ডাকসু নির্বাচন
আশাবাদী শিক্ষার্থীরা, সংশয়ে সাবেক নেতারা
তবিবুর রহমান
প্রকাশিত : ০৬:৫১ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসাবে ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসন আমলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ২৭ বছর পার হলেও নির্বাচনের দেখা মিলছে না। তবে সম্প্রতি ডাকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই আবারও আলোচনা আসছে ডাকসু।
নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশাবাদী হলেও নানা সংশয় দেখছেন ডাকসুর সাবেক নেতারা। সাবেক নেতাদের সঙ্গে কিছুটা হলেও সংশয়ের কথা প্রকাশ করছে বর্তমানে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারাও। তবে পরিবেশ পরিষদ সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন আগামী মার্চ মাসে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা তৈরি কাজ চলছে। আগামী মাসে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় চলার পেছনে অন্যতম বড় অংশীজন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের মাত্র দুই শতাংশ বরাদ্দ থাকে গবেষণার খাতে। আর প্রায় ৮২ শতাংশ বরাদ্দ থাকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন খাতে। কিন্তু ডাকসু কার্যকর থাকলে এই অন্যায্যতা সম্ভব হতো না।
মেহেদী আক্তার সুজন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় প্রতি ছাত্রের কাছে ১২০ টাকা ডাকসু নির্বাচনের জন্য নেওয়া হয়। ২৭ বছর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে যে টাকাগুলো নেওয়া হচ্ছে। তা কোথায় গেছে। নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন বার বার ব্যর্থ। তবে যেহেতু আলোচনা শুরু হয়েছে আমার মনে হয় তাড়াতাড়ি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা দরকার।
আরিফ নামের শিক্ষার্থী জানান, এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার কোন মাথা নেই। ডাকসু নির্বাচনে মাধ্যমে ছাত্রদের পক্ষ কথা বলার লোক তৈরি হবে। তবে ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক দলের সহঅবস্থান নিশ্চিত করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা দরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে সুষ্ঠু একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। যেখানে সব দলের প্রতিনিধিদের ক্যাম্পাসে অবস্থা নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজিত হবে। নব্বই-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ তিন দফা ক্ষমতায় থাকলেও ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের আগ্রহ দৃশ্যমান হয়নি। অবশেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি কিছুটা হলেও সক্রিয় হয়েছে ।
এবিষয় জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, দীর্ঘ দিন পর আলোচনা সুযোগ তৈরি হয়েছে হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ কিন্তু আগামী একাদশ নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। না হলে প্রভাব মুক্ত করা সম্ভব হবে না। এমনকি ডাকসু নির্বাচন বন্ধে যড়যন্ত্র হতে পারে।
এবিষয় জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, `অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আদালতের রায়ের পর এ বিষয়ে একটি সভা করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। একাজে আদালতকে রায় দিতে হবে কেন? যারা এত বছর ছাত্রদের অধিকার বঞ্চিত করেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।
ডাকসুর সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক নাসির-উদ-দুজা বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে ক্যাম্পাসে অবস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবিষয় বলেন, ক্যাম্পাস সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। আমরাও চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে প্রশাসনকে একটু সর্তক হতে হবে।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, ক্যাম্পাসে যখন ছাত্রসংগঠনগুলোর সহঅবস্থান নিশ্চিত থাকবে। হলেগুলো ছাত্রসংগঠনগুলো সহঅবস্থান নিশ্চিত থাকবে তখন ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলে আমরা মনে করি। তবে এই পবিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এটা নিয়ে সংশয় আছে।
এবিষয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ক্যাম্পাসে এবং হলোগুলোতে ক্ষমতাশীনদের কর্তৃত্ব জারি রেখে। ক্যাম্পাসে সকল সংগঠনগুলো সহঅবস্থান নিশ্চিত না করে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে গুনগত কোন পরিবর্তন আসবে বলে। অনেকবার ডাকসু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নির্বাচন হবে কিনা এটা নিয়েও সংশয় আছে।
এবিষয় জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন বলেন, আগামী নভেম্বরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এর ব্যবস্থা না ডাকসু নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি এই নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে ডাকসু নির্বাচন আটকে দিতে পারে।
এবিষয় জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আখতারুজ্জামান বলেন, আগামী মার্চ ডাকসু নির্বাচন হবে। এমন চিন্তা মাথার রেখে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আশা করি আগামী অক্টোবরের মধ্যে প্রথম ভোটার তালিকা তৈরির কাজ করবো। হলগুলোতে সহ অবস্থান নিশ্চিতের জন্য কাজ চলছে। এছাড়া মুধুর ক্যান্টিন রাজনীতি সবার জন্য উম্মক্ত রয়েছে।
টিআর/ এসএইচ/