ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০১:২৫ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:০৭ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

চলতি এশিয়া কাপে খাতা কলমে সেমিফাইনাল বলে কিছু না থাকলেও বুধবারের ম্যাচ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জন্য সেমিফাইনালের থেকে কম কিছু ছিল না। অলিখিত সেই সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে ৩৮ রানে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করলো বাংলাদেশ।

বুধবার আবুধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হিসাবটা ছিলো বাঁচা আর মরার। যেই জিতবে সেই যাবে এশিয়া কাপ-২০১৮ এর ফাইনালে। নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুটা ভালো না হলেও শেষ পর্যন্ত মিডল অর্ডারের ব্যাটিং এবং বোলার ও ফিল্ডারদের অনবদ্য পারফরম্যান্সে ফাইনালে জায়গা করে নিলো টাইগাররা।

ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু এবারের টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচের মতোই দলকে হতাশ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ইনজুরির কারণে সাকিবহীন দলে মাত্র ১২ রান তুলতেই একে একে সাজঘরে ফেরেন তিন ব্যাটসম্যান লিটন দাস (৬), সৌম্য সরকার (০) এবং মমিনুল হক (৫)। তবে আসরের শুরুতে শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচের মতো খাঁদের কিনারা থেকে দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন।

মাত্র ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত মুশফিক আর ৮৪ বলে মূল্যবান ৬০ রান করা মিঠুন গড়ে তোলেন ১৪৪ রানের বড় ও সময়োপযোগী জুটি। তবে মিঠুন আর মুশফিকের পর উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আর কোন ব্যাটসম্যানই। গত ম্যাচের ‘ত্রাতা’ ইমরুল কায়েস সাজঘরে ফেরেন মাত্র ৯ রানে। এরপর মাহমুদুল্লাহ ৩১ বলে ২৫ রান করলেও টাইগারদের ইনিংস থেমে যায় ৭ বল বাকি থাকতেই। সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩৯ রান।

ক্যাপসনঃ ম্যাচের প্রথম ইনিংসের পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এমন উল্লাস শেষে এসে হতাশায় পরিণত হয়।  

২৪০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা পাকিস্তানের জন্য বেশ সহজই হতে পারতো ম্যাচের ধরণ। কিন্তু বাংলাদেশের মতোই পাকিস্তানকেও হতাশ করে টপ অর্ডার। ১৮ রান তুলতেই মোস্তাফিজুর আর মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ফাখার জামান (১), বাবর আজম (১) এবং অধিনায়ক সরফরাজ আহমদকে (১০)। তবে একপাশ আগলে রেখে ঠিকই বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন ওপেনার ইমাম উল হক।

ক্যাপসনঃ ইমামকে আউট করার পর মাহমুদুল্লাহ উল্লাস। 

১০৫ বলে ৮৩ রান করা ইমাম যখন দলীয় ১৬৭ রানে আউট হলেন তখন যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশ। মুলত তখনই নির্ধারিত হয় পাকিস্তানের ভাগ্য। শেষটুকু ছিলো শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।

এর আগে অবশ্য দুই সেট ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক (৫১ বলে ৩০) আর আসিফ আলিকে (৪৭ বলে ৩১) তুলে নেন যথাক্রমে রুবেল হোসেন এবং মেহেদী।

ক্যাপসনঃ আড়াই মিটার দূরে ঝাপিয়ে পরে দুর্দান্ত এক ক্যাচে শোয়েব মালিককে আউটের পর মাশরাফির উদযাপন।  

পুরো ম্যাচে বরাবরের মতো প্রসংসিত হয়েছে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির অধিনায়কত্ব। তবে ফিল্ডিং সমস্যায় ভোগা বাংলাদেশকে আজ দেখা গেছে অন্য রূপে। উইকেটের পিছনে দাঁড়ানো লিটস দাসের দুইট সহজ ক্যাচ বাদ দিলে মাঠে ফিল্ডারদের পারফরম্যান্স মন জয় করেছে সবার। বিশেষ করে মাত্র ০.৮৬ সেকেন্ড রিফ্লেক্সে শোয়েব মালিকের মাশরাফির ক্যাচ ধরা, ০.১৬ রিফ্লেক্সে আসিফ আলিকে স্ট্যাম্পিং করা বারবার আলোচনায় ছিলো ধারাভাষ্যকারদের। এছাড়াও শেষ দশ ওভারের পাওয়ার প্লেতে পার্টটাইম বোলার মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য সরকারকে দিয়ে করানো স্পেলে নিজেদের আক্রমণাত্মক ও সাহসী অধিনায়কত্বের আবারও পরিচয় দেন মাশরাফি।

আর ১১৬ বলে ৯৯ রান করা মুশফিকুর রহিম নির্বাচিত হন ম্যাচসেরা।

আগামী শুক্রবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২৩৯ (লিটন ৬, শান্ত ০, মুমিনুল ৫, মুশফিক ৯৯, মিঠুন ৬০ ইমরুল ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মিরাজ ১২, মাশরাফি ১৩, রুবেল ১, মুস্তাফিজ ১*; জুনাইদ ৪/১৯, আফ্রিদি ২/৪৭, হাসান ২/৬০, নওয়াজ ০/৩৯, মালিক ০/১৪, শাদাব ১/৫২)।

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২০২ (ফখর ১, ইমাম ৮৩, বাবর ১, সরফরাজ ১০, মালিক ৩০, শাদাব ৪, আসিফ ৩১, নওয়াজ ৮, হাসান ৮, ; মিরাজ ২/২৮, মুস্তাফিজ ৪/৪৩, মাশরাফি ০/৩৩, রুবেল ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ১/৩৮, সৌম্য ১/১৯)।

ফল: বাংলাদেশ ৩৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম

//এস এইচ এস//