যিনি সার্বক্ষনিক তাকে যে কোনও ধরণের পরামর্শ দেন কাজের ব্যাপারে। যদিও কাজটা তার কিন্তু ল্যাবমেটরা সবসময় তার কাজে সাহায্য করেন।
মৌসুমি সামাজিক কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এইটাই তার প্রথম কোনও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ এবং এই প্রথম প্রচেষ্টাতেই সে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। সে মনে করেন আসলেই এটা অনেক বড় পাওয়া। এই অর্জন সামনে তাকে আরও ভালো কিছুতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করবে।
জীবনের কোনও স্বপ্ন ছিলো না মৌসুমীর। বাবা মায়ের নিরলস পরিশ্রমেই এই সাফল্য। এখন তার ইচ্ছে আছে মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে কাজ করার, জিন, ডিএনএ আরও অনেক কিছু। এমন কিছু করার, যা দিয়ে মানুষকে কিছুটা হলেও উপকৃত করতে পারবে।
বাবা অবসরপ্রাপ্ত কাস্টম অফিসার মিন্টু রতন ভৌমিক আর মা গৃহিণী প্রতিমা ভৌমিক কখনোই মেয়েকে পড়াশোনার জন্য চাপ দেননি। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মৌসুমী ভৌমিক সব সময় নিজের আগ্রহে পড়েছেন। পরীক্ষার ফল নয়, দিন শেষে তার কাছে বড় হলো, ‘আমি কী জানলাম।’
একে//